জঙ্গিবাদ ইসলাম নয়; বরং সৃষ্টির সেবায় ইসলাম

এম সাইফুল ইসলাম নেজামী

জিহাদের নামে শান্তির ধর্ম ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে একদল ইসলামের চিরশত্রু, ইহুদি-নাসারাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী। হুজুরের অবয়বে কিছু বিপদগামী ইসলামকে কলুষিত করেই যাচ্ছে। ইসলাম রক্ষার নামে যখন মসজিদে আগুন দেয়; দ্বীন বাঁচানোর নামে যখন মানুষ খুন করে; ইসলামকে ঢাল, আর বিধর্মী রাষ্ট্রপ্রধানকে ইস্যু বানিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসকে যখন কথিত ঈমানী চেতনা আখ্যা দেওয়া হচ্ছে; ইসলামের দরদী সেজে নিজ স্বার্থ হাসিলের প্রতিযোগিতায় মেতেছে যখন ধর্মব্যবসায়ীরা; হানাহানি-মারামারি, জ্বালাও-পোড়াও করে দ্বীনের প্রকৃত সংজ্ঞাটাই পরিবর্তন করে দেওয়ার পায়তারাই তাদের সিলেবাস।

মানব মনে আজ আতংক। করোনা মহামারীর চেয়েও ভয়ংকর জঙ্গি-সন্ত্রাস। জাহান্নামের ভয় দেখিয়ে কোমলপ্রাণ শিশুদের সাথে বলৎকার, আর অর্থের লোভ দেখিয়ে অন্যের বউ ভাগিয়ে নেওয়ার সংস্কৃতিতে সমাজ যখন অসুস্থ; একদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ; অন্যদিকে কওমী সম্প্রদায়ের স্বার্থ হাসিল ও সহিংস আন্দোলনে যখন জনমনে ভীতিকর পরিস্থিতি; মসজিদের মাইকে মুসলমানদের কাফের ঘোষণার চর্চায় যখন সচেতন মানুষ বিরক্ত; ঠিক তখনই দ্বীনের প্রকৃত মর্মবাণী নিয়ে হাজির সুফিবাদী ইসলাম। যে ইসলামে আছে ‘সালাম’- শান্তি, আর শান্তি। বেঁচে থাকার অবলম্বন। ক্ষুধার্তের মুখে অন্য তুলে দেওয়াই তো ইসলাম। রোজাদারের মুখে ইফতার তুলে দেওয়ার নামই তো ইসলাম। মুমূর্ষুকে সারিয়ে তোলাই তো ইসলাম। রোগীর সেবাতে যে ইসলাম আছে, তা কি তোমার হানাহানিতে পাওয়া যাবে? সৃষ্টির সেবার নাম ইসলাম। অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ এর নাম ইসলাম নয়, বরং সন্ত্রাসবাদ।

ইসলাম এসেছে সন্ত্রাসবাদকে ধ্বংস করতে। তুমি যে মাজার ভেঙে দেওয়ার হুমকি দাও, সে মাজারওয়ালারাই এগিয়ে এসে ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে মানুষের জীবন গড়ার স্বপ্ন নিয়ে। মানবতার সেবা শেখাতে। তুমি যে মাজারে শিরিকের গন্ধ পাও, সে মাজার থেকেই তৌহিদ-রিসালতের নিশান ওঠে। মাজারওয়ালারাই মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান করা শেখায়।  মাজারওয়ালাই এ দেশে ইসলাম এনেছে। তাঁদের হাতেই এ ইসলাম নিরাপদ। তুমি কোন ঠিকাদার? মসজিদে আগুন দিয়ে ইসলাম রক্ষা কর? আরে ভাই সোনার মদিনা থেকে যে সূর্য আলো ছড়াচ্ছে, সে সূর্যের এক একটি পাওয়ার হাউস হলো এক একটি হক্কানি দরবার।

গাউসুল আজম মাইজভান্ডারির প্রজ্জ্বলিত মানবতার চেরাগ আলোকিত করেছে দিগ-দিগন্ত। পাকিস্তানের হরিপুর পাহাড়ের চূড়ায় সিরিকোট শরীফ থেকে যে নুর বর্ষণ হচ্ছে, তা শুধু পাকিস্তানে নয়; বরং সে নূরের রশ্মি কায়েনাতকে আশান্বিত করেছে। বাঁচার প্রেরণা যুগিয়েছে। দিয়েছেন মুক্তির নিশ্চয়তা।

হুজুর গাউসে জমান, মুজাদ্দিদে জমান, হাফেজ ক্বারি সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ (রহ.)’র গাউসিয়া কমিটি করোনার শুরু থেকে মানবতার সেবায় যে অবদান রেখেছেন তা নতুন করে বর্ণনার অবকাশ রাখে না। করোনাকালিন সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কর্মসূচি মৃতের দাফন-কাফন ও সৎকার। এ কাজে সর্বোচ্চ সাহসিকতা ও মানবতার পরিচয় দিয়ে গাউসিয়া কমিটি এযাবৎ ২০৯০ জনের দাফন-কাফন এবং ৩১ জনের সৎকার করেছেন। যখন নিজের মানুষরা দূরে তখন গাউসিয়া কমিটি পরম ভালোবাসার পরিচয় দিয়েছেন। রোগিদের জন্য অক্সিজেন সেবা, এম্বুলেন্স সার্ভিস, করোনা টেস্ট, পরিচ্ছন্ন কর্মসূচি, সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবায়, আর্থিক অনুদান, সারা দেশের শাখা কমিটি কর্তৃক অসহায়দের ত্রাণসামগ্রী প্রদানসহ বিবিধ জনহিতকর কার্যে গাউসিয়া কমিটির অবদান অনস্বীকার্য। দরবারে সিরিকোট থেকে পরিচালিত গাউসিয়া কমিটি আবারও ঘোষণা দিয়েছেন এ লকডাউনে দেড় লক্ষ পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের শত্রুরা ইসলামের নামে যখন দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে জনমনে আতংকের জন্ম দিচ্ছে; ঠিক তার উল্টোপাশে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস মানবতার সংগঠন গাউসিয়া কমিটি করোনা রোগির দাফন কাজে ব্যস্ত। বিশ্ব সভায় যখন ইসলাম মানে জঙ্গিবাদ বোঝাতে একদম উঠেপড়ে লেগেছে দ্বীনের শত্রুরা, ঠিক তখনই বিধর্মীদের বাড়ি-বাড়ি ত্রাণসামগ্রী নিয়ে উপস্থিত দ্বীনের প্রকৃত উপস্থাপকরা। গত ২২ চৈত্র গাউসুল আজম বাবা ভান্ডারী (ক)’র ওরশ মোবারকে আসা সব হাদিয়া মানবতার সেবায় উৎসর্গ করে দেওয়ার যুগান্তকারী ঘোষণা দিয়ে দ্বীনের প্রকৃত নির্যাসে ভরিয়ে দিয়েছেন আউলাদে রাসূল (দ.), মাইজভান্ডার বাগে ফুটন্ত গোলাপ, রাহবারে আলম হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ হাসান মাইজভান্ডারি ‘মওলা হুজুর’ (মা.জি.আ)। এটাই ইসলাম। এটাই দ্বীন। ইসলাম মানে কেড়ে নেওয়া নয়। ইসলাম মানে ভরিয়ে দেওয়া।

অবশ্য, করোনার শুরু থেকে মাইজভান্ডারি গাউসিয়া হক কমিটিও মানবতার সেবায় প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছেন। এছাড়াও সারাদেশে পিছনে পরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা, বেকারের কর্মসংস্থান, যৌতুকমুক্ত বিবাহের সহযোগিতাও চলমান। ইতোমধ্যে গাউসুল আজম বাবা ভান্ডারীর গর্বিত আউলাদ, ওয়াল্ড সুফিজমের প্রেসিডেন্ট, তরিকায়ে মাইজভান্ডারির অন্যতম দিকপাল সৈয়দ মাওলানা মুহাম্মদ সাইফুদ্দীন আহমেদ আল-হাসানী (মা.জি.আ) প্রতিষ্ঠিত হযরত সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ মাইজভা-ারী ট্রাস্টের উদ্যোগে সারাদেশে দুই লক্ষ পরিবারকে দিচ্ছেন সাহরি ও ইফতার সামগ্রী। এটাই আসল মানবতা।

ইসলাম মানে অসহায়ের মুখে হাসি ফুটিয়ে দেওয়া। ফরমানে মোস্তফা (দ.) হলো রোজাদারকে ইফতার করানো রোজাদারের সমপূণ্য হাসিল করা। শুধু এ কয়েকটি সংগঠন নয়; বরং সুফিবাদী সুন্নি সংগঠনগুলো নিজ অবস্থান থেকে মানবতার সেবায় অবদান রেখে যাচ্ছেন। জয় হোক মানবতার। জয় সুনিশ্চিত ইসলামের। সুফিবাদীরাই জাতির সম্মুখে কর্মময় ধর্ম ইসলামকে সঠিক রিপ্রেজেন্ট করছেন।

Related Articles

Back to top button
close