সাদকাতুল ফিতরা কি ও কার/কাদের উপর ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব এবং ফিতরার পরিমাণ

সেনানী ডেস্ক

সাদকাতুল ফিতরাঃ

রমজান মাসে আল্লাহ্‌র যাবতীয় হুকুম-আহকাম পালনে সক্ষম হওয়ার খুশিতে এবং ঐ সকল দায়িত্ব পালনে কোন রকম অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটলে তার ক্ষতি পূরণের উদ্দেশ্যে মুসলমানগণ ঈদের নামাজের পূর্বেই যে দান-সাদকা করেন, তাকে সাদকাতুল ফিতরা বা ফিতরা বলে।

ফিতরা মূলত গরীব মিসকিনদের হক হলেও এটা দেওয়া জরুরী নিজের জন্যই। কেননা পুরো রমাদান মাস জুড়ে সিয়াম সাধনার সময় যেসকল ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো রয়ে যায় সেগুলো থেকে আমলনামাকে পরিশুদ্ধ করার এটি অতি উত্তম পন্থা। ঈদের নামাজ পড়ার আগেই ফিতরা আদায় করার নির্দেশনা রয়েছে।

রোজাদারগণ অভাবী লোকদের এই সাদকা প্রদান করেন। এই সাদকা গরীব-দুঃখীদের ঈদের খুশিতে শরীক হতে সাহায্য করে। তাই এর সামাজিক গুরুত্বও অনেক বেশি।

কার/কাদের উপর ফিতরা দেওয়া ওয়াজিবঃ

সামর্থ্যবান মুমিন নারী-পুরুষের ওপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। এসকল সামর্থ্যবানদের অধীনস্ত পরিবারের সব সদস্যদের ফিতরাও দায়িত্বশীল ব্যক্তি আদায় করবেন। অর্থাৎ পরিবারের শিশু-কিশোর যদি অর্থের মালিক না হয় তবে বাবাই পরিবারের লোকদের ফিতরা আদায় করবেন।

এক কথায় সামর্থ্যবান নারী-পুরুষ, শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সব স্বাধীন, পরাধীন এমনকি হিজড়া সম্প্রদারে ওপরও ফিতরা আদায় করা আবশ্যক। বালেগ সন্তান যদি পাগল বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক হয় তবে পিতার পক্ষ থেকে তা আদায় করা ওয়াজিব ৷

ফিতরার পরিমাণ ও বর্তমান বাজারমূল্যঃ

এ বছর ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩১০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন: কোন পরিবারে ৫ জন লোক আছে, তাহলে ফিতরা আসবে: ৫x৭০=৩৫০ টাকা। এটা সর্বনিম্ন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইসলামি শরিয়াহমতে, গম, আটা, যব, কিশমিশ, খেজুর, পনির ইত্যাদি পণ্যগুলোর যেকোনো একটির দ্বারা ফিতরা প্রদান করা যায়। উন্নত মানের গম বা আটা দিয়ে ফিতরা আদায় করলে ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ৭০ টাকা দিতে হবে। যব দিয়ে আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ২৮০ টাকা, কিশমিশ দিয়ে করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ১ হাজার ৩২০ টাকা, খেজুর দিয়ে করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ১ হাজার ৬৫০ টাকা, পনির দিয়ে করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ২ হাজার ৩১০ টাকা ফিতরা দিতে হবে। দেশের সব বিভাগ থেকে সংগৃহীত গম, আটা, যব, কিশমিশ, খেজুর ও পনিরের বাজার মূল্যের ভিত্তিতে এ ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে।

মুসলমানেরা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী এসব পণ্যগুলোর যেকোনো একটি পণ্য বা এর বাজার মূল্য দিয়ে সাদকাতুল ফিতর আদায় করতে পারবেন। এসব পণ্যের স্থানীয় খুচরা বাজার মূল্যের তারতম্য রয়েছে। তাই স্থানীয় মূল্যে পরিশোধ করলেও ফিতরা আদায় হবে।

একটি লক্ষণীয় বিষয়ঃ

সমাজের প্রায় সব মানুষই সর্বনিম্ন ৭০ টাকা হারে ফিতরা হিসাব করে থাকে। কিন্তু ফিতরা আদায়ের হিসাবটি মুলত এমন নয়। কারণ অনেক মানুষ আছেন, যারা অঢেল সম্পদের মালিক। তারা চাইলে জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ২০০ টাকার চেয়ে বেশি ফিতরা দিতে পারেন। অথচ এ পর্যায়ের অনেক মানুষ ফিতরার ক্ষেত্রে ৭০ টাকা হিসাব করে ফিতরা দিয়ে থাকেন। এমনটি যেন না হয়। তাহলে অবস্থা অনুযায়ী ঐ ব্যক্তির ফিতরা আদায়ে ইনসাফ হবে না। কেননা ফিতরা গরিবের আনন্দ, বিনোদন ও উৎসব করার হক।

Related Articles

Back to top button
close