তারাবীহ’র মাধ্যমে খতমে কুরআন | সেনানী নিউজ

মাহে রমযানে তারাবীহ’র মাধ্যমে একবার কুরআন খতম করা তথা খতমে তারাবীহ পড়া সুন্নাত । দুইবার খতম করা উত্তম আর তিনবার খতম করা অতি উত্তম। কোন কোন ফোকাহা ও ওলামায়ে কেরামের মতে ২৬’শে রমযান তথা ২৭ তারিখ রাতে কুরআন খতম করা উত্তম। যাতে শবে কদরের বরকত অর্জিত হয়। কেননা অধিকাংশ মুহাদ্দেসীনে কেরাম হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, ২৭ তারিখের রাতেই শবে কদর নিহিত রয়েছে।

বর্ণিত আছে যে, ইমাম আযম আবু হানিফা (র.) রমযান মাসে ৬১টি বার কুরআন খতম করতেন । ৩০ খতম দিনে, ৩০ খতম রাতে এবং ১ খতম তারাবীহ’র মাধ্যমে করতেন। (মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ)

এমনিতো তেলাওয়াতে কুরআনে অনেক সওয়াব রয়েছে। তাছাড়া মাহে রমযানে তারাবীহ নামাযের মাধ্যমে তেলাওয়াতের ফযিলত অনেক বেশী যা বর্ণনাতীত। কুরআন তেলাওয়াতকারী ও শ্রবণকারী উভয় সমান সওয়াবের অধিকারী। সুতরাং তারাবীহ নামাযে হাফিয সাহেবান তেলাওয়াত করে যা সাওয়াব পাবেন মুক্তাদীরা শুনে ততটুকু সওয়াবের অধিকারী হবেন। হাদিস শরীফে আছে-

عن ابن مسعود قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من قرأ حرفا من كتاب الله فله به ৷ حسنة، والحسنة بعشر أمثالها، لا أقول الم ولام حرف ، ولكن ألف حرف ولام حرف وميم حرف

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- যে ব্যক্তি কিতাবুল্লাহর একটি হরফ পড়বে তার জন্য উহার বিনিময়ে একটি নেকী দেয়া হবে। আর প্রতিটি নেকীর সওয়াব দশগুণ দেয়া হবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- الم কে আমি একটি হরফ বলছি না। বরং তন্মধ্যে ا একটি হরফ ل একটি হরফ م একটি হরফ। (মিশকাত)

এতে বুঝা যায়, শুধু الم ত্রিশটি নেকী বা সওয়াব পাওয়া যায়। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী। কুরআন তেলাওয়াত করা মানে স্বয়ং আল্লাহর সাথে কথা বলা। সুতরাং তেলাওয়াতের অনেক সওয়াব ও উপকারিতা রয়েছে যা রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।তম্মধ্যে কুরআন তেলাওয়াতের বিশেষ ফযিলত রয়েছে। যেমন হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে,

عن عائشة رضي الله عنها،أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: ” قراءة القرآن في الصلاة أفضل من قراءة القران في غير الصلاة، وقراءة القران في غير الصلاة افضل من التكبير والتسبيع ، والاسبيح افضل من الصد قة، والصدقة أفضل من الصوم والصوم جنة من النار

হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন এখন করেন, নামাযের মধ্যে ব্যতীত কুরআন তেলাওয়াতের চেয়ে নামাযের মধ্যে কুরআন তেলাওয়াত উত্তম। তাসবীহ এবং তাকবীরের চেয়ে নামাযের মধ্যে ব্যতীত কুরআন তেলাওয়াত করা উত্তম। আর সদকার চেয়ে তাসবীহ উত্তম, (নফল) রোযার চেয়ে সাদকা উত্তম। রোযা দোযখের আগুন থেকে বাঁচার ঢালস্বরূপ।(মিশকাত)

তারাবীতে কুরআন তেলাওয়াত নামাযের মধ্যেই হয়ে থাকে যেটাকে হাদিস শরীফে উত্তম বলা হয়েছে। সুতারাং এমন উত্তম এবাদত যেন অবহেলার দরুন আমাদের হাত ছাড়া না হয়। যারা নিয়মিত তারাবীহ’র মাধ্যমে খতমে কুরআন আদায় করবে তাদের জন্য রয়েছে অগণিত সাওয়াব। উপরে বর্ণিত হাদিস শরীফের আলোকে বলা হয় যে, কুরআনের একটি হরফ পাঠ করলে দশটি নেকী দেয়া হবে। পবিত্র কুরমানে মোট হরফের সংখ্যা =৩,৬৬,৩৯২টি। প্রতিটি হরফের পরিবর্তে দশটি নেকীর ভিত্তিতে এ সংখ্যাকে দশ দিয়ে গুণ দিলে নেকীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬,৬৩,৯২০। উপরে বর্ণিত হাদিস শরীফে বলা হয়েছে আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক নেকীর সওয়াব সাতশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। এ হিসাবে উপরের সংখ্যাকে সাতশ গুণ দিয়ে গুণ দিলে নেকীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫৬,৪৭,৪৪০০০ দুইশ ছাপ্পান্ন কোটি সাত চল্লিশ লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার। সুতরাং, তারাবীহর মাধ্যমে কুরআন খতম করলে উপরে বর্ণিত বিপুল পরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে।

সূত্র- বারো মাসের আমল ও ফযিলত 

Related Articles

Back to top button
close