জীবনী

ইমামুত তরিকত খাজা সৈয়দ বাহাউদ্দীন নকশবন্দী বুখারী (রাহ.)’র জীবন কথা

জন্ম ও বাল্য জীবন

খাজায়ে খাজেগান হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ বাহাউদ্দীন নকশবন্দী বুখারী (রাহ.) বুখারা শহরের নিকটবর্তী “কছরে আরেফান” নামক স্থানে ৪’ঠা মুহাররাম ৭১৮ হিজরীতে জন্ম গ্রহন করেন।

জন্মের তৃতীয় দিনে তার সম্মানীত পিতামহ তাকে নিয়ে হযরত “বাবা সাম্মাসী”(কুদ্দাসা সিররুহুল আজাজী) এর দরবারে গেলেন। তিনি তাকে সন্তান হিসেবে কবুল করলেন এবং তার খলীফা হযরত আমীর কুলাল থেকে নবজাতক শিশু বাহাউদ্দীনকে লালন পালনের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি নিলেন। বাল্যকাল থেকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের নির্দেশ স্বরূপ হিদায়াত ও কারামত এর জ্যোতি তার ললাট হতে প্রকাশিত হয়। তার আম্মাজানের বর্ণনা মতে, আমার একটি গর্ভধারীনি গাভী ছিল। আমার ছেলে বাহা উদ্দিনের বয়স যখন চার বছর একমাস তখন একদা গাভীটার দিকে লক্ষ্য করে বললেন যে, এই গাভী থেকে সাদা ললাট বিশিষ্ঠ বাচ্চা হবে। সত্যিই কয়েক মাস যেতেই সেইরূপ বাচ্চা হল। কি অপূর্ব বিরল ঘটনা। তিনি বার বছর বয়সে প্রখ্যাত অলীয়ে কামিল শেখ খলীলের (রাহ.) সান্নিধ্য লাভ করে ধন্য হন।

সাধনা ও জীবনযাপন

তিনি নিতান্ত গরীব ছিলেন এবং নিঃস্ব অবস্থায় জীবন যাপনের প্রতি মুরীদানদেরকে তাগিদ দিতেন। তিনি সর্বদা হালাল জীবিকা গ্রহণ করতেন আর সন্দেহযুক্ত খাদ্য দ্রব্যাদি বর্জন করতেন। তিনি সর্বদা মজলিসে নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফটি বর্ণনা করতেন- قال النبى الامين عليه وسلم “اتدن العبادة عشرة اجزاء تسعة طلب الحلال وجزء واحد منها سائر العبادات ” নিশ্চয় ইবাদতের মধ্যে দশটি শাখা রয়েছে। তৎমধ্যে নয়টি হলো হালাল সন্ধান (বৈধ উপার্জন) আর অন্য একটিতে অবশিষ্ঠ ইবাদত সমূহ।” যদি কোন লোক তার নিকট হাদিয়া বা উপঢৌকন নিয়ে উপস্থিত হতেন; তিনি এর চেয়ে দ্বিগুন মেহমানদারী করতেন। যখনই তার দরবারে কোন অতিথি আসতেন এবং সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসত, আর খাবারের ঘাটভির আশংকা হত, তখন মেহমানের খানা আলাদা করে অন্য জায়গায় রেখে দিতেন। আর পরিবারের সকল সদস্যরা না খেয়ে বা অর্ধাহারে রাত্রিযাপন করতেন। একদা তার দরবারে এক ব্যক্তি কিছু খাবার নিয়ে উপস্থিত হওয়া মাত্রই তিনি বল উঠলেন, আমি তা ভক্ষন করবো না কেননা রান্না করার সময় রান্নাকারিনী রাগান্বিত অবস্থায় ছিল। তিনি আরও বলেন যে, অলসতা ও রাগান্বিত অবস্থায় কোন কাজ করলে তাতে বরকত থাকে না। কেননা আল্লাহ পাক তাতে রাজী থাকেন না। আর তিনি সুলতান ও শাসক গোষ্ঠী নজরানা বা উপঢৌকন গ্রহন করতেন না। তিনি ইবাদাত করার ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষা করতেন। তিনি দুইবার হজ্ব পালন করেন। তাঁর অসংখ্য কারামাজের মধ্যে ক’টি নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

প্রথমতঃ হযরত বাহাউদ্দীন নকশবন্দী (রাহ.) এর নিকট এক দরবেশ একদা বললেন, আমার পঁচিশটি দিনার হারিয়েছে। তখন হযরত খাজা বাহাউদ্দীন (রাহ.) বললেন, ঐদিন সে ঘরে অবস্থানকারীনী দাসীই নিয়েছে। দরবেশ দ্রুত গতিতে ঘরে গিয়ে তা দাসীকে বের করে দিতে বললেন, সে বলে আমি অমুক জমিতে তা পুঁতে রেখেছি। বহু লোক আশ্চর্যন্বিত হয়ে এ ঘটনাটি প্রতক্ষ্য করার জন্য সমবেত হয়। সত্যিই জমি খননের পর তার কথা মত পাওয়া গেল।

দ্বিতীয়তঃ একদিন হযরত খাজা ছাহেব তাঁর এক শিষ্যকে কোন একটি কাজে পাঠালেন। তার আগে আগে খাজা ছাহেবর দরবেশ প্রধান আখি মুহাম্মদ দরাহি নী ও যাচ্ছিলেন। কিছুদূর যেতে না যেতেই তাঁর শিষ্য হঠাৎ মৃত্যুকুলে ঢলে পড়লেন। আখি মুহাম্মদ দরাহিনী তার অবস্থা দেখা মাত্রই কাল বিলম্ব না করে হজরত খাজা ছাহেবের নিকট ঘটনার বিবরণ পেশ করলেন। খাজা সাহেব ঐ মৃত শিষ্যের নিকট তশরীফ নিলেন এবং তার পবিত্র কদম (পা) মৃত্যু বরণকারী শিষ্যের বক্ষের উপর রাখার সাথে সাথেই সে নাড়াছাড়া করতে লাগল এবং হারানো জীবন ফিরে পেল। তারপর হজরত খাজা ছাহেব ইরশাদ করেন, আমি তার রূহ চতুর্থ আসমানে পেয়েছি এবং তা হতেই উহা ফিরিয়ে এনেছি।

তৃতীয়তঃ হজরত খাজা ছাহেব একদা পবিত্র হজ্বব্রত পালনের মানসে পবিত্র মক্কায় তশরীফ নেন। তার এক শিষ্যও সফর সঙ্গি হিসেবে ছিলেন। হাজী ছাহেবান যখন হজ্ব পালনের পর জিলহজ্বের দশম তারিখে মিনার কুরবানী করছেন, তখন খাজা ছাহেব বলে উঠলেন, আমার একমাত্র সন্তানকে আসি কুরবানী দিচ্ছি। ঠিক পবিত্র দশই জিলহজ্ব কুরবানীর দিন হুজুরের একমাত্র সন্তান উক্ত সময়ে ইন্তেকাল করেছেন। এতে এক মূহুর্তের কম বেশী হয়নি।

চতুর্থতঃ হযরত খাজা ছাহেব “গইয়ুত” নামক স্থানে ক্ষণিক সময়ের জন্য অবস্থান কালে এক দল লোক তার জন্য কিছু ডালিম ফল আনলেন। তাদের মধ্যে তার অন্যতম শিষ্য হজরত মুহাম্মদ জাহিদও ছিলেন। হুজুর সকল কে তা বন্টন করে দিয়ে বললেন যে, খাও। হযরত জাহিদ বললেন, হুজুর আমার ক্রীতদাসটি পলায়ন করেছে। তাই আমি খুবই চিন্তিত। তা শোনামাত্র হুজুর বলেন, কোথাও যেতে পারবেনা। তুমি আমার সাথে দুদিন, দুরাত এখানে অবস্থান কর। তৃতীয় দিন তুমি “জিওয়ারাতুন” নামক স্থান দিয়ে বাড়ীতে যাবার পথে গোলামের সন্ধান পাবে। হজরত জাহিদ তৃতীয় দিন যখন বাড়ীতে পৌঁছলেন ঠিক সে সময় তিনি দেখতে পান যে,গোলাম ঘরে প্রবেশ করছে। সকলেই আশ্চার্যন্বিত হয়ে গোলামের অবস্থা জানতে চাইলে সে বলল, আমি বুখারা হতে বের হয়ে “নচফের” দিকে যাত্রার ইচ্ছা পোষণ করলে, আমার পায়ে একটি শিকল অনুভূত হল, ফলে আমি পথ চলা হতে অক্ষম হয়ে পড়ি। আর ঘন্টার আওয়াজের ন্যায় এক প্রকট শব্দ শুনতে পেলাম, তাতে আমি মনে করেছিলাম যে, এ শব্দ বুখারা শহরকেও বিদীর্ণ করছে। আর যখন আমি “জিওয়ারাতুন” এর দিকে যেতে ইচ্ছা করি তখন শিকল খুলে যায় এবং ঘন্টার শব্দ ও বন্ধ হয়ে যায়। আমি তিনদিন পর্যন্ত এ অবস্থায় অবস্থান করেছি। আমি বুঝতে পারলাম যে, এটি খোদায়ী শক্তি ও তারই মাকবুল অলির নজর বন্দীতে আটকে পড়েছি। এটি আমার চলার পথে অন্তরায়ের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। অতঃপর আমি পুণরায় ফিরে আসলাম। এতটুকু বলে সে হুজুরের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়।

পঞ্চমতঃ একদা এক ব্যক্তি হজরত খাজা ছাহেব এর জন্য কিছু আপেল নিয়ে উপস্থিত হলে তিনি বলে উঠলেন যে, থাম থাম। ঐ ফল এখন ভক্ষণ করো না। কেননা উহা তাসবীহ পাঠ করছে। উপস্থিত শিষ্যদের মধ্যে অনেকে তাসবীহ পাঠের আওয়াজ সুস্পষ্ট ভাবে শুনতে পেয়েছেন। কি অপূর্ব বিরল ঘটনা।

ইন্তেকাল

হযরত খাজা আলা উদ্দীন আত্তারের বর্ণনা মতে, তিনি ইন্তিকালের সময় পবিত্র কালামের সুরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করছিলেন। সুরার অর্ধেক পাঠের পর তার পবিত্র চেহারা জ্যোতিময় হতে থাকে। পুরোপুরি তিয়াত্তর বৎসর বয়সে ৭৯১ হিজরীর ৩রা রবিউল আউয়ালের সোমবার দিবাগত রাত্রে তিনি নেদায়ে ইলাহীর আহবানে সাড়া দিয়ে ইহকাল ত্যাগ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহী রাজেউন)। “কছরে আরেফায়” তার মাজার শরীফ বিদ্যমান।

শানে খাজা সৈয়্যদ বাহাউদ্দীন নকশবন্দী বুখারী (রাহ.) ইমাম শেরে বাংলা (রহ.)-

মারহাবা সদ- মারহাবা সদ- মারহাবা সদ- মারহাবা

বাহরে খা-জাহ্ নকশবন্দী আঁ বাহাউদ্দীনে মা

দর তরি-কৃত উ- ইমামে সালেস আ-মদ বে-গুমা বর তরীকুশ নকশবন্দী-সদ হাযা-রাঁ মরদুমাঁ

তুরবাতাশ রা-বা-গে জান্নাত সা-য আয়ে রাব্বে জাহাঁ ইস্তাজিব এয়া রব ত্বোফায়লে সরওয়ারে পায়গাম্বরী