হযরত সৈয়্যদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)

লেখকঃ আহমদ শাহ আদীল

হযরত সৈয়্যদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ); যাঁর তেলাওয়াত শুনে ক্রন্দন করতেন নবীজি মুহাম্মদ মোস্তাফা (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)

জন্ম:

নবীজি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এর হিজরতের ৩৭ বছর আগে পবিত্র নগরী মক্কায় জন্ম গ্রহণ করেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)।

নাম:                                                                       

নাম- আব্দুল্লাহ, পিতার নাম- মাসউদ, মাতার নাম- উম্মু আবদ, উপনাম আবু আব্দুর রহমান। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ফক্বীহ এবং উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন পবিত্র কুরআনের শিক্ষাদাতা ছিলেন। হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রেও তাঁর সমান সুখ্যাতি আছে।

নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে ইবনে মাসউদ (রাঃ)’র প্রথম সাক্ষাৎ :

ইবনে মাসউদ (রাঃ) তাঁর গোত্রে যে একজন নবীর আবির্ভাব ঘটেছে, সে সম্পর্কে নানা খবর প্রায় শুনতেন। তবে অল্প বয়স এবং বেশীরভাগ সময় মক্কার সমাজ জীবন থেকে দূর অবস্থানের কারণে সে সম্পর্কে তিনি গুরুত্ব দিতেন না । নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন সকালে উঠে উকবার ছাগলের পাল নিয়ে বের হয়ে যেতেন আর সন্ধ্যায় ফিরতেন ।

একদিন কিশোর ইবনে মাসউদ (রাঃ) দেখতে পেলেন, দু’জন বয়স্ক চেহারায় আত্মমর্যাদার ছাপ বিরাজমান, দূর থেকে তাঁর দিকেই এগিয়ে আসছেন । তাঁরা ছিলেন এত পরিশ্রান্ত ও পিপাসার্ত যে, তাঁদের ঠোঁট ও গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল । নিকটে এসে লোক দু’টি সালাম জানিয়ে বললেন,হে বৎস! এ ছাগলগুলি থেকে কিছু দুধ দুইয়ে আমাদেরকে দাও । আমরা পান করে পিপাসা নিবৃত্ত করি এবং আমাদের শুকনা গলা একটু ভিজিয়ে নেই ।

-তখন ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেনঃ এ আমার দ্বারা সম্ভব নয় । ছাগলগুলি তো আমার নয় । আমি তাদের মুখ মন্ডলে এক উৎফুল্লতার ছাপ ফুটে উঠলো। -তাদের একজন আবার বললেনঃ ‘তাহলে এমন একটি ছাগী আমাকে দাও যা এখনও পাঠার সংস্পর্শে আসেনি। ছেলেটি নিকটেই দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছোট্ট ছাগীর দিকে ইশারা করে দেখিয়ে দিলেন । লোকটি ধরে তার ওলান মলতে লাগলেন । অবাক বিস্ময়ে ছেলেটি এ দৃশ্য দেখে মনে মনে বললেনঃ কখনও পাঠার সংস্পর্শে আসেনি এমন ছোট ছাগী কি দুধ দেয়? কিন্তু কি আশ্চর্য! কিছুক্ষনের মধ্যেই ছাগীর ওলানটি ফুলে উঠে এবং প্রচুর পরিমাণ দুধ বের হতে থাকে । দ্বিতীয় লোকটি গর্তবিশিষ্ট পাথর উঠিয়ে নিয়ে বাঁটের নীচে ধরে তাতে দুধ ভর্তি করেন। তারপর তাঁরা উভয়ে পান করেন এবং ছেলেটিকেও তাদের সাথে পান করালেন।-ইবনে মাসউদ বলেনঃ আমি যা দেখেছিলাম তা সবই আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল । আমরা সবাই যখন পরিতৃপ্ত হলাম তখন সেই পুণ্যবান লোকটি ছাগীর ওলানটি লক্ষ্য করে বললেনঃ চুপসে যাও । আর অমনি সেটি পূর্বের ন্যায় চুপসে গেল । তারপর আমি সেই পুণ্যবান লোকটিকে অনুরোধ করলামঃ আপনি যে কথাগুলি উচ্চারণ করলেন, তা আমাকে শিখিয়ে দিন । বললেন, তুমি তো শিক্ষাপ্রাপ্ত বালক । ইসলামের সাথে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদের পরিচিতির এটাই হলো প্রথম কাহিনী । এ মহাপুণ্যবান ব্যক্তিটি আর কেউ নন, তিনি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আর তাঁর সঙ্গীটি ছিলেন হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)।

ইসলাম গ্রহণ:

হযরত সৈয়্যদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হযরত উমরের পূর্বে মতান্তরে ৬ষ্ঠ, ১৭ অথবা ৩৩তম মুসলিম ছিলেন।

নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এর খেদমতে ইবনে মাসউদ (রাঃ):

রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র বিছানার চাদর বিছানাে ও উঠানাে, মিস্ওয়াক ও জুতা মােবারক সংরক্ষণ করা এবং অযুর পানির ব্যবস্থা করা তাঁর দায়িত্বে ছিল। তাই তাঁর লকবও হয়ে যায় ‘সাহেবুল না’লাইন ওয়াল আছা’।

যুদ্ধে মহাবীর ইবনে মাসউদ (রাঃ):

তিনি বদর, ওহুদ, খন্দক, বায়আতে রেদওয়ানসহ ইসলামের অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু আবু জাহেলের মাথা কেটেছিলেন।

চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য:

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ নবীজি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরেই লালিত-পালিত হন। তাঁকে অনুসরণ করে জীবনাচার ও চারিত্রিক গুণাবলী অর্জন করেন। এ কারণেই নবীজি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-‘হেদায়াত প্রাপ্তি, আচার-আচরণ ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে তিনিই (আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ) হচ্ছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সবচেয়ে নিকটতম উত্তম ব্যক্তি।’

ইবনে মাসউদ (রা) এর প্রজ্ঞা:

তিনি নবীজি মুহাম্মদ মোস্তাফা সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিক্ষালয়ে শিক্ষা লাভ করেন। এ কারণেই সাহাবিদের মধ্যে যারা কুরআনের সবচেয়ে ভালো পাঠক, ভাব ও অর্থের সবচেয়ে বেশি বুঝদার এবং আল্লাহর আইন ও বিধি-বিধানের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞ, তিনি ছিলেন তাঁদেরই একজন।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) ইলম ও প্রজ্ঞা সম্পর্কে একটি ঘটনার বর্ণনা থেকে বুঝতে পারি তিনি কেমন জ্ঞানী ছিলেন। একবার হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কোন এক সফরে রাত্রিবেলা একটি অপরিচিত কাফিলার সাক্ষাত লাভ করেন । রাতের ঘোর অন্ধকারে কাফিলার কোন লোকজনকে দেখা যাচ্ছিল না। ঘটনাক্রমে সেই কাফিলায় আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদও ছিলেন; কিন্তু উমার (রাঃ) তা জানতেন না । উমার (রাঃ) একজন লোককে তাদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে বললেন, কাফিলা কোথা থেকে আসছে? অন্য কাফিলা থেকে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ জবাব দিলেন-আমীক উপত্যকা থেকে। কোথায় যাচ্ছে?-ইলাল বাইতিল আতীক-বাইতুল আতীকে (অর্থাৎ কাবা শরীফে)। জবাব শুনে উমার (রাঃ) বললেনঃ নিশ্চয় তাদের মধ্যে কোন আলিম ব্যক্তি আছেন। তিনি আবার জিজ্ঞেস করতে বললেন, কুরআনের শ্রেষ্ঠতম আয়াত কোনটি? -আল্লাহু লাইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম, লা তাখুজুহু ‍সিনাতুন ওয়ালা নাওম-সেই চিরন্তন চিরঞ্জীব সত্তা আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই । তন্দ্রাও তাকে স্পর্শ করেনা এবং নিদ্রাও তাঁকে পায় না।-সর্বাধিক ব্যাপক অর্থবোধক আয়াত কোনটি? -ফার্মাই ইয়া’মাল মিসকালা জাররাতিন খাইরাই য়ারাহ্, ওয়ামাই ইয়া’মাল মিসকালা জাররাতিন শাররাই য়ারাহ- যে ব্যক্তি এক বিন্দু পরিমাণ সৎকাজ করবে সে তার বিনিময় লাভ করবে, তেমনিভাবে যে ব্যক্তি এক বিন্দু পরিমাণ অসৎকাজ করবে তার বিনিময় সে লাভ করবে।-সর্বাধিক ভীতিপ্রদ আয়াত কোনটি?-লাইসা বিআমানিয়্যিকুম ওয়ালা আমানিয়্যি আহলিল কিতাবি মান ই’মাল সূআন ইউজযা বিহি ওয়ালা ইয়াজিদ লাহু মিন দুনিল্লাহ ওয়ালিয়্যান ওয়ালা নাসীরান- না তোমাদের আশা-আকাঙ্খা অনুযায়ী, আর না আহলি কিতাবদের কামনা-বাসনা অনুযায়ী সবকিছু হবে। যে ব্যক্তি খারাপ কাজ করবে তাঁকে তাঁর প্রতিফল ভোগ করতে হবে। আর আল্লাহ ছাড়া তার জন্য কোন অীভভাবকও পাবে না এবং কোন সাহায্যকারীও না। সর্বাধিক আশা সঞ্চারকারী আয়াত কোনটি? -কুল ইয়া ইবাদিল্লাজীনা আসরাফু আলা আনফুসিহিম লা-তাকনাতু মির রাহমাতিল্লাহ ইন্নাল্লাহা ইয়াগফিরজ্জুনুবা জামীয়া। ইন্নাহ হুয়াল গাফুরুর রাহীম- হে নবী আপনি বলুন, হে আমার বান্দারা, যারা নিজের ওপর বাড়াবাড়ি করছো, আল্লাহর রহমত ও করুণা থেকে নিরাশা হয়োনা । নিশ্চয় আল্লাহ সব পাপই ক্ষমা করে দেবেন । তিনিই তো গাফুরুর রাহীম। -শেষে হযরত উমার (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা আপনাদের মাঝে কি আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ আছে?’ -হ্যাঁ ।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ কেবল একজন ভালো ক্বারী, আলিম, আবিদ ও যাহিদই ছিলেন না, সেই সাথে তিনি ছিলেন একজন কর্মঠ ও বিচক্ষণ ব্যক্তি এবং কঠিন ‍বিপদ মুহূর্তে অগ্রগামী একজন মুজাহিদ। তাঁর জন্য এ গৌরবটুকুই যথেষ্ট যে, রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পর তিনিই ভূ-পৃষ্ঠের প্রথম মুসলিম যিনি প্রকাশ্যে কুরাইশদের মাঝে কুরআন পাঠ করেছিলেন ।

নবীজি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) যাঁর তেলাওয়াতে ক্রন্দন করতেন:

আল্লাহর রাসুলের প্রিয় সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) কুরআনের সাধক হিসেবে আজো বিশ্ববিখ্যাত। তার ব্যাখ্যা এবং মতামত এখনো সবার শীর্ষে গ্রহণযোগ্য। তিনি ছিলেন কুরআনুল কারিমের একনিষ্ঠ সেবক ও গবেষক। জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় তিনি কুরআন গবেষণায় ব্যয় করেছেন। হয়েছেন রইসুল মুফাসসিরিনদের একজন। হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনি কোরআনের ৭০টি সুরা মুখস্থ করেন।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ নিজেই বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে কুরআন তেলাওয়াত করতে বলতেন এবং তাঁর তেলাওয়াত শুনে তিনি অস্রুসিক্ত হতেন।’

ইবনে মাসউদকে নিয়ে হজরত উমার (রাঃ) বর্ণনা, যাতে কুরআন তেলাওয়াতে ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর গুরুত্ব ফুটে উঠে একবার হজরত উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বললেন, হে আমিরুল মুমিনিন! আমি কুফা থেকে এসেছি। সেখানে আমি দেখে এসছি, এক ব্যক্তি নিজের স্মৃতি থেকেই মানুষকে কুরআন শিখাচ্ছেন।

একথা শুনে তিনি এত রাগান্বিত হলেন যে, সচরাচর তাঁকে এমন রাগ করতে দেখা যায় না। তিনি উটের হাওদার অভ্যন্তরে রাগে ফুলতে থাকেন। তারপর প্রশ্ন করেন, তোমার ধ্বংস হোক! কে সে লোকটি?লোকটি বললো- ‘আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের নাম শুনে তাঁর অবস্থা এমন হলো- যেন জ্বলন্ত আগুনে পানি ঢেলে দেয়া হলো। তাঁর রাগ পড়ে গেল। তিনি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পেলেন।তারপর বললেন, তোমার ধ্বংস হোক! আল্লাহর কসম, এ কাজের জন্য তাঁর চেয়ে অধিক যোগ্য কোনো ব্যক্তি বেঁচে আছে কিনা আমি জানিনা।

এ ব্যাপারে তোমাকে আমি একটি ঘটনা বলছি- হযরত উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতে লাগলেন, একদিন রাতের বেলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু বকর (রাঃ) এর সাথে মুসলমানদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছিলেন। আমিও তাঁদের সাথে ছিলাম।কিছুক্ষণ পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বের হলেন, আমরাও তাঁর সাথে বের হলাম। বেরিয়েই আমরা দেখতে পেলাম, এক ব্যক্তি মসজিদে দাঁড়িয়ে; কিন্তু আমরা তাঁকে চিনতে পারলাম না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তাঁর কুরআন তেলাওয়াত শুনলেন। তারপর আমাদের দিকে ফিরে বললেন-‘যে ব্যক্তি বিশুদ্ধভাবে কুরআন পাঠ করে আনন্দ পেতে চায়, যেমন তা অবতীর্ণ হয়েছে, সে যেন ইবনে উম্মু আবদের (আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ) পাঠের অনুরূপ কুরআন পাঠ করে।’

এরপর আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ বসে দোয়া করা শুরু করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আস্তে আস্তে তাঁকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলেন, ‘চাও, দেয়া হবে, চাও, দেয়া হবে।’

হাদিস শাস্ত্রে ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর অবদানঃ

তিনি মুতাওয়াসসীতিন রাবীদের অন্তর্ভুক্ত। তাঁর বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ৮৪৮টি। তন্মধ্যে ৬৪টি যৌথভাবে বুখারী এবং মুসলিমে স্থান পেয়েছে। তাছাড়া ২১টি বােখারীতে এবং ৩৫টি মুসলিম শরীফে স্থান পেয়েছে।

কুফার কাজী ইবনে মাসউদ (রাঃ) :

হযরত উমার (রাঃ) এর খেলাফতকালে ৬৪০খৃ. মুতাবেক ২০ হি. সনে তিনি কুফার কাজী নিযুক্ত হন এবং পুরো দশ বছর অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এতগুলি দায়িত্ব তিনি পালন করেন । এ দীর্ঘ সময়ে খলীফা উমার (রাঃ) শাহাদাত বরণ, হযরত উসমানের খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণসহ কুফার ওয়ালীরও রদবদল হয়েছে, কিন্তু আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) স্বীয় পদে বহাল থাকেন । খলীফা উসমানের খিলাফতের শেষ পর্বে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) তার দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়। তিনি সঙ্গী-সাথী ও পরিবার পরিজনসহ কুফা থেকে হিজাযের দিকে যাত্রা করেন । পথে মরুভূমিতে ‘রাবজা’ নামক স্থানে পৌছে জানতে পারেন প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু যার গিফার (রাঃ) সেখানে অন্তিম শয্যায় । তাঁর পৌঁছার অল্পক্ষণ পরেই আবু যার (রাঃ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) তাঁর জানাযার নামাযে ইমামতি করেন এবং কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করেন । সেখান থেকে তিনি মক্কা চলে যান এবং উমরা আদায় করে মদীনায় পৌঁছেন । বাকী জীবন মদীনায় কাটিয়ে দেন ।

শয্যাশায়ী ইবনে মাসউদ (রাঃ) ও খলিফা ওসমান (রাঃ) এর আলাপন:

হযরত উসমানের (রাঃ) খিলাফতের পর্যন্ত তিনি জীবিত ছিলেন । তিনি যখন অন্তিম রোগ শয্যায়, তখন উসমান (রাঃ) একদিন তাঁকে দেখতে গেলেন । তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “আপনার অভিযোগ কিসের বিরুদ্ধে? আমার পাপের বিরুদ্ধে।‘আপনার চাওয়ার কিছু আছে কি? আমার রবের রহমত বা করুণা। ‘বহু বছর যাবৎ আপনার ভাতা নিচ্ছেন না, তাকি আবার দেয়ার নির্দেশ দেব? আমার কোন প্রয়োজন নেই।‘আপনার মৃত্যুর পর আপনার কন্যাদের প্রয়োজনে আসবে। আপনি কি আমার কন্যাদের দারিদ্রের ব্যাপারে ভীত হচ্ছেন? আমি তো তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছি, তারা যেন প্রত্যেক রাতে সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করে । কারণ আমি রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে শুনেছিঃ ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক রাতে সূরা আল-ওয়াকিয়া পাঠ করবে, কখনও দারিদ্র তাকে স্পর্শ করবে না।”

রফীকে আ’লা’র সাথে মিলন:

তিনি হযরত ওসমান (রাদ্বিঃ) খেলাফত আমলে ৩২ বা ৩৩ হি. সনে ৮ রমজান মদীনায় তাঁর রফীকে আ’লা-শ্রেষ্ঠতম বন্ধুর সাথে মিলিত হলেন তথা ইন্তেকাল করলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৬০ বছর। হযরত ওসমান (রাঃ) তাঁর নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন এবং জান্নাতুল বাকীতে তাঁকে দাফন করা হয়।

Related Articles

Back to top button
close