আওয়াবীনের সালাত
মো: উসমান গাজী

নফল সালাত মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামিনের নিকট সুন্নাত সালাতের পর অধিক মর্যাদার, অধিক ফজিলতের ও মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম।নফল সালাতের মধ্যে অধিক ফজিলতপূর্ণ নফল সালাতের মধ্যে “আওয়াবীনের সালাত” একটি।
কারণ
“আওয়াবীনের সালাত” নিয়ে লিখার কারণ হলো, বর্তমানে অনেকে এই ফজিলতপূর্ণ সালাতকে অস্বীকার করতে চান। তিনারা বলে থাকেন যে “আওয়াবীনের সালাত” এর কথা হাদিসে পাকে নেই অথবা হাদিসে পাকে আছেই স্বীকার করলেও এর কোন ফজিলত নেই বলে মু’মিন মুসলমানকে এই আমল থেকে বিরত রাখতে চান।তাই বিষয়টি নিয়ে কোরআন ও হাদিসের আলোকে লিখার প্রয়োজন মনে করলাম।
নিয়ম
“আওয়াবীনের সালাত”এর নিয়ম হচ্ছে- মাগরিব এর সালাত আদায়ের পর কোন কথাবার্তা না বলে দুই রাকাত, দুই রাকা’ত করে ছয় রাকা’ত অথবা বিশ রাকা’ত সালাত আদায় করা। ছয় রাকা’তের এক ফজিলত ও বিশ রাকা’তের আরেক ফজিলত, যা নিম্মে হাদিসের আলোকে তোলে ধরা হলো।
হাদিসের আলোকে
>হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ، – يَعْنِي مُحَمَّدَ بْنَ الْعَلاَءِ الْهَمْدَانِيَّ حَدَّثَنَا زَيْدُ بْنُ الْحُبَابِ، حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ أَبِي خَثْعَمٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ سِتَّ رَكَعَاتٍ لَمْ يَتَكَلَّمْ فِيمَا بَيْنَهُنَّ بِسُوءٍ عُدِلْنَ لَهُ بِعِبَادَةِ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ سَنَةً ”
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তির মাগরিবের পর ছয় রাক’আত নামায আদায় করলে এবং তার মাঝখানে কোন অশালীন কথা না বললে তাঁকে এর বিনিময়ে বার বছরের ইবাদাতের সমান সাওয়াব দেয়া হবে। (সুবহানাল্লাহ) [তিরমিজি,৪৩৫-ইবনে মাজাহ,১১৬৭]
হাদিস নং-০২
عَنْ عَائِشَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ عِشْرِينَ رَكْعَةً بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ ”
আয়শা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের পর বিশ রাক’আত নামায আদায় করে আল্লাহ্ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করেন।
[তিরমিজি,৪৩৫]
>হাদিসের মান
দ্বয়িফ হাদিস। তবে মাওদু,মাতরুক বা মুবহাম নয়।আমলের ক্ষেত্রে ফজিলতের ক্ষেত্রে দ্বয়িফ হাদিস আমলযোগ্য।
আমাদের কিছু ভাই দ্বয়িফ সনদের হাদিসকে মনে করেন এগুলো হাদিস নয়(নাউজুবিল্লাহ)দ্বয়িফ হাদিস এগুলো সনদান দ্বয়িফ কিন্তু রাসূলের হাদিস।এগুলোকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। যেমন,লক্ষ্য করুন-
দ্বয়িফ হাদিস
আমলের ক্ষেত্রে, ফজিলতের ক্ষেত্রে দ্বয়িফ হাদিস আমল করা যাবে ও গ্রহণযোগ্য।বিশেষ করে আমরা যারা হানাফি মাজহাবের অনুসারী,হানাফি মাজহাবের উসুল হচ্ছে-
قال أبو محمد بن حذم:جميع الحنفيةمجمعون علي أن مذحب أبي حنيفة أن ضعيف الحديث ألي عنده من القياس والراي.
আবু মুহাম্মদ ইবনে হাজম বলেছেন:সকল হানাফীরা ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে,ইমামে আজম আবু হানিফা(রহ.)এর মাজহাব হলো-দ্বয়িফ হাদিস তাঁর কাছে কিয়াস ও রায় হতেও উত্তম। [তারিখুল ইসলাম,৩য় খন্ড,৯৯০পৃ:৪৪৫নং রাবির ব্যাখ্যায়]
>এছাড়াও এই একই মত পোষণ করছেন, আল্লামা কামালুদ্দিন ইবনুল হুমাম,আল্লামা ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী,আল্লামা ইসমাঈল হাক্বী, ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.)সহ ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী (রহ.)তিনারা সবাই স্ব স্ব কিতাবে উল্লেখ করেন-
والضعيف يعمل به في فضاءل الأعمالإتفاقا.
সর্ব-সম্মতিক্রমে ফাজায়েলের ক্ষেত্রে দ্বয়িফ হাদিস আমল করা জায়েয। দেখুন-
[ফাতহুল কাদীর,১ম খন্ড,৩৪৯পৃ]
[আসরারুল মারফুয়া,৪৩৪নং হাদিসের ব্যাখ্যায়]
[তাফসীরে রুহুল বয়ান, ৭ম খন্ড-তাফসীরে জালালাইন,৩৫৭পৃ,১৩নং হাশিয়া]
[মেরকাত শরহে মেশকাত,১১৭৩নং হাদিসের ব্যাখ্যায়]
[তাদরিবুর রাবী,১ম খন্ড,৩৫১পৃ]
ফজিলত
“আওয়াবীনের সালাত”এর ফজিলত, হাদিসের আলোকে-
>যে মাগরিবের সালাতের পর ছয় রাকা’ত “আওয়াবীনের সালাত” আদায় করবে তার বিনিময়ে বার বছরের ইবাদাতের সমান সাওয়াব দেয়া হবে।(সুবহানাল্লাহ)
>যে ব্যক্তি মাগরিবের পর বিশ রাক’আত নামায আদায় করে আল্লাহ্ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করেন। (সুবহানাল্লাহ)
”আওয়াবীনের সালাত” এর ভিত্তি পবিত্র হাদিসে পাকে রয়েছে ও এর ফজিলতও অনেক। যা আমরা পূর্বের আলোচনায় বুঝতে পেরেছি। যখনই সময় হবে আমরা “আওয়াবীনের সালাত” আদায়ের চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ তা’লা আমাদের সবাইকে বোঝার ও আমল করার তৌফিক দিন, আমিন।
পরিশেষে মহান আল্লাহ তা’লার সেই পবিত্র বাণী দিয়ে শেষ করব-
وَما ءاتىٰكُمُ الرَّسولُ فَخُذوهُ وَما نَهىٰكُم عَنهُ فَانتَهوا.
-রাসূল(সা) তোমাদের জন্য যা আনয়ন করেন তা গ্রহণ করো ও যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক। [সূরা হাশর, আয়াত নং-০৭]
লেখক: মো: উসমান গাজী, শ্রীমঙ্গল, সিলেট