রামাদ্বান মাস ও রোযার ফযীলত-২
সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আযহারী

জুমার খুতবা
بسم الله الرحمن الرحيم. نحمده ونصلى ونسلم على رسوله الكريم وعلى آله وصحبه أجمعين
রমযান মাস দান-সদকার মাস:
এ মাসটি ধনী এবং আড়ম্বরপূর্ণ জীবন যাপনকারীদের জন্যও বিরাট সুযোগ। রমযান মানুষের মধ্যে মানবিকতাবোধের উন্মেষ ঘটায়। তাদের কাজ-কর্ম এবং অনুভূতিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য, তারা যেন দরিদ্রদের প্রয়োজন ও ব্যথা অনুভব করতে পারে। নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে। আল্লাহ যে পথে ব্যয় করতে সম্পদ দিয়েছেন সে পথে তারা সম্পদ ব্যয় করতে পারে। মুসলিম উম্মাহর মধ্যে যারা ক্ষুধার্ত তাদের বাঁচাতে তারা যেন এগিয়ে আসতে পারে। তারা যদি তাদের ক্ষুধার্তদেরকে না খাওয়ায়, বস্ত্রহীনদেরকে বস্ত্র না দেয়, আর দুর্বলদেরকে সাহায্য না করে, মনে করতে হবে তাদের ঈমান বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভাষায়, شهرُ المواساة‘ সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যরে মাস মাহে রমযান’ (বায়হাকি)।
কেননা ধনী ও বিত্তশালীরা সারা দিন রোযা রেখে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্ষুধার জ্বালার দহন-বেদনা বুঝতে সক্ষম হন, ফলে তাদের মধ্যে সমাজের বঞ্চিত ও অবহেলিত মানুষের প্রতি সহমর্মিতার অনুভূতি জাগ্রত হয়। এ মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানের কথা বলতে গিয়ে প্রখ্যাত সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন:
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ وَكَانَ يَلْقَاهُ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ فَيُدَارِسُهُ الْقُرْآنَ فَلَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدُ بِالْخَيْرِ مِنْ الرِّيحِ الْمُرْسَلَةِ
(صحيح البخاري كتاب الصوم باب أجود ما كان النبي صلى الله عليه وسلم يكون في رمضان. رقم الحديث-১৮০৩)
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। রমযানে যখন জিবরীলের তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি আরো বেশি দানশীল হয়ে যেতেন, তিনি ছিলেন প্রবাহমান বাতাসের চেয়েও অধিক বদান্য। (বুখারী মুসলিম)
ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করে তার উম্মতের জন্য উত্তম কাজ হল রমযান মাসে তারা বেশি করে দান-সদকা করবে। কারণ এ মাসে মানুষের প্রয়োজন বেশি থাকে। অপরদিকে রমযান হল জিহাদের মাস। তাই প্রত্যেকের উচিত অর্থ-সম্পদ দান করার মাধ্যমে জিহাদে অংশ নেয়া ও রমযান মাসে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে অর্থ ব্যয় করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
يَا عَائِشَةُ لَا تَرُدِّي الْمِسْكِينَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ ، يَا عَائِشَةُ أَحِبِّي الْمَسَاكِينَ وَقَرِّبِيهِمْ ، فَإِنَّ اللَّهَ يُقَرِّبُكِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ (سنن الترمذي -২৩৫২)
“হে আয়েশা, অভাবগ্রস্ত মানুষকে ফেরত দিয়ো না। একটি খেজুরকে টুকরো টুকরো করে হলেও দান করো। দরিদ্র মানুষকে ভালোবেসে কাছে টানো। কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তোমাকে কাছে টানবেন।
রোযাদারদের ইফতার করানো:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ غَيْرَ أَنَّهُ لا يَنْقُصُ مِنْ أَجْرِ الصَّائِمِ
(رواه أحمد- حديث رقم: ১৭০৭৪، والترمذي- كتاب الصوم عن رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، بَابُ ما جاء فِي فضل مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا، حديث رقم: ৮০৭، وابن ماجه- أَبْوَابُ الصِّيَامِ، بَابٌ: فِي ثَوَابِ مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا حديث رقم: ১৭৪৬، بسند صحيح رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح .)
“যে ব্যক্তি কোন সিয়াম পালনকারীকে (রোযাদারকে) ইফতার করাবে সে সিয়াম পালনকারীর অনুরূপ সাওয়াব লাভ করবে, তবে তাতে সিয়াম পালনকারীর সওয়াব বিন্দুমাত্র কমে যাবে না।’ (আহমদ-: ১৭০৭৪)
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন:
حديث رسول الله صلى الله عليه وسلم فيما يرويه عن ربه: مَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِشُ بِهَا وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا وَإِنْ سَأَلَنِي لَأُعْطِيَنَّهُ وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لَأُعِيذَنَّهُ وَمَا تَرَدَّدْتُ عَنْ شَيْءٍ أَنَا فَاعِلُهُ تَرَدُّدِي عَنْ نَفْسِ الْمُؤْمِنِ يَكْرَهُ الْمَوْتَ وَأَنَا أَكْرَهُ مَسَاءَتَهُ (صحيح البخاري – الديات (৬৫০২)
“আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে, যতক্ষন না আমি তাকে ভালবাসি। আর যখন আমি তাকে ভালবাসি তখন সে আমার কান হয়ে যায় যা দিয়ে সে শোনে। আমার চক্ষু হয়ে যায় যা দিয়ে সে দেখে। হাত হয়ে যায় যা দিয়ে সে ধরে। পা হয়ে যায় যা দিয় সে চলে। (বুখারী-৬৫০২)।
মজুদদার অভিশপ্ত:
রমযান মাস এলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যসামগ্রী মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে অত্যধিক মুনাফা লাভের আশায়। এটা অত্যন্ত গর্হিত ও অন্যায় কাজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ “ الْجَالِبُ مَرْزُوقٌ وَالْمُحْتَكِرُ مَلْعُونٌ ”
“মজুদদার অভিশপ্ত।’
سنن ابن ماجه كتاب التجارات باب الحكرة والجلب-২১৫৩
এটি শুধুই অমানবিক নয়, রীতিমত হিংস্রতাও। এ ব্যাপারে হাদিসে এসেছে কঠোর সতর্কতা।
قَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، يَقُولُ : ” مَنِ احْتَكَرَ عَلَى الْمُسْلِمِينَ طَعَامَهُمْ ، ضَرَبَهُ اللَّهُ بِالْجُذَامِ وَالإِفْلاسِ
(مسند أحمد بن حنبل – – رقم الحديث : ১৩৩ سنن ابن ماجه – رقم الحديث : ২১)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,“কেউ যদি কৃত্রিম উপায়ে অর্থাৎ্ খাদ্য গুদামজাত করে সঙ্কট তৈরি করে, আল্লাহ তাকে কুষ্ঠরোগ দেবেন কিংবা একদিন না একদিন তাকে অবশ্যই গরিব বানাবেন।’
অতএব ব্যবসায়ীদের এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত। দাম বাড়ানোর কারণে যেন কোনো রোযাদার কষ্ট না পান, নিজেরাও যাতে হালাল উপার্জনে রোযা পালন করতে পারেন।
সিয়াম আগুন ও প্রবৃত্তির তাড়না থেকে রক্ষাকারী ঢাল:
قال رسول الله – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – : “الصوم جُنَّة من عذاب الله
(صحيح: رواه البيهقي في شعب الإيمان عن عثمان بن أبي العاص، ورواه أحمد والنسائي، وابن ماجة وابن خزيمة، وابن حبان، وصححه السيوطي والألباني في “صحيح الجامع” برقم (৩৮৬৭.)
وقال – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – : ” الصوم جُنَّة يستجن بها العبد من النار”
(صحيح: رواه الطبراني في “الكبير” عن عثمان بن أبي العاص، ورواه أحمد، النسائي, وابن ماجة، وابن خزيمة، وابن حبان، وقال الهيثمي سنده حسن، وصححه السيوطي والألباني في “صحيح الجامع” رقم (৩৮৬৮)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, “সিয়াম প্রবৃত্তির তাড়না থেকে বাঁচার জন্য ঢাল, এর মাধ্যমে বান্দা আগুন থেকে মুক্তি পায়। (আহমাদ)
عَنْ عَبْدِاللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رضي الله عنه قَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ! مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ؛ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ(. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,“হে যুবকেরা! যে সামর্থ রাখে সে যেন বিবাহ করে। কেননা তা দৃষ্টিকে সংরক্ষণ করে এবং যৌনাঙ্গের হিফাযত করে। যে বিবাহের সামর্থ রাখে না সে যেন (নফল) সিয়াম পালন করে। কেননা এটি তার জন্য সুরক্ষা। (বুখারী মুসলিম)।
সিয়াম জান্নাতের পথ:
عن أبي أمامة الباهلي رضي الله عنه قال: قلت: يا رسول الله! مُرْني بأمر آخذه عنك، ينفعني الله به، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: (عليك بالصوم، فإنه لا مِثلَ له)، وفي رواية: (لا عِدلَ له) رواه أحمد والنسائي والبيهقي بإسناد صحيح
ইমাম নাসাঈ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আবু উমামা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল আমাকে এমন বিষয়ের নির্দেশ দিন যার মাধ্যমে আল্লাহ আমাকে প্রতিদান দেবেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তুমি সিয়াম পালন কর। কেননা এর কোন তুলনা নেই।(নাসাঈ)
জান্নাতে একটি দরজা আছে সেখান দিয়ে শুধু সিয়াম পালনকারী প্রবেশ করবে:
قال النبي صلى الله عليه وسلم: في الجنة ثمانية أبواب، باب منها يسمى الريان، لا يدخله إلا الصائمون, وقال: إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَاباً يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لا يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ يُقَالُ أَيْنَ الصَّائِمُونَ؟ فَيَقُومُونَ، لا يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ، فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, জান্নাতে এমন একটি দরজা আছে যার নাম ‘রাইয়ান’। কিয়ামত দিবসে সেখান দিয়ে সিয়াম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। সে দরজা দিয়ে অন্য কেহ প্রবেশ করবে না। বলা হবে: সিয়াম পলনকারী কোথায়? তারা দাঁড়াবে, তারা ছাড়া আর কেহ প্রবেশ করবে না। তারা প্রবেশ করার পর দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। আর কেহ সে স্থান দিয়ে প্রবেশ করবে না। (বুখারী মুসলিম)।
সিয়াম ও আল-কোরআন কিয়ামত দিবসে সুপারিশকারী:
وروى الإمام أحمد (৬৫৮৯) عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رضي الله عنهما أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ( الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، يَقُولُ الصِّيَامُ : أَيْ رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ . وَيَقُولُ الْقُرْآنُ : مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ . قَالَ : فَيُشَفَّعَانِ )
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, সিয়াম এবং কোরআন বান্দার জন্য কিয়ামত দিবসে সুপারিশকারী হবে, সিয়াম বলবে, হে প্রভু আমি তাকে দিনের বেলায় খাওয়া এবং প্রবৃত্তির তাড়না থেকে নিবৃত্ত রেখেছি, তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাত্রের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন, আল্লাহ তাআলা বলবেন: তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হল। (আহমদ) প্রতি বছর রমযান মাসে জিবরাইল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে পূর্ণ কোরআন শোনাতেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাকে পূর্ণ কোরআন শোনাতেন। আর জীবনের শেষ রমযানে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’বার পূর্ণ কোরআন তিলাওয়াত করেছেন। (সহি মুসলিমের হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত।)
সিয়াম গুনাহের ক্ষমা এবং কাফফারা হিসাবে গৃহিত হয়:
কেননা ভাল কাজ অন্যায়কে মুছে দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, যে রমযানে ঈমান এবং এহতেসাবের সাথে সিয়াম পালন করবে, আল্লাহ তার পূর্বের গোনাহ মাফ করে দেবেন। (বুখারী মুসলিম)
যে ব্যক্তি রমযান মাস পেয়েও তার পাপসমূহ ক্ষমা করানো থেকে বঞ্চিত হলো আল্লাহর রাসূল তাকে ধিক্কার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন “ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক যার কাছে রমযান মাস এসে চলে গেল অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করা হয়নি। (তিরমিজি)
সত্যিই সে প্রকৃত পক্ষে সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত যে এ মাসেও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল।
সিয়াম ইহকাল এবং পরকালের সৌভাগ্যের কারণ:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, সিয়াম পালনকারীর দুটি খুশি, প্রথম খুশি যখন সে ইফতার করে, আর এক খুশি যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে। সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশক আম্বরের চেয়ে অধিক প্রিয়। (বুখারী মুসলিম)
এ মাসের বরকত:
এ মাসের অন্যতম বরকত হল ভাল কাজের প্রতিদান অনেক বেড়ে যায়। যেমন, রাত্রে দাড়িয়ে নামাজ আদায় করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের রাত্রে দাড়িয়ে নামায পড়তে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি বলেন: যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতেসাবের সাথে রমযানের রাত্রে দাড়িয়ে নামায আদায় করবে আল্লাহ তাআলা তার পূর্বের গোনাহ মাফ করে দেবেন। (বুখারী মুসলিম)
সিয়াম পালনকারীর জন্য সাহরী খাওয়া উত্তম:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, সাহরী বরকতের খাবার। তা খাওয়া থেকে বিরত হবে না। কেহ যদি এক ঢোক পানিও পান করে তবুও সে সাহরী খেল। কেননা আল্লাহ তাআলা এবং ফেরেশতাগণ সাহরীতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য দোয়া করতে থাকেন। (আহমাদ)
ইফতার তাড়াতাড়ি করা এবং দোয়া করা:
ইমাম তিরমিজি রহ. নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ তাআলা ফেরৎ দেন না: ন্যায়পরায়ণ শাসক, সিয়াম পালনকারী যখন ইফতার করে ও অত্যাচারিতের দোয়া। (তিরমিজি)
রমযান জাহান্নাম থেকে মুক্তির লাভের মাস:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, “প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে ঘোষণা দিতে থাকে যে, হে সৎকর্মের অনুসন্ধানকারী তুমি অগ্রসর হও ! হে অসৎ কাজের অনুসন্ধানকারী তুমি থেমে যাও! এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। (তিরমিজি)
এ’তেকাফ:
ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযানের শেষ দশকে এতেকাফ করতেন।”( মুসলিম)। এতেকাফ প্রসঙ্গে ইমাম যুহরি বলেন, আশ্চর্যজনক হল মুসলমানরা এতেকাফ পরিত্যাগ করে অথচ রাসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আসার পর থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত কখনো এতেকাফ পরিত্যাগ করেননি।
দোয়া-প্রার্থনা করা:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সিয়ামের বিধান বর্ণনা করার পর বলেছেন: “আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে প্রশ্ন করে, তখন আপনি বলে দিন, আমি তো নিকটেই। প্রার্থনাকারী যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে আমি তার প্রার্থনায় সাড়া দেই।’ (সূরা আল-বাকারা:১৮৬)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,“রমযান মাসে প্রত্যেক মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়। (মুসনাদ আহমদ)
অন্য হাদিসে এসেছে – আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমযানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং প্রতি রাত ও দিবসে মুসলিমের দোয়া-প্রার্থনা কবুল করা হয়। (সহি আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব) তাই সিয়াম পালনকারী আল্লাহর কাছে অধিক পরিমাণে দোয়া-প্রার্থনা করবে।
তওবা করার মাস:
সর্বদা তওবা করা ওয়াজিব। বিশেষ করে এ মাসে তো বটেই। এ মাসে তওবার অনুকূল অবস্থা বিরাজ করে। শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নাম থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়া হয়। এ ছাড়া রমযান মাসের সকল ইবাদত বন্দেগি তওবার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করে। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,“যে ব্যক্তি রমযান মাস পেয়েও তার পাপ ক্ষমা করাতে পারেনি তার নাক ধুলায় ধূসরিত হোক।” (তিরমিজি) তাই রমযান মাসটাকে তওবা ও ক্ষমা পাওয়ার মাস হিসেবে গ্রহণ করে সে অনুযায়ী আমল করা উচিত।
وصلى الله على سيدنا محمد وعلى آله وصحبه اجمعين