শাওয়ালের ছয় রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত
মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

আলহামদুলিল্লাহ। মহান আল্লাহ মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁরই ইবাদতের জন্য। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেছেন, ‘আমি জিন ও মানবজাতিকে একমাত্র আমারই ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত নং ৫৬)
আল্লাহ তায়ালার একান্ত ইচ্ছা তাঁর প্রত্যেক বান্দা তাঁরই ইবাদত সম্পন্ন করার মাধ্যমে ইহ ও পরকালীন জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে। ইবাদত মূলত দুই প্রকার। ফরজ ইবাদত; যেমন- নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি। নফল ইবাদত; যেমন- নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, দুরুদ শরীফ, দান-খয়রাত, নফল রোজা রাখা ইত্যাদি।
মানবজাতি মূলত তখনই মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রকৃত সম্মানিত ও প্রিয় হবে, যখন তার প্রতিটি কাজ হবে একমাত্র আল্লাহ তায়ালারই উদ্দেশে। সুখে-দুঃখে একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে, তাঁকেই ভালোবাসবে। তাঁরই নৈকট্য লাভের চেষ্টায় সব সময় ব্যস্ত থাকবে। ফরজ ইবাদত সু-সম্পন্ন করার সাথে সাথে নফল ইবাদতে অধিক মনোযোগী হবে। নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে নফল রোজা বান্দাকে অতি সহজেই মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেয়। কারণ, রোজা এমন একটি ইবাদত, যা জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঢালস্বরূপ এবং এর প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নিজেই দিয়ে থাকেন বলে হাদিসে কুদসীতে সুস্পস্টভাবে বলা হয়েছে।
রমজান চলে যাওয়ার পরও বান্দাহ যেন সিয়াম সাধনা অব্যাহত রাখেন সে জন্য প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩ থেকে ১৫ তারিখের রোজা, আশুরার রোজা, ৯ জিলহজ আরাফার দিনের রোজা, ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোজাসহ অন্যান্য নফল রোজার বিধান দিয়েছেন প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ফরজ নামাজের কমতিগুলো পুরণ করতে যেমন নফল নামাজ রয়েছে, তেমনি ফরজ রোজার পরও শাওয়ালের সুন্নত রোজা রয়েছে রমজানের পূর্ণতা প্রদান করতে। রোজাদার যদি অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি পাপাচার- কামাচার প্রভৃতি কাজ থেকে সম্পূর্ণ বাঁচতে না পারে, তাহলে তার রোজার সাওয়াব কমে যায়। আর কমতির সাওয়াব পূর্ণ করতেই শাওয়ালের ছয়টি রোজাসহ বছরজুড়েই রয়েছে নানা উপলক্ষে নফল রোজা।
এ শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজার মাধ্যমে রমজানের রোজার শুকরিয়া আদায় করা হয়। যখন কোনো বান্দার আমল আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন, তখন তাকে অন্য নেক আমলের তাওফিক দেন। সুতরাং এ রোজাগুলো রাখতে পারা রমজানের রোজা কবুল হওয়ার সু-লক্ষণও বটে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এ রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কিরামদের রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। জলীলুল ক্বদর সাহাবী হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’
(মুসলিম শরিফ, হাদিস নং ৮২২)।
এ হাদিসের ব্যখায় মুহাদ্দিসিনে কিরাম বলেন, রমজানের ৩০টি রোজার সঙ্গে শাওয়ালের ছয়টি রোজা যুক্ত হলে মোট রোজার সংখ্যা হয় ৩৬টি। আর প্রতিটি পুণ্যের জন্য ১০ গুণ পুরস্কারের কথা উল্লেখ রয়েছে কোরআনুল কারিমে। সুরা আনআমের ১৬০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি একটি পূণ্য কাজ করল, সে ১০ গুণ সাওয়াব পাবে।’ এ হিসাবে যে ব্যক্তি রমজানের এক মাস রোজা রাখল, সে ১০ মাস রোজা রাখার সাওয়াব পাবে। আর ছয়টি রোজার ১০ গুণ ৬০ দিন। অর্থাৎ দুই মাস। আর এ দুই মাস মিলে ১২ মাস রোজার সাওয়াব। তাহলে ৩৬টি রোজার ১০ গুণ হলে ৩৬০টি রোজার সমান (এটি পুরস্কারের দিক থেকে)। অর্থাৎ সারা বছর রোজার সমান সাওয়াব হবে।’ সুবহান আল্লাহ!!
হজরত সাওবান (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (দ.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এ হলো এক বছরের রোজা।
(নাসায়ি শরিফ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা. ১৬২)।
হজরত উবাইদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব?’ তখন রাসুলুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখো এবং রমজান-পরবর্তী শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখো, তাতেই সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে। ’ (তিরমিজি শরিফ, খন্ড, ১ পৃ. ১৫৭)।
নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর বান্দাহরা আল্লাহর বন্ধু হয়ে যান। তাই আসুন, আমরা যারা সুস্থ, আমরা আল্লাহর বেশী বেশী শুকরিয়া আদায় করি।
মহান আল্লাহ তায়ালা মাহে রমজানের ৩০টি রোজা রাখার তাওফিক দিয়েছেন এখন আমরা শাওয়ালের ছয়টি নফল রোজা আদায় করি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।
আমিন!! বিহুরমাতি সাইয়্যেদিল মুরছালিন।