কুরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে কদমবুচি
মোঃ উসমান গাজী

‘কদম’ অর্থ পদ বা পা। বুচি শব্দটি ফার্সী যার বাংলা অর্থ ‘চুম্বন’। অতএব, ‘কদম বুচি’এর পুরো অর্থ হলো-পদচুম্বন করা বা পাচুম্বন করা। ইসলামি শরিয়তে, মা, বাবা, উস্তাদ, বুযুর্গ ব্যক্তিদের পা চুম্বন করাকেই বলা হয় ‘কদমবুচি’। ইসলামি শিষ্টাচারের মূল ভিত্তি হচ্ছে বড়দের সম্মান করা
ইসলামে ‘কদমবুচির’ স্থান
ইসলামি শরীয়তে ‘কদমবুচি’ হচ্ছে, সুন্নাত, সুন্নাতে সাহাবা। কেননা, সাহাবায়ে কেরাম কদমবুচি’ করেছেন , রাসূল(দ.) কদমবুচি করতে বাধা দেননি বরং অনুমতি দিয়েছেন। কিছু সংখ্যক ইমাম কদমবুচিকে মুস্তাহাব বলেছেন। কিন্তু বর্তমানে অনেকে কদমবুচিকে নাজায়েজ, বিদয়াত, শিরক, ইত্যাদি বলতে চান বা বলেন। তাই বিষয়টি নিয়ে কুরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে কিছু লিখার প্রয়োজন মনে করলাম।
পবিত্র হাদিসের আলোকে কদমবুচি
পবিত্র হাদিসে পাকে ‘কদমবুচি’ সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস রয়েছে। এর মধ্যে আমার গবেষণায় প্রায় ৭টি হাদিস গ্রহণযোগ্য তথা সহীহ ও হাসান। নিম্নে আলাদা ভাবে উল্লেখ করা হলো-
‘কদমবুচি’ সম্পর্কে সহীহ্ হাদিস
হাদিস নং-০১
حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ إِدْرِيسَ، وَأَبُو أُسَامَةَ عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلِمَةَ، عَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَسَّالٍ، قَالَ قَالَ يَهُودِيٌّ لِصَاحِبِهِ اذْهَبْ بِنَا إِلَى هَذَا النَّبِيِّ . فَقَالَ صَاحِبُهُ لاَ تَقُلْ نَبِيٌّ إِنَّهُ لَوْ سَمِعَكَ كَانَ لَهُ أَرْبَعَةُ أَعْيُنٍ . فَأَتَيَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَسَأَلاَهُ عَنْ تِسْعِ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ . فَقَالَ لَهُمْ ” لاَ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ شَيْئًا وَلاَ تَسْرِقُوا وَلاَ تَزْنُوا وَلاَ تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ وَلاَ تَمْشُوا بِبَرِيءٍ إِلَى ذِي سُلْطَانٍ لِيَقْتُلَهُ وَلاَ تَسْحَرُوا وَلاَ تَأْكُلُوا الرِّبَا وَلاَ تَقْذِفُوا مُحْصَنَةً وَلاَ تُوَلُّوا الْفِرَارَ يَوْمَ الزَّحْفِ وَعَلَيْكُمْ خَاصَّةً الْيَهُودَ أَنْ لاَ تَعْتَدُوا فِي السَّبْتِ ” . قَالَ فَقَبَّلُوا يَدَهُ وَرِجْلَهُ فَقَالاَ نَشْهَدُ أَنَّكَ نَبِيٌّ .
সাফওয়ান ইবনু আসসাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ইয়াহূদী তার এক সঙ্গিকে বলল, আস আমরা এই নবীর নিকট যাই। তার বন্ধু বলল, নবী বলো না, তিনি যদি শুনে ফেলেন তাহলে খুশীতে তাঁর চার চোখ হয়ে যাবে। অতঃপর এরা দু’জন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এসে নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন সম্পর্কে প্রশ্ন করল। তিনি তাদের বললেনঃ আল্লাহ্র সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না, চুরি করো না, যেনা করো না, আল্লাহ যেসব প্রাণ হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন সঙ্গত কারণ ছাড়া সেগুলো হত্যা করো না, হত্যার উদ্দেশ্যে কোন নির্দোষ ব্যক্তিকে বিচারালয়ে নিয়ে যেও না, যাদু করো না, সুদ খেয়ো না, সতী-সাধ্বী মহিলাকে যেনার অপবাদ দিও না, যুদ্ধের ময়দান থেকে পিঠ ফিরিয়ে পলায়ন করো না এবং বিশেষ করে তোমরা ইয়াহূদীগণ শনিবারের সীমা লংঘন করো না। রাবী বলেন, এসব স্পষ্ট আয়াতের ব্যাখ্যা শুনে তারা তাঁর হাতে-পায়ে চুমু দিল এবং বলল, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নবী। [তিরমিজি, ২৭৩৩-নাসাঈ, ৪০৭৮-ইবনে মাজাহ, ৩৭০৫-মুসনাদে আহমদ, ১৮০৯২-মুস্তাদরাকে হাকেম, ২০-আল আজকার, ৭৫৭-রিয়াদুস সালেহীন, ৮৮৯-মুসনাদে আবু দাউদ ত্বয়ালুছী, ১২৬০-ইমাম বায়হাক্বী, সুনানে কুবরা, ১৬৬৭৩-ইমাম নাসাঈ, সুনানে কুবরা, ৩৫৪১-মুজামুল কবীর, ৭৩৯৬-মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, ২৬২০৭]
সনদ পর্যালোচনা
ইমাম তিরমিজি বলেন-
هذا الحدث صحيح-
এটা সহীহ্ হাদিস।
[তিরমিজি, ২য় ১০২পৃ:]
ইবনে হাজার আসকালানী বলেন-
رواه اصحاب السنان بإسناد قوي.
আসহাবে সুনান এই হাদিস শক্তিশালী সনদে বর্ণনা করেছেন। [তালখিছুর হাবির, ৪র্থ খন্ড, ১৭৩পৃ:;]
রওদ্বাতুল মোহাদ্দেছীন কিতাবে উল্লেখ –
إسناده صحيح.قال الإمام النووي في الرياد رواه الترمذي وغيره بأسانيد صحيحة
সনদ সহীহ. ইমাম নববী তদীয় রিয়াদ গন্হে ও ইমাম তিরমিজি ও অন্যান্যরা বলেন, সনদ সহীহ। [রিয়াদুস সালেহীন, ৮৮৯নং হাদিস ] আল্লামা ইবনে মুলাক্কিন:বাদরু মুনীর, ৯ম খন্ড, ৪৮পৃ:;]
সুবহানাল্লাহ- ইয়াহুদীরা রাসূল (দ) এর কদম বুচি’করলো। এখানে আপত্তি আসে যে, যারা কদম বুচি’ করেছে তারা ইয়াহুদী ছিল, মুসলমান নয়। এই আপত্তির উত্তরে বলব, যারা কদম বুচি’করেছে তারা ইয়াহুদী ছিল, কিন্তু যাকে কদম বুচি’করেছে তিনি কি ছিলেন?তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসূল (দ), শরিয়তের ধারকবাহক। তিনি তো কদম বুচি’করতে তাদেরকে বাঁধা দেননি, বরং আরেকটি সহীহ্ হাদিস লক্ষ্য করুন যেখানে রাসূল(দ) স্বয়ং কদম বুচির অনুমতি দিয়েছেন।
হাদিস নং-০২
عن بريدة:سأل أعرابي النبي صلي الله عليه وسلم آية, فقال له:قل لتلك الشجرة رسول الله (ص) يدعوك.قال فمالت الشجرة عن يمينها وشمالها وبين يدي وخلفها, فتقطعت عروقها, شم جاءت تخد الأرض تجر عروقها مغبرة حتي وقفت بين يدي رسول الله(ص), فقالت:السلام عليك يا رسول الله. قال الأعرابي:إءذن لي أسجد لك.قال لو أمرت أحدا أن أقبل يسجد لأحد لأمرت المرأة أن تسجد لزوجها. قال:فأذن لي أن أقبل يديك ورجليك, فأذن له.
হযরত বুরাইদা(রা)হতে বর্ণিত, একদা এক আরাবি লোক রাসূল (দ.) এর কাছে নিদর্শন দেখতে চাইলে, রাসূল (দ.) তাকে বললেন ঐ গাছটিকে বল রাসূল (দ.) তোমাকে ডেকেছেন, আরাবি লোক তাই করলো। তখন গাছটি সামনে পিছনে ডানে বামে লাড়া দিয়ে উঠলো, এবং রাসূল (দ.) এর কাছে গিয়ে বলল-السلام عليك يا رسول الله-এই নিদর্শন দেখে আরাবি লোক বললো, হে আল্লাহর রাসূল (দ.) আমাকে অনুমতি দিন যেন আমি আপনাকে সেজদা করি, তখন রাসূল (দ.) বললেন যে, আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে যদি সেজদা করার অনুমতি থাকত তাহলে আমি প্রত্যোক স্ত্রীকে তার স্বামীকে সেজদা করার অনুমতি দিতাম। তখন আরাবী লোকটা বললো তাহলে আমাকে অনুমতি দিন আমি আপনার হাত ও পা চুম্বন করব। তখন রাসূল (দ.) তাকে অনুমতি দিলেন। [সুবহানাল্লাহ]
[শিফা শরিফ, ১ম খন্ড, ২৬৩ পৃ:;(বয়রুত, লেবানন প্রকাশ)মুসনাদে বাজ্জার, ৪৪৫০-মুস্তাদরাকে হাকেম, ৭৩২৬-]
সনদ প্রর্যালোচনা-
ইমাম হাকেম ও ইমাম যাহাবী(রহ.)বলেন-
هذا حديث صحيح الإسناد.
এই হাদিসের সনদ সহীহ।
[মুস্তাদরাকে হাকেম, শিফা শরিফ]
>অতএব, সহীহ্ সনদের হাদিস দ্বারা প্রমাণ হলো যে কদম বুচি’জায়েজ।
কদম বুচি’ সম্পর্কে হাসান হাদিস-
হাদিস নং-০৩
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عِيسَى بْنِ الطَّبَّاعِ، حَدَّثَنَا مَطَرُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الأَعْنَقُ، حَدَّثَتْنِي أُمُّ أَبَانَ بِنْتُ الْوَازِعِ بْنِ زَارِعٍ، عَنْ جَدِّهَا، زَارِعٍ وَكَانَ فِي وَفْدِ عَبْدِ الْقَيْسِ قَالَ لَمَّا قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ فَجَعَلْنَا نَتَبَادَرُ مِنْ رَوَاحِلِنَا فَنُقَبِّلُ يَدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَرِجْلَهُ
উম্মু আবান বিনতু ওয়াযি’ ইবনু যারি’ (রহঃ) হতে তার দাদার থেকে বর্ণিত, তিনি (দাদা) ‘আবদুল ক্বাইসের প্রতিনিধি দলের একজন ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা মদিনায় এসে আমাদের আরোহী হতে দ্রুত নেমে এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতে ও পায়ে চুমু দিলাম। [মেসকাত, ৪৬৮৪-আবী দাউদ, ৫২২৫-ইমাম বায়হাক্বী:আল আদাব, ২২৬-শুয়াইবুল ইমান, ৮৫৬০-সুনানুল কোবরা, ১৩৫৮৭-আল আজকার, ৭৫১]
হাদিসের মান-হাসান হাদিস। প্রমান-
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন –
هذا الحدث السناد الجيد
এই হাদিসের সনদ অতি উত্তম।
[ফাতহুল বারী শরহে বুখারী, ১১তম খন্ড ৫৭তম পৃষ্ঠা, ৬২৬৫নং হাদিসের ব্যাখ্যায়]
হাদিস নং-০৪
حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ الْمُبَارَكِ قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ حَبِيبٍ قَالَ: حَدَّثَنَا شُعْبَةُ قَالَ: حَدَّثَنَا عَمْرٌو، عَنْ ذَكْوَانَ، عَنْ صُهَيْبٍ قَالَ: رَأَيْتُ عَلِيًّا يُقَبِّلُ يَدَ الْعَبَّاسِ وَرِجْلَيْهِ
সুহাইব (র) থেকে বর্ণিত, আমি আলী (রাঃ)-কে আব্বাস (রাঃ)-এর হাত ও উভয় পায়ে চুমা দিতে দেখেছি। [আদাবুল মুফরাদ, ৯৭৬-কানজুল উম্মাল, ৩৭৩৩০-ইমাম ছিয়তি, জামেউল আহাদিছ, ৩৩৪১২]
হাদিসের মান -হাসান হাদিস। প্রমাণ-
ইমাম যাহাবী রহ. বলেন-
إسناده حسن.
এই হাদিসের সনদ হাসান।
[সিয়ারে আলামি নুবালা, ৩য় খন্ড, ৪০০পৃৃ]
হাদিস নং-০৫
عن السدي:قال:غضب رسول الله(ص)يوما من الأيام فقام خطيبا, فقال:سلوني فإنكم لا تسألوني عن شيء إلا أنبأتكم به, فقام إليه رجل من قريش من بني سهم يقال له عبد الله بن حذافة, وكان يطعن فيه, قال:فقال يا رسول الله من أبي?قال:أبوك فلان, فدعاه لأبيه, فقام إليه عمر فقبل رجله وقال:يا رسول الله, رضينا بالله ربا, وبك نبيا, وبالإسلام دينا, وبالقرآن إماما, فاعف عنا عفا الله عنك.
হযরত সূদ্দী(রহ.)বলেন:আল্লাহর রাসূল (দ.) একদিন রাগান্বিত অবস্থায় খুতবায় দাড়িয়ে বললেন:আমাকে জিজ্ঞাসা কর, তোমরা যা যা প্রশ্ন করবে আমি সব কিছুই বলে দিব। অতঃপর কোরাইশদের বনী ছাহম গোত্রের একজন লোক যাকে আব্দুল্লাহ ইবনে হুজাইফা বলা হয়, তিনি দাঁড়ালেন এবং বললেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার পিতা কে?রাসূল (দ.) বললেন:তোমার পিতা অমুক অতঃপর সে তার পিতাকে ডাকলেন। অতঃপর হযরত উমর(রা)প্রিয় নবীজীর প্রতি দাঁড়ালেন এবং প্রিয় নবীজি (দ.) এর কদম মোবারকে চুম্বন করলেন এবং বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ!আমরা আল্লাহকে রব হিসেবে, আপনাকে নবী হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে, কোরআনকে ইমাম হিসেবে পেয়ে খুশি, আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আল্লাহর তরফ থেকে আমাদের ক্ষমা করবেন। [তাফসীরে ইবনে কাছির, সূরা মায়েদা-১০১ নং আয়াত(২৮৪)। তাফসীরে তাবারী, ১২৮০১-তাফসীরে আবী হাতেম, ৬৮৮২-ফাতহুল বারী, ৭২৯২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়]
হাদিসের মান-মুরছাল, সহীহ্- ছিক্বাহ রাবীর মুরছাল রেওয়ায়াত হুজ্জত বা দলিল হিসেবে স্বীকৃত।
[তাদরিবুর রাবী]
হাদিস নং-০৬
حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ قَالَ: حَدَّثَنَا مَطَرُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْأَعْنَقُ قَالَ: حَدَّثَتْنِي امْرَأَةٌ مِنْ صَبَاحِ عَبْدِ الْقَيْسِ يُقَالُ لَهَا: أُمُّ أَبَانَ ابْنَةُ الْوَازِعِ، عَنْ جَدِّهَا، أَنَّ جَدَّهَا الْزَّارِعَ بْنَ عَامِرٍ قَالَ: قَدِمْنَا فَقِيلَ: ذَاكَ رَسُولُ اللَّهِ، فَأَخَذْنَا بِيَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ نُقَبِّلُهَا
ওয়াজে ইবনে আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমরা (আবদুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধিদল মদীনায়) পৌছলে বলা হলো, ইনিই আল্লাহর রাসূল (সাঃ)। আমরা তাঁর হস্তদ্বয় ও পদদ্বয় ধরে তাতে চুমা দিলাম।
[আদাবুল মুফরাদ, ৯৭৫]
হাদিস নং-০৭
হযরত জায়েদ ইবনে ছাবেত(রা) থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন:হযরত সা’দ ইবনে উবাদা(রা)ও তাঁর সন্তান সহ রাসূল (দ.) এর কাছে গেলেন ও সালাম পেশ করলেন। রাসূল (দ.) বললেন:এখানে ডানদিকে বসুন এবং আরো বললেন:আনছারদেরকে স্বাগতম!অতঃপর তাঁর সন্তান রাসূল (দ.) এর অনুমতিক্রমে কাছে গেল এবং রাসূল (দ.) এর হাত ও পা চুম্বন করল।
[ইমাম হিন্দি, কানজুল উম্মাল, ৩৭৯৫৩-ইমাম ছিয়তি জামেউল আহাদিস, ৩৭৮৩৪]
ফোকাহ ও উলামায়ে কেরামের অভিমত-
১. ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম(রহ.)এর দৃষ্টিতে কদম বুচি’-
وقال أحمد بن حمدون القصار:رأيت مسلم بن الحجاج جاء إلي البخاري فقبل بين عينيه وقال:دعني أقبل رجليك يا أستاذ الأستاذين, وسيد المحدثين, وطبيب الحديث في علله.
ইমাম আহমদ ইবনে কাচ্ছারু(রহ.)বলেন:আমি দেখলাম যে, ইমাম মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ(রহ.) ইমাম বুখারী(রহ.) এর কাছে এসে তাঁর দুই চোখের মাঝখানে চুম্বন করলেন এবং বললেন হে সায়্যেদুল মোহাদ্দেছীন, সকল উস্তাদের উস্তাদ, ইলালে হাদিসের পবিত্র ব্যক্তি!আমাকে অনুমতি দিন আমি আপনার পা চুম্বন করব। [সুবহানাল্লাহ]
[বুখারী মুকাদ্দামা, ইমাম যাহাবী:তারিখুল ইসলাম, ১৯তম খন্ড, ২৪৭পৃ:;, ইবনে কাছীর:আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, তারিখে বাগদাদ, তাহজিবে আসমা ওয়াল লুগাত, সিয়ারে আলামী নুবালা, ১০ম খন্ড, ১০২পৃ]
এখান থেকেও প্রমাণ হয়ে যায় কদম বুচি’যায়েজ। কেননা, কদম বুচি’যদি নাজায়েজ হতো তাহলে কি ইমাম মুসলিমের মতো ব্যক্তি ইমাম বুখারীর মতো ব্যক্তির নিকট কদম বুচির’অনুমতি চাইতেন?
২. ইমাম নববী(রহ.)এর অভিমত-
إذا أراد تقبيل يد غيره, إن كان ذلك لذهده وصلاحه أو علمه أو شرفه وصيانته أو نحو ذلك من الإذا أراد تقبيل يد غيره, إن كان ذلك لذهده وصلاحه أو علمه أو شرفه وصيانته أو نحو ذلك من الأمور الدينية, لم يكره, بل يستحب.
-যদি কারো পরহেজগারি, যোগ্যতা, ইলিম, ভদ্রতা, সত্যবাদিতা ও দ্বীনি কার্যকলাপ দেখে হাত ও পা চুম্বন করে তবে মাকরুহ হবে না বরং মুস্তাহাব হবে। [সুবহানাল্লাহ]
[আল আজকার, ২৬২পৃ: ৭৫০নং হাদিসের ব্যাখ্যায়]
৩. ইমাম শাহাবুদ্দিন খুফফাজী(রহ.) এর অভিমত-
إذا أراد تقبيل يد غيره, إن كان ذلك لذهده وصلاحه أو علمه أو شرفه وصيانته أو نحو ذلك من الإذا أراد تقبيل يد غيره, إن كان ذلك لذهده وصلاحه أو علمه أو شرفه وصيانته أو نحو ذلك من الأمور الدينية, لم يكره, بل يستحب.
-যদি কারো পরহেজগারি, যোগ্যতা, ইলিম, ভদ্রতা, সত্যবাদিতা ও দ্বীনি কার্যকলাপ দেখে হাত ও পা চুম্বন করে তবে মাকরুহ হবে না বরং মুস্তাহাব হবে। [সুবহানাল্লাহ] [নাছিমুর রিয়াদ্ব, ৩য় খন্ড, ৪৮পৃ]
৪-মাওলানা রশিদ আহমদ গাংগুহী(রহ.)এর অভিমত-
“আপনে দুনু হাতমে জারিয়া কদম বুচি কারনা ইয়ে বিদয়াত হায়, বারনিকী আপনে দুনু হুটুকে জরিয়া কদম বুচি কারনা ইয়ে সুন্নাতে ছাবিতছে” [ফাতাওয়ায়ে রশিদিয়া, পুরনো ছাপ, ৫৪পৃ] অতএব যুগশ্রেষ্ট ইমামগণও কদম বুচিকে জায়েজ বলেছেন।
৫. কদম বুচি’যে জায়েজ সেজন্য ইমাম বুখারী তিনার আল আদাবুল মুফরাদ”এই কিতাবে একটি অধ্যায় নামকরণ করেছেন-
باب تقبيل الرجل
-কদম বুচি বা পদ চুম্বন.
[আদাবুল মুফরাদ, ৯৭৫]
৬. কদম বুচি’যে জায়েজ সেজন্য ইমাম তিরমিজি তিনার সুনানে তিরমিজি শরীফ-এ একটি অধ্যায় নামকরণ করেছেন-
باب ماجاءقبلة اليد والرجل
-হাত ও পা চুম্বন অধ্যায়।
[সুনানুত তিরমিজি, ২য় জি: ১০২পৃ]
৭. কদম বুচি’যে জায়েজ সেজন্য ইমাম আবী দাউদ সিজিস্তানি(রহ.)তিনার সুনানু আবী দাউদ-এ একটি অধ্যায় নামকরণ করেছেন-
باب في قبلة الرجل
-পা চুম্বন এর অধ্যায়। [সুনানু আবী দাউদ, ২য় জি: ৭০৯পৃ]
যুক্তি খন্ডন-যিনারা কদম বুচিকে নাজায়েজ বলেন তিনার কোন দলিল উপস্থাপন করতে পারেন না তবে তিনারা একটি যুক্তি প্রায়ই প্রদান করে থাকেন যে, কদম বুচি’করলে মাথা নত হয়, আর মাথা নত হলে সেজদার মতো দেখায় বা সেজদা হয়ে যায়।
উত্তর-আসলে তিনাদের এই যুক্তি যথার্থ নয় বরং রাসূলের হাদিসের সাংঘর্ষিক। কেননা মাথা নত হলেই সেজদা হয় না। বরং সেজদা হতে হলে ৭-৮টি অঙ্গ মাটিতে লাগতে হবে। এ বিষয়ে একটি হাদিসে পাক লক্ষ করুন-
حَدَّثَنَا قَبِيصَةُ، قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ، عَنْ طَاوُسٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أُمِرَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ يَسْجُدَ عَلَى سَبْعَةِ أَعْضَاءٍ، وَلاَ يَكُفَّ شَعَرًا وَلاَ ثَوْبًا الْجَبْهَةِ وَالْيَدَيْنِ وَالرُّكْبَتَيْنِ وَالرِّجْلَيْنِ.
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা করতে এবং চুল ও কাপড় না গুটাতে নির্দেশিত হয়েছিলেন। (অঙ্গ সাতটি হল) কপাল, দু’হাত, দু’হাঁটু ও দু’পা। [বুখারী, ৮০৯-ইবনে মাজাহ, ৮৮৩-নাসাঈ, ১০৯৬-আবী দাউদ, ৮৯০]
অতএব, সহীহ হাদিসের আলোকে জানলাম যে, সেজদা হতে হলে ৭-৮টি অঙ্গ মাটিতে লাগতে হবে। আমরা যখন কদম বুচি করি তখন এই ৭-৮টি অঙ্গ মাটিতে লাগে না। অতএব তিনাদের এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। মনে রাখবেন-যুক্তির নাম ইসলাম নয়।
আর বুখারীর ১ম হাদিস আমরা সবাই জানি-
إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ-
-সমস্ত কাজ নিয়তের উপর।
উপসংহার
কদম বুচি’এটা শরিয়তের উছুল তথা কোরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াস হতে প্রমাণীত, সলফে সালেহীন থেকে প্রমাণীত, সাহাবায়ে কেরামের আমলকৃত ও স্বয়ং রাসূল (দ.) এর অনুমতি দানকৃত আমল। এটা জায়েজ তো বটেই বরং সুন্নাতে সাহাবা। পরিশেষে পবিত্র কোরআন এর সেই আয়াত দ্বারা শেষ করব-
لَقَد كانَ لَكُم فى رَسولِ اللَّهِ أُسوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَن كانَ يَرجُوا اللَّهَ وَاليَومَ الءاخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثيرًا
অর্থাৎ, আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। [সূরা আহযাব, আয়াত নং-২১]
লেখক: মো: উসমান গাজী, শ্রীমঙ্গল উপজেলা, সিলেট।