চাশতের সালাত | Senani News
লেখক- মোহাম্মদ উসমান গাজী

নফল সালাত মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামিনের নিকট সুন্নাত সালাতের পর অধিক মর্যাদার, অধিক ফজিলতের ও মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। নফল সালাতের মধ্যে অধিক ফজিলতপূর্ণ নফল সালাতের মধ্যে “চাশতের সালাত” একটি। চাশতের সালাত সম্পর্কে একটি হাদিসে পাক লক্ষ করুন-
حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ، حَدَّثَنَا عَبَّاسٌ الْجُرَيْرِيُّ ـ هُوَ ابْنُ فَرُّوخَ ـ عَنْ أَبِي عُثْمَانَ النَّهْدِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، رضى الله عنه قَالَ أَوْصَانِي خَلِيلِي بِثَلاَثٍ لاَ أَدَعُهُنَّ حَتَّى أَمُوتَ صَوْمِ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَصَلاَةِ الضُّحَى، وَنَوْمٍ عَلَى وِتْرٍ.
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার খলীল ও বন্ধু [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাকে তিনটি কাজের ওসিয়ত (বিশেষ আদেশ) করেছেন, মৃত্যু পর্যন্ত তা আমি পরিত্যাগ করব না। (তা হলঃ) ১. প্রতি মাসে তিনদিন সিয়াম পালন করা। ২. সালাতুয-যোহা (চাশত এর সালাত আদায় করা)। ৩. বিত্র (সালাত) আদায় করে শয়ন করা। [বুখারী- মুসলিম-তিরমিযী-নাসায়ী-আবু দাউদ-আহমদ-দারেমী ]
সময়
চাশতের সালাতের সময় হলো, সূর্য উঁচু হওয়া থেকে সূর্য গড়িয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এবং উত্তম হলো বেশি রোদের সময় পড়া। এ বিষয়ে একটি হাদিসে পাক লক্ষ করুন-
عَن زَيدِ بنِ أَرْقَم رضي الله عنه: أنَّهُ رَأَى قَوْماً يُصَلُّونَ مِنَ الضُّحَى، فَقَالَ: أَمَا لَقَدْ عَلِمُوا أَنَّ الصَّلاَةَ فِي غَيْرِ هَذِهِ السَّاعَةِ أَفْضَلُ، إِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «صَلاَةُ الأَوَّابِينَ حِيْنَ تَرْمَضُ الفِصَالُ». رواه مسلم
যায়দ ইবন আরক্বাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা তিনি দেখলেন, একদল লোক চাশ্তের নামায পড়ছে । তিনি বললেন, ‘যদি ওরা জানত যে, নামায এ সময় ছাড়া অন্য সময়ে পড়া উত্তম । আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আওয়্যাবীন নামাযের সময় হলো-যখন উটের বাচ্চা গরম অনুভব করে। [এখানে,আওয়্যাবীন দ্বারা চাশতের সালাত উদ্দেশ্য] (মুসলিম-আহমদ-দারেমী)
নিয়ম
চাশতের সালাতের নিয়ম হচ্ছে দুই রাকা’ত অথবা দুই রাকা’ত করে চার রাকাত। আর কেউ যদি বেশি পারেন পড়তে পারেন। এ বিষয়ে একটি হাদিসে পাক লক্ষ করুন-
وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي الضُّحَى أَرْبَعاً، وَيَزِيدُ مَا شَاءَ الله . رواه مسلم
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চাশ্তের চার রাকআত নামায পড়তেন এবং আল্লাহ যতটা চাইতেন সেই মত তিনি আরও বেশী পড়তেন ।’ [মুসলিম-তিরমিজি-ইবনে মাজাহ-আবী দাউদ-আহমদ-মুয়াত্তা মালেক-নাসায়ী-দারেমী]
ফযিলত
চাশতের সালাতের ফযিলত অতুলনীয়।প্রথমত এটা নফল সালাত,আর নফল সালাতের ফযিলত তো পূর্বে বর্ণনা করেছি। আরেক ফযিলত হচ্ছে, আমাদের দেহে যে গ্রন্থি রয়েছে যে জোড়াগুলা রয়েছে, সেই প্রত্যেক গ্রন্থির জন্য সাদকা করা জরুরি আর চাশতের সালাতের মাধ্যমে সেই সাদকা আদায় হয়। নিম্নে হাদিসের আলোকে তোলে ধরা হলো। এ বিষয়ে একটি হাদিসে পাক লক্ষ করুন-
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ، عَنْ عَبَّادِ بْنِ عَبَّادٍ، ح وَحَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، – الْمَعْنَى – عَنْ وَاصِلٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ عُقَيْلٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ يَعْمُرَ، عَنْ أَبِي ذَرٍّ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلاَمَى مِنِ ابْنِ آدَمَ صَدَقَةٌ تَسْلِيمُهُ عَلَى مَنْ لَقِيَ صَدَقَةٌ وَأَمْرُهُ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ وَنَهْيُهُ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ وَإِمَاطَتُهُ الأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ صَدَقَةٌ وَبُضْعَةُ أَهْلِهِ صَدَقَةٌ وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ كُلِّهِ رَكْعَتَانِ مِنَ الضُّحَى.
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আদম সন্তানের শরীরের প্রতিটি অস্থি প্রতিদিন নিজের উপর সদাক্বাহ ওয়াজিব করে। কারোর সাক্ষাতে তাকে সালাম দেয়া একটি সদাক্বাহ। সৎ কাজের আদেশ একটি সদাক্বাহ, অন্যায় হতে নিষেধ করা একটি সদাক্বাহ। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা একটি সদাক্বাহ। পরিবার-পরিজনের দায়-দায়িত্ব বহন করা একটি সদাক্বাহ। আর চাশতের দু’ রাক’আত সলাত এসব কিছুর পরিপূরক হতে পারে। (সুবহানাল্লাহ) [মুসলিম-আবী দাউদ-রিয়াদু সালেহীন]
চাশতের সালাতের ভিত্তি পবিত্র হাদিসে পাকে রয়েছে ও এর ফজিলতও অনেক। যা আমরা পূর্বের আলোচনায় বুঝতে পেরেছি। যখনই সময় হবে আমরা চাশতের সালাত আদায়ের চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।
মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে বোঝার ও আমল করার তৌফিক দিন,আমিন। পরিশেষে মহান আল্লাহ তা’লার সেই পবিত্র বাণী দিয়ে শেষ করব-
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا.
অর্থ রাসুল (সা) তোমাদের জন্য যা আনয়ন করেন তা গ্রহণ করো ও যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক। [সূরা হাশর, আয়াত-০৭]