ইমাম শেরে বাংলা (রাহ.)’র কিছু কারামত

আল্লামা গাযী শেরে বাংলা সৈয়দ মুহাম্মদ আজিজুল হক রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী আলেম ও মুনাযিরই ছিলেন না, বরং তিনি যে উঁচু পর্যায়ের ওলী ছিলেন তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। তাঁর আদর্শ জীবনে বহু কারামাত প্রকাশ পেয়েছে। এ ক্ষুদ্র পরিসরে সংক্ষেপে কয়েকটি বিশেষ কারামাত উল্লেখ করার প্রয়াস পাচ্ছি

  ।। এক।।

একবার কুতুবদিয়ায় ওহাবীরা আল্লামা গাযী শেরে বাংলাকে আঘাত করার কুমতলবে ওয়াজের দাওয়াত করেছিলাে। তিনিও দ্বীন-মাযহাবের প্রচারণার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা করে দাওয়াত গ্রহণ করলেন এবং সেখানে গিয়ে নির্ধারিত সময়ে নিজের নিয়মে ওয়াজ আরম্ভ করলেন। ওয়াজে তিনি সুন্নী মতাদর্শকে তুলে ধরে ওহাবীদের ভ্রান্ত মতবাদগুলাে খণ্ডন করছিলেন। ইত্যবসরে তারা তাঁকে অতর্কিত হামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাে। কিন্তু আল্লাহ্ পাকের মেহেরবানী দেখুন! থানা-পুলিশের একটি দল গভীর রাতে চোর ধরার জন্য মাহফিলের পার্শ্ববর্তী রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাে। হঠাৎ পুলিশ বাহিনীর কানে এক আহবান আসলাে- তােমরা ওদিকে যাচ্ছো কোথায়?দেখছো না শেরে বাংলাকে ওহাবীরা আক্রমণ করছে?’ পুলিশ বাহিনী মাহফিলের দিকে রওনা দিলাে। মাহফিল স্থলে গিয়ে দেখলাে ওহাবী হায়েনারা আল্লামা গাযী শেরে বাংলাকে আঘাতের পর আঘাত করে যাচ্ছে। সুতরাং পুলিশ বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপ করে তাঁকে রক্ষা করলাে। ওহাবীরা হলাে গ্রেফতার ও লাঞ্ছিত।

 ।। দুই।।

পশ্চিম পটিয়ার দৌলতপুরের জনৈক খবীস লােক আল্লামা গাযী শেরে বাংলাকে প্রাণে মেরে ফেলার কুমতলবে ওয়াজ মাহফিলের নামে তাঁকে দাওয়াত করলাে। হুযূর যথাসময়ে ঠিকানানুসারে গিয়ে দেখলেন সেখানে মাহফিলের কোন আয়োজন নেই। সুতরাং তিনি মসজিদে নামায পড়তে ঢুকলেন এবং নামায শেষে দো’আ-দুরূদ ও মােরাকাবা-মুশাহাদায় মগ্ন হলেন। ইত্যবসরে চক্রান্তকারীর দল মসজিদের চতুর্পাশে ঘােরা ফেরা করছিলো এবং তাঁকে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাে। কিন্তু দেখা গেলাে ‘মার-মার, ধর-ধর করতে করতে একদল লােক মসজিদের দিকে এগিয়ে আসলাে। তারা ছিলাে হুযূরের ভক্তবৃন্দ। অদৃশ্য আহবানে সাড়া দিয়ে তারা হুযূরকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে এসেছিলাে। এদিকে চক্রান্তকারীরা প্রাণের ভয়ে দ্রুতবেগে পালিয়ে গেলাে। আল্লামা গাযী শেরে বাংলা ওই মসজিদে ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল করে চলে আসলেন।

  ।। তিন।।

আল্লামা গাযী শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি হলেন অকৃত্রিম আশেকে রসূল। নবীর শান-মানকে বুলন্দ রাখার জন্য তিনি গােটা জীবনটাকে উৎসর্গ করেছেন। ইন্তিকালের পূর্বে কিছুদিন তিনি কথাবার্তা কম বলতে লাগলেন । হুযুরের খলিফা মরহুম মাওলানা আবদুল মা’বূদ আল ক্বাদেরী হুযূরের দরবারে আরয করলেন, কথাবার্তা বলা ছেড়ে দিয়েছেন? বিরুদ্ধবাদীরা তাে বলবে, “শেরে বাংলা তাে কিছুই বলে যেতে পারলেন না।” এ কথা শুনে আল্লামা গাযী শেরে বাংলা উঠে বসলেন, আর বললেন, “নবীর দুশমনরা আর কীইবা বলবে? আমি এক সপ্তাহর মধ্যে নবী করীম সাল্লাল্লাহুমতা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে চল্লিশবার স্বপ্নে দেখেছি।” সুবহানাল্লাহিল আযীম!

।। চার।।

ষাটের দশকের ঘটনা। পটিয়ার হুলাইন গ্রামে হযরত ইয়াসিন আউলিয়া রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হির মাযার শরীফ। মাযার শরীফের এলাকায় মাইক ব্যবহার করা সম্ভব হতাে না। মাইক ব্যবহার করতে চাইলে তা নষ্ট হয়ে যেতাে। আল্লামা গাযী শেরে বাংলাকে বার্ষিক ওরস শরীফে দাওয়াত করা হলো। সাথে সাথে মাইক ব্যবহারের বিষয়টিও হুযূর শেরে বাংলাকে জানানাে হলাে। হুযূর জানিয়ে দিলেন- এ বছর তিনি সেখানে মাইকযোগেই ওয়াজ করবেন। এ কথা চতুর্দিকে প্রচার করা হলে যথাসময়ে বহুলােকের সমাগম হলাে তাঁর ওয়াজ শুনার জন্য। আল্লামা গাযী শেরে বাংলা যথাসময়ে মাযার শরীফে তাশরীফ নিয়ে গেলেন। মাইকও তৈরি করা হলাে; কিন্তু মাইক চালু করার সাহস হচ্ছিলাে না। আল্লামা গাযী শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি মাযার শরীফে প্রবেশ করলেন এবং সব দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়ে কিছুক্ষণ ভিতরে অবস্থান করলেন। অতঃপর দরজা খুলে বের হলেন। আর মাইকে একজন মাদরাসা-ছাত্রকে ক্বিরআতের নির্দেশ দিলেন। তারপর তিনিও মাইকযােগে ওয়াজ, মিলাদ শরীফ ও মুনাজাত ইত্যাদি সম্পন্ন করলেন।এরপর থেকে অদ্যাবধি আর মাইক ব্যবহারে অসুবিধা হয়নি। এ ঘটনা এলাকায় এখনও প্রসিদ্ধ।

।। পাঁচ।।

হাটহাজারী জামেয়া আজিজিয়া অদূদিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা (বর্তমানে অদূদিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা)-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষ মাদরাসার জন্য প্রস্তাবিত ভূমির উপর বিরাট জমায়েতের আয়ােজন করা হলাে। দেশের বহু প্রখ্যাত ওলামা মাশাইখ, বুদ্ধিজীবী ও জনসাধারণ তাতে উপস্থিত হলেন। আল্লামা গাযী শেরে বাংলা, মাওলানা শামসুল ইসলাম কাযেমী ও মাওলানা শায়খ জামাল আহমদ আল-ক্বাদেরী তিনখানা ইট দ্বারা মাদরাসার ভিত্তি স্থাপন করলেন। সংক্ষিপ্ত মুনাজাতের মাধ্যমে পরবর্তী ওয়াজ-মাহফিলের পর্ব আরম্ভ হলাে। কিন্তু ইতােমধ্যে আকাশ মেঘে ছেয়ে গেলাে। দেখতে দেখতে কালবৈশাখীর রূপ পরিগ্রহ করলাে। উপস্থিত লােকজন ভীত হয়ে মাহফিল ত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাে।
এদিকে হুযূর আল্লামা গাযী শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি সবার উদ্দেশে বললেন, “ভয়ের কারণ নেই। আখেরী মুনাজাত না হওয়া পর্যন্ত এ এলাকায় বৃষ্টিপাত হবে না। আপনারা নির্দ্বিধায় ওয়াজ শুনতে থাকুন।” সুবহানাল্লাহ্! এরপর আরাে বেশ কিছুক্ষণ তাকরির চললাে। মিলাদ শরীফ হলাে, ক্বিয়াম হলাে, আখেরী মুনাজাত হলাে। তারপর স্বাভাবিক গতিতে লােকজন আপন আপন গন্তব্যে পৌঁছলাে। এমনকি দূরান্তরের লোকজন, শহরতলী থেকে আগত ভক্তবৃন্দ তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে যাবার পরক্ষণে মুষলধারে বৃষ্টি নেমে এলাে। মাহফিল ও মাহফিলে অংশগ্রহণকারীদের কোন অসুবিধা হয় নি।

তাছাড়া, আল্লামা গাযী শেরে বাংলার কারামাতগুলোর মধ্যে এটাও ছিলাে যে, তাঁর সাহায্যার্থে হযরত খিযির আলায়হিস সালাম এগিয়ে আসতেন। তিনি তাঁকে ইলমে লাদুন্নী দান করেছিলেন। তাঁকে সাক্ষাৎ দিয়েও ধন্য করেছেন। তিনি রূহানীভাবে আউলিয়া-ই কেরামের
সাথে সাক্ষাৎ-কনফারেন্সে মিলিত হতেন। রূক্বাম শহরের বাসিন্দা জিনদের শাহানশাহে আ’লা বকতানুসের মুরব্বিয়ানা এবং তার খলীফা ও তাঁর সন্তানদের সাথে ভালবাসা দ্বারাও তিনি ধন্য হন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। হাজার হাজার জিনও তাঁর মাহফিলসমূহে যােগদান করতাে। লক্ষ লক্ষ জিন তাঁর মুরীদ ছিলাে। এক সূত্রে জানা যায় যে, ওই জিন মুরীদদের মধ্যে এক লক্ষ এগার হাজার আলিম জিনও ছিলেন।

তাছাড়া, আল্লামা গাযী শেরে বাংলা হযরত বায়েজিদ বােস্তামীসহ বহু ওলীর প্রত্যক্ষ সাক্ষাৎও লাভ করেছেন। তিনি বহু ওলীর মাযার শরীফের প্রকৃত ঠিকানা এবং বহু ওলীর মাযারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও প্রভাবের খবর উদঘাটন করেছেন। তাঁর দো’আয় নিঃসন্তান সন্তান লাভ করেছে, বহুলােকের মনােস্কামনা পূরণ হয়েছে।বলাবাহুল্য, ওলীগণ ইন্তিকালের পরও আপন আপন মাযারে পাকে জীবিত থাকেন এবং তাঁদের জীবদ্দশার মতাে যা-ইরীন ও ভক্তবৃন্দের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। তিনি আপন যবানে যা বলতেন, তা বাস্তবেও রূপায়িত হতাে।

সুতরাং এক মহান ওলী হিসেবেও আল্লামা গাযী শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হির মাযার শরীফও রূহানিয়াতে ভরপুর। তাঁর যিয়ারতও অতি বরকতময়। তাই প্রার্থনা যে, তাঁর রূহানিয়াতের বদৌলতে ভক্তবৃন্দ সবসময় ধন্য হতে থাকুক! তাঁর আদর্শ হােক সবার নিকট অণুকরণীয়৷ আমীন বিহুরমাতি সাইয়্যিদিল মুরসালীন আলায়হি আফদ্বালুস্ সালাতি ওয়াত তাসলীম।

সংকলিত (দিওয়ান-ই আযীয)

Related Articles

Back to top button
close