জীবনী

ইমাম বুখারি (রাদ্বিঃ) এর জীবনী

লেখক: আহমদ শাহ আদীল

ভূমিকা:

জ্ঞানের এক উজ্জ্বল প্রদীপের নাম ইমাম বুখারী (রাদ্বিঃ)। বিশেষত ইলমে হাদিস শাস্ত্রে তিনি সম্রাট হিসেবে অবস্থান করছেন। তাঁর বিখ্যাত হাদিস সংকলন গ্রন্থ ‘সহীহুল বুখারী’। যা দ্বীনি বিষয়ে পবিত্র কুরআনুল কারীমের পর অধিক বিশ্বাসযোগ্য গ্রন্থ হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

নাম, জন্ম ও বংশ পরিচয়:

নাম- মুহাম্মদ, উপনাম- আবু আব্দুল্লাহ, উপাধি- আমীরুল মোমেনীন ফীল হাদিস, নাসেরুল আহাদিসিন নাবাবীয়্যাহ্‌ ও নাশেরুল মাওয়ারিছিল মুহাম্মদিয়াহ্‌। পুরো নাম- আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল ইবনে ইব্রাহিম ইবনে মুগীরা ইবনে বরদিযবাহ জু’ফী আল বুখারি (রাদ্বিঃ)। ইমাম বুখারী ১৯৪ হিজরীর ১৩ই শাওআল জুমু’আর দিন সালাতের কিছু পরে বুখারায় জন্ম গ্রহণ করেন।বংশতালিকা মুহাম্মদ বিন ইসমাইল বিন ইব্রাহীম বিন মুগীরাহ বিন বরদিযবাহ। ‘বরদিযবাহ’ পারসিক বংশীয় জনৈক অগ্নিপুজক এর পুত্র। ‘মুগীরা’ বোখারার শাসনকর্তা ইয়ামান জু’ফীর হাতে ইসলাম গ্রহন করেন। ইমাম বুখারী (রহঃ) এর পিতা ছিলেন ইমাম মালেক (রাদ্বিঃ) এর একজন প্রিয় শিষ্য।

ইমাম বুখারি (রাদ্বিঃ) এর বাল্যকাল ও জ্ঞান অর্জন :

অল্প বয়সেই তিনি পিতা হারা হন। পিতার মৃত্যুর পর মাতার তত্বাবধানে তিনি প্রতিপালিত হন। তাঁর জীবনীতে পাওয়া যায়, তিনি ছোট থাকতেই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এতে তাঁর মাতা আল্লাহর কাছে খুব ক্রন্দন করলেন এবং স্বীয় সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফেরত দেয়ার জন্য তাঁর কাছে অবিরাম দোয়া করে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ এক দিন তাঁর মা স্বপ্নে দেখলেন যে আল্লাহর নবী ইবরাহীম (আঃ) তাঁকে লক্ষ্য করে বলছেনঃ ওহে! তোমার সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফেরত চেয়ে আল্লাহর দরবারে তোমার ক্রন্দনের কারণে তিনি তোমার সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তখন তিনি প্রকৃত ঘটনা যাচাই করার জন্য স্বীয় সন্তানের কাছে গিয়ে দেখেন সত্যিই তাঁর সন্তান সম্পূর্ণ দৃষ্টি শক্তি ফেরত পেয়েছে। দশ বছর বয়সে উপনীত হলে তিনি জ্ঞান চর্চার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। অল্প বয়সেই তিনি পবিত্র কুরআন মুখস্ত করেন। শৈশব কালে মক্তবে লেখাপড়া করার সময়ই আল্লাহ্ তাঁর অন্তরে হাদিস মুখস্ত ও তা সংরক্ষণ করার প্রতি আগ্রহ ও ভালবাসা সৃষ্টি করে দেন। মাত্র ১৬ বৎসর বয়সেই তিনি হযরত ওয়াকী বিন জাররাহ্‌ (রঃ) ও ইবনে মোবারক (রহঃ) এর হাদিস সঙ্কলন মুখস্ত করেন। তিনি মাতার সঙ্গে হজ্জে গমন করেন। হিজাজে তিনি জ্ঞানার্জন করেন । সেখানে (হেজাজে) ছয় বৎসর অতিবাহিত করে দেশে ফিরেন। অতঃপর তিনি হাদিস শিক্ষা গ্রহন করার জন্য কুফা, বসরা, বাগদাদ, মিশর ও সিরিয়া প্রভৃতিদেশ ভ্রমন করেন।

পাঠদান:

ইমাম বুখারী (রাদ্বিঃ) আঠার বছর বয়সে পূর্ণাঙ্গ মুহাদ্দিস রূপে সমগ্র বিশ্বে প্রসিদ্ধ লাভ করেন। বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হাদিস সংগ্রহের জন্য তাঁর নিকট মুহাদ্দিসগণ আসতে লাগলেন। তাঁর জীবনের প্রথমাংশে সর্বসাধারণের সুবিধার্থে মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফের কাচারী ঘরে পাঠদান করতেন। এরপর যেখানেই গিয়েছিলেন তিনি সেখানেই পাঠদানের সংবাদ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তাে। তিনি নিশাপুর গিয়ে পাঠদানে মশগুল হলে সেখানকার প্রসিদ্ধ ওলামাগণ তাঁর খিদমতে উপস্থিত হয়ে শিক্ষালাভ করতেন। বিশেষ করে ইমাম মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ (র.) প্রতিদিন উপস্থিত হয়ে জ্ঞান অন্বেষণ করতেন।

কৃতিত্ব:

ইমাম বুখারি (রাদ্বিঃ)-র প্রায় ৩ লক্ষ হাদিস সনদ সহ মুখস্ত ছিল। ৬ লক্ষ হাদিস হতে তিনি তাঁর আল্ জামি আস সহীহ গ্রন্থ সঙ্কলন করেন। ইহাতে তিনি ৭২৭৫ টি হাদিস লিপিবদ্ধ করেন। প্রতিটি হাদীস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করার পূর্বে তিনি গোসল ও ওযু করিয়া দুই রাক’আত নফল সালাত আদায় করিতেন। সহীহ বুখারী সর্বাপেক্ষা বিশ্বস্ত হাদীস গ্রন্থরূপে স্বীকৃত।

ইবাদত ও রিয়াযত:

ইমাম বুখারী (রাদ্বিঃ) প্রচুর ইবাদত করতেন এবং বিনিদ্রাযাপন করতেন। অধিক পরিমাণে নফল নামায পড়তেন ও নফল রােযা রাখতেন। রমযান মাসে প্রতিদিন একবার কুরআন শরীফ খতম করতেন আর অর্ধরাতে উঠে দশপারা কুরআন তিলাওয়াত করতেন। তারাবীহ’র মাধ্যমে কুরআন খতম করতেন এবং প্রতি রাকাতে বিশ আয়াত করে পাঠ করতেন। আবু বকর ইবনে মুনীর বলেন, একদা ইমাম বুখারী নামায পড়ছিলেন। নামায শেষে তিনি জামার আঁচল উঠালেন এবং এক শিষ্যকে বললেন, ‘একটু দেখতাে আমার জামার নিচে কি রয়েছে’? শিষ্য দেখল যে, জামার নিচে একটি বিষাক্ত পােকা (সেটি ছিল ভিমরূল কিংবা বিচ্ছু) যেটি তাঁর শরীরে পনের ষোল স্থানে ধংশন করেছে, যার ফলে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলে গিয়েছিল। ইবনে মুনীর জিজ্ঞাসা করলেন, আপনাকে যখন বিষাক্ত পােকা প্রথমবার ধংশন করছিল, তখন কেন নামায ভঙ্গ করে দেন নি? তিনি উত্তর দিলেন, কুরআনুল কারীমের যে আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করছিলাম, তাতে এতই স্বাদ পাচ্ছিলাম যে, তখন ওই ব্যাথা-কষ্টের দিকে খেয়ালই করতে পারিনি।

দানশীলতা:

ইমাম বুখারী (রাদ্বিঃ) যত না সম্পদের দিক দিয়ে ধনী ছিলেন তার চেয়ে অন্তরের দিক দিয়ে ধনী ও অমুখাপেক্ষী ছিলেন। কোন কোন দিন তিনি তিনশ তিনশ দিরহাম সাদকা করতেন। ওয়াররাক বলেন, ইমাম বুখারী (রাদ্বিঃ)’র মাসিক আমদানী ছিল পাঁচশত দিরহাম, আর তিনি এসবটুকু ছাত্রদের জন্য ব্যয় করে ফেলতেন।

সাধনা ও ত্যাগ:

ইমাম বুখারী (রাদ্বিঃ) পার্থিব আরাম-আয়েশ ও ভােগ-বিলাসের জীবন-যাপন করা থেকে বহু দূরে থাকতেন। জ্ঞানার্জনের সময় অনেক সময় শুকনাে ঘাস খেয়ে দিন কাটিয়ে দিতেন। পুরাে দিনে মাত্র দুই তিনটি বাদাম খেতেন। একদা অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তার বলল, সালন বিহীন শুকনাে রুটি খাওয়ার কারণে তাঁর পেটের আতুড়ী শুকিয়ে গেছে। তখন ইমাম বুখারী (রাদ্বিঃ) বললেন, আমি চল্লিশ বছর যাবৎ শুকনাে রুটি খেয়ে আসছি আর এই দীর্ঘ সময়ে সালনে হাত দেইনি।

ধৈয্য ও সহনশীলতা:

ইমাম বুখারী (রাদ্বিঃ) অসীম ধৈয্যশীল এবং কৃতজ্ঞপরায়ন ছিলেন। নিজের বেলায় কোন প্রতিশােধ গ্রহণ করতেন না। তাঁর উস্তাদ মুহাম্মদ ইবনে ইয়াহিয়া যুহুলী নিশাপুরে কুরআনে কারীমের শব্দকে গায়রে মাখলুক না বলার কারণে ইমাম বুখারী’র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন এবং ইমাম বুখারী’র পাঠ্য মজলিসে বসতে ছাত্রদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন।আর ঘােষণা করে দিলেন যে, ইমাম বুখারী এ শহরে থাকতে পারবে না। এ কারণে তিনি নিশাপুর ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এ আচরণে ইমাম মুসলিম র, তাঁর উস্তাদ যুহুলীর প্রতি এত বেশী ক্ষেপে গেলেন যে, যুহুলী থেকে যেসব হাদিস ইমাম মুসলিম লিখেছিলেন সবগুলোকে বস্তা ভরে উটের পিঠে করে যুহুলীর নিকট পাঠিয়ে দিয়েছিলেন এবং যুহুলী থেকে হাদিস বর্ণনা ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু বুখারী যুহুলীর হাদিস ত্যাগ করেন নি এবং সহীহ বুখারীতে যুহুলী থেকে সংগৃহীত হাদিস বহাল রেখেছেন। তবে যুহুলীর পুরাে নাম উল্লেখের পরিবর্তে কেবল মুহাম্মদ লিখতেন কিংবা তাঁর দাদা মুহাম্মদ ইবনে খালিদের প্রতি সম্পর্কিত করে উল্লেখ করতেন। কেউ এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, যুহুলী আমার সমালােচনা করে। যদি আমি তাঁর নাম স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করি তখন নির্দিষ্ট হয়ে যাবেন আর লােকেরা মনে করবে আমি আমার সমালােচকের সমালােচনা করছি, এতে আমার বিশ্বস্ততায় এবং ন্যায়পরায়নতায় দাগ আসবে যা আমার হাদিস বর্ণনার উপর প্রভাব ফেলবে।

হাদিস সংগ্রহে সতর্কতা অবলম্বন:

বিশুদ্ধ হাদিস সংগ্রহের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসীনে কিরামের অপরিসীম কষ্ট ও ত্যাগ অবর্ণনীয়। তাঁরা এক একটি হাদিস সংগ্রহের জন্য মাস ব্যাপি পর্যন্ত সফর করতেন, যাতায়াতের সীমাহীন কষ্ট সহ্য করতেন, পানাহার ত্যাগ করতেন। তাঁদের অনেকের পেশাবের পরিবর্তে রক্ত বের হতাে। তৎকালে যানবাহনের কোন সুবিধা ছিলনা। বরং পায়ে হেঁটে, উটে, গাধায় বা ঘােড়ায় চড়ে পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা পার হয়ে পথিমধ্যে ডাকাতদলের হাতে আক্রান্ত হয়ে বহু মেহনত করে হাদিস সংগ্রহের জন্য যাওয়া-আসা করতে হতাে। হাদিস সংগ্রহের প্রচণ্ড আগ্রহ ও আনন্দের সামনে এতসব দু:খ-কষ্ট ম্লান হয়ে যেতাে। একটা হাদিস সংগ্রহ করতে পারলেই তাদের সমস্ত ক্লান্তি নিমীষে দূরীভূত হয় যেতাে। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও অত্যধিক সতর্কতা অবলম্বনের কারণে আজ আমরা বিশুদ্ধ হাদিস সম্ভার পেয়েছি। ইতােপূর্বে কোন নবী-রাসূলের বাণীকে এভাবে বিশুদ্ধ পন্থায় সংরক্ষিত রাখার ইতিহাস বিশ্বে আর নেই। বিশেষ করে বুখারী শরীফ আসমানের নিচে যমীনের উপরে পবিত্র কুরআনে কারীমের পর বিশুদ্ধতম গ্রন্থ হিসাবে স্বীকৃত লাভ করার কারণ হলাে ইমাম বুখারি (রাদ্বিঃ) হাদিস সংগ্রহ ও সংকলনের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছিলেন। তিনি অনেক যাচাই-বাছাই করে মুহাদ্দিসগণ থেকে হাদিস গ্রহণ করতেন।

মাযহাব:

ইমাম বুখারীর ফিকহী মাযহাব সম্পর্কে তাঁর কোন সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি, তবে সহীহ বুখারীতে তিনি এমন বহু হাদিস বর্ণনা করেছেন যা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, তিনি শাফেঈ মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। হয়তাে এ কারণেই প্রসিদ্ধ ওলামাগণ তাঁকে শাফেঈ মাযহাব অবলম্বনকারী বলে আখ্যা দিয়েছেন। তবে তিনি শুধু মুকাল্লিদ ছিলেন না বরং মুজতাহিদ ফিল মাসাঈল ছিলেন এবং ফুকাহাগণের মধ্যে তিনি তৃতীয় স্তরের ফকীহ ছিলেন। তিনি কোন কোন মাসয়ালায় ইমাম শাফেঈ (রাদ্বিঃ)’র বিপরীতও করেছেন এবং ঐসব মাসয়ালায় তিনি স্বয়ং নিজেই ইজতিহাদ করতেন। এ কারণেই জ্ঞানীদের নিকট শাফেঈদের মধ্যে ইমাম বুখারী’র দৃষ্টান্ত হলাে হানাফীদের মধ্যে ইমাম আবু জাফর তাহাভী (রহ:)’র ন্যায়।

ইমাম বুখারি (রাদ্বিঃ) এর প্রসিদ্ধ উস্তাদ ও ছাত্র:

ইমাম বুখারি (রাদ্বিঃ) এর স্বনামধন্য উস্তাদ বা শায়খগনের মধ্যে মক্কী বিন ইব্রাহীম, আহমদ বিন হাম্বল, আব্দুল্লাহ বিন মুছা, ঈসা আবু আসেম, আলী ইবনুল মদিনী, ইশাক বিন রাহওয়াইহ, ইয়াহিয়া বিন মুঈন, আবু বকর বিন আবি শায়বা, ওসমান বিন আবি শায়বা ও ইমাম হুমায়দী প্রমুখগনের নাম সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য।এবং প্রায় এক লক্ষ লোক ইমাম বুখারীর নিকট হাদিসের শিক্ষা গ্রহন করেন। তাঁর শিষ্যগনের মধ্যে ইমাম মুসলিম, ইবনে খোযায়মা, ইমাম তিরমিযী, ইমাম নাসাঈ, আবু হাতিম, ইমাম যুর’আ ও ফরবরী প্রমুখ অধিক প্রসিদ্ধ।

ইমাম বুখারি (রাদ্বিঃ) রচনাবলী:

১) সহীহুল বুখারি। যার পূর্ণ নাম আল জামিউল মুসনাদুস সহীহুল মুখতাসারু মিন উমূরি রাসূলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহী ওয়া আয়্যামিহী। ২) আল আদাবুল মুফরাদ ৩)তারীখুল কাবীর। এতে তিনি হাদিসের রাবিদের জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। ৪) তারীখুস সাগীর। এতে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীসহ বেশ কিছু রাবির জীবনী উল্লেখ করেছেন। ৫) খালকু আফআলিল ইবাদ। এতে তিনি মুতাজেলাদের একটি ভ্রান্ত মতবাদের প্রতিবাদ করেছেন। ৬) রাফউল ইয়াদাইন ফিস্ সালাত ৭) জুযউল কিরাআত খালফাল ইমাম ৮) কিতাবুয যুআ-ফাউস সাগীর ৯) কিতাবুল কুনা (মুহাদ্দিছদের উপনাম সম্পর্কে) ১০) আত্ তাওয়ারীখ ওয়াল আনসাব ১১) কিতাবুত তাওহীদ ১২) আখবারুস সিফাত ১৩) কিতাবুল বিজদান ১৪)আসাসুস সাহাবা ১৫) কিতাবুল ইলাল। এ ছাড়াও আরও তাঁর অনেক গ্রন্থ রয়েছে গেছে।

ইমাম বুখারি সম্পর্কে আলেমদের কিছু অভিমত :

১) ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল (রাঃ) বলেনঃ খোরাসানের যমীনে ইমাম বুখারির অনুরূপ আর কেউ জন্ম গ্রহণ করে নি। ২) ইমাম আবু নুআইম আহমাদ বিন হাম্মাদ (রঃ) বলেনঃ ইমাম বুখারি হচ্ছেন এই উম্মতের ফকীহ। ইয়াকুব বিন ইবরাহীমও অনুরূপ বলেছেন। ৩) কুতাইবা বলেনঃ পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম হতে আমার নিকট অনেক লোক এসেছে। কিন্তু মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল বুখারি যতবার এসেছে আর কেউ এত বেশীবার আগমণ করে নি। ৪) কোন কোন বিদ্যান ফিকহ ও হাদিস শাস্ত্রে ইমাম বুখারিকে আহমাদ বিন হাম্বাল এবং ইসহাক বিন রাহওয়াইয়ের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। ৫) ইমাম আবু হাতিম রাযী বলেনঃ যে সমস্ত মুহাদ্দিছ বাগদাদে আগমণ করেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক জ্ঞানী হলেন ইমাম বুখারি। ৬) ইমাম তিরমীযি (রাঃ) বলেনঃ হাদিসের ইল্লত, ইতহাস এবং সনদ সম্পর্কে বুখারির চেয়ে অধিক জ্ঞানী ইরাক এবং খোরাসানের যমীনে আর কাউকে দেখি নি। ৭) ইমাম ফাল্লাস (রঃ) বলেনঃ যে হাদিস সম্পর্কে ইমাম বুখারি জানেন না, সেটি হাদিস নয়। ৮) ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী (রঃ) বলেনঃ ইমাম বুখারির সমকক্ষ আর কেউ ছিল না। ৯) মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন নুমাইর ও আবু বকর ইবনে আবী শায়বা বলেনঃ তাঁর মত আর কাউকে দেখি নি। ১০) আলী বিন হাজার বলেনঃ তাঁর মত আর কেউ আছে বলে আমার জানা নেই।

তিরোধান:

সমরকন্দের খরতঙ্গ জনপদেই ৬২ বছর বয়সে হিজরী ২৫৬ সালের ঈদুল ফিতরের রাত্রিতে তিনি ইন্তেকাল করেন। ঈদের দিন যোহরের নামাযের পর তাঁর জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর জীবনীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দাফন করার পর তাঁর কবর থেকে মিসকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুঘ্রাণ বের হতে থাকে। বেশ কিছু দিন এই অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। লোকেরা তাঁর কবর থেকে মাটি নেওয়া শুরু করে দেয়। এহেন অবস্থা দেখে প্রাচীর দিয়ে মজবুতভাবে তাঁর কবরকে ঢেকে দেয়া হয়।

আল্লাহ্! আমাদের সিনায় এই মহান ব্যক্তির ফয়েজ ও বরকত দান করুক। আমীন।