‘দাওয়াতে খায়র’ সময়ের প্রত্যাশিত মাহফিল

লেখকঃ কাজী মঈনুদ্দীন হায়াত

মাহফিল সংস্কৃতিতে যে আমূল একটা শুদ্ধতা খুবই প্রয়োজনীয় তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নিঃসন্দেহে চলমান গতানুগতিক ধারার ওয়াজ মাহফিল গুলোতে পরিবর্তন চান না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। সহিহ ত্বরিকা মতে বিবেচনা করলে মাহফিলগুলোতে এখন তেমন একটা সুস্থতা খুঁজে পাওয়া যায় না।

ওয়াজ-মাহফিলের উদ্দেশ্য মানবজাতির হেদায়ত, ভালো কাজের তাগিদ অসৎ কাজের থেকে বিরত থাকার নসিহত। তবে এখনকার মাহফিল গুলোতে সেটা কতটুকুই বা বিদ্যমান তা বিচার করে দেখবেন! ওয়াজ-মাহফিলে যাওয়ার কথা; আল্লাহ, আল্লাহর রসুলের মোহাব্বতে। অন্ততপক্ষে নিজের ভিতরের হৃদয়কে একটু খোদামুখী করতে। একটা আমল শিখতে। সর্বোপরি ঈমানকে আরও বলিষ্ঠ করতে।

যদিও বলা হয়; এসবের আকর্ষণে মানুষ ওয়াজ মাহফিলে যায়। কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে মানুষ শুধুমাত্র সুরেলা বক্তার নাটকীয় সুরের আকর্ষণে মাহফিলে যায়। এখন হয়তো কেউ বলতে পারেন আলেমদের চেহেরা দেখাও তো সওয়াবের কাজ, ভালো কাজ। হ্যাঁ, অবশ্যই। তবে ওয়াজের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু তা নয়।

তাছাড়া এই মাহফিলগুলো থেকে সৃষ্ট বান্ডিল বান্ডিল মিডিয়া ফেৎনা প্রভাব ফেলছে সমাজে। বাড়াচ্ছে দূরত্ব। মানুষ আজ এই ফেৎনা নিয়েই ফ্যাসাদে লিপ্ত। নোংরা হতে শুরু করেছে নিষ্পাপ কোমল আত্মা গুলো। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও অমুখ হুজুর দ্বারা তমুখ হুজুরকে বাঁশ দেওয়ার ডায়লগ নকল করে টিকটক করছে৷ এসব কি আমাদের চাওয়া ছিল?

তো এমতাবস্থায় সমাধান কি মাহফিল বন্ধ করে দেওয়া ? অবশ্যই না। মাহফিলগুলোকে সুস্থ ধারায় ফেরাতে হবে। কিছুদিন আগে ফেসবুক স্ট্যাটাসে একজন ভাই একটি আইডিয়া দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ১৫-২০ জন একত্রিত হয়ে একজন ভালো আলেমকে এনে নিজেদের প্রয়োজনীয় আমলগুলো এবং জানতে চাওয়া বিষয়গুলো জেনে নেওয়া। এবং সাধ্যমতো সম্মানজনক হাদিয়া হুজুরকে প্রদান করা। এটি আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে এবং উপযুক্ত মনে হয়েছে।

খুশির বিষয় হচ্ছে এমন মাহফিল কিন্তু আছে। সাধারণ মানুষের নিকট যথাযথ প্রচার-প্রসার পেলে তা নিশ্চয় সকলের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। আর এমন মাহফিল এর স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা হলেন আউলাদে রাসুল (দঃ), পীরে বাঙাল, আল্লামা পীর সাবের শাহ (হাফি.)। আর সেটি হচ্ছে “দাওয়াতে খায়র”।

দাওয়াতে খায়র মানে “কল্যাণের দিকে আহ্বান”। দাওয়াত ই খায়র মাহফিলে কি হয় ? —প্রথমে কুরআন পাকের তেলাওয়াত ও নাতে মোস্তফা (দঃ) পাঠ করেন, তারপর প্রশিক্ষিত একজন আলেম কুরআন থেকে নির্দিষ্ট কোনো একটি বিষয়ের উপর ব্যাখ্যা দেন এবং সে বিষয়ে হাদিসে পাকের প্রাসঙ্গিক দরস দেন,অতঃপর কুরআন মাজিদের নির্দেশনা অনুযায়ী সৎকাজের প্রতি অনুপ্রেরণামূলক কিছু উপদেশ প্রদান করেন এবং বর্তমান সমাজে প্রচলিত অসৎকর্মের প্রতি অনুৎসাহমূলক কিছু নছিহত করেন।

থাকছে আল্লাহ্ তা’য়ালার ইবাদত কীভাবে নির্ভুলভাবে করবে সে বিষয়ে পরিপূর্ণ গাইডলাইন। যেমন: প্র্যাক্টিক্যাল নামাজ শিক্ষা। যা গতানুগতিক ধারার ওয়াজ মাহফিল গুলোতে কখনো সম্ভব না।

সর্বশেষ মহান রবের নিকট প্রার্থনার মাধ্যমে মাহফিল সমাপ্ত হয়।

গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ এর ব্যবস্থাপনায় নির্দিষ্ট এলাকা ভিত্তিক কিংবা যেকোনো মসজিদে আয়োজন করা হয়ে থাকে দাওয়াতে খায়র মাহফিল। একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর চলতে থাকে দাওয়াতে খায়র মাহফিল। এতে সুবিধা হলো রুটিনমতো আগানো যায়। অর্থাৎ এই দরসে ফজরের নামাজের বয়ান হলে আগামী দরসে জোহরের। এরকম একটি ধারাবাহিকতা থাকে। ঠিক যেমন শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে একটি ধারাবাহিক পাঠ নেয়।

চিন্তা করুন, এই পদ্ধতি কত সুন্দর! সুস্থ। ধারাবাহিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় দ্বীনি ইলম, আমলের শিক্ষা আমরা এখান থেকে পেতে পারি।

আমি মনে করি বর্তমানের সময়োপযোগী প্রত্যাশিত মাহফিলের ধরণ হলো এই “দাওয়াত-ই-খায়র”। শ্রম, মেধা, অর্থ সর্বোপরি সাধ্য মতো সকল চেষ্টা দিয়ে পাশে থাকুন সত্যে ও কল্যাণের পথের দাওয়াতি এই কার্যক্রমে।

সত্যকে জানাতে সত্যে ও কল্যাণের এই আহ্বান রন্ধ্রে-রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ুক, এই কামনা।

Related Articles

Back to top button
close