হিজরি নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে রামুতে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল

খাজা ছফিউল্লাহ জাবেদ, রামু

হিজরি নববর্ষ উদযাপন পরিষদ রামুর ব্যবস্থাপনায় গতকাল (১১ আগস্ট’২১) বুধবার রামু হাসপাতাল গেইটস্থ মাসুমিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া মাদরাসায় পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার ছালামত উল্লাহর সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব আবদুল মালেকের সঞ্চালনায় হিজরি নববর্ষের গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিবছর রামু চৌমুহনী স্টেশন চত্বরে বড় পরিসরে আয়োজন হলেও এ বছর মহামারী করোনা ভাইরাস এর কারণে ও ধারাবাহিকতা রক্ষায় ছোট পরিসরে পালিত হয়।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন- মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের ও নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয়ে পরিচিতির ক্ষেত্রে হিজরি সন খুবই তাৎপর্য বহন করে। মুসলমানদের ইবাদাত বন্দেগী চন্দ্র তারিখের উপর নির্ভরশীল। ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ যেমন- রোজা ও হজ পালন করতে হয় হিজরি তারিখ তথা চাঁদের হিসেবের উপর। তাছাড়াও দুই ঈদ, মিলাদুন্নবী সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম, লাইলাতুল কদর, লাইলাতুল বরাত বা নিছফ মিন শাবান, লাইলাতুল মিরাজ, আশুরাসহ ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান হিজরি সনের উপর নির্ভরশীল। তাই ইসলামে এ দিনটি সমগ্র মুসলিম জাতির জন্য এক বিশেষ স্মারক।অথচ মুসলিম জাতি আজ এই মাসের শিক্ষা থেকে অনেক দূরে। এমনকি হিজরি সনের কথা আমরা খেয়ালও রাখি না বা রাখার প্রয়োজন অনুভব করি না। বিশ্বের অন্যান্য দেশের কথা বাদ দিয়ে যদি বাংলাদেশের কথা বলি তাহলে দেখা যায় এই বিশেষ দিনটিকে ঘিরে দেশে তেমন কোনো কর্মসূচি থাকে না। দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ সম্পাদকীয় প্রকাশ করে না। অনলাইন মিডিয়া কিংবা ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া গুলোতেও এ-সংক্রান্ত কোনো উদ্যোগ থাকে না।

আমরা আমাদের অতীত ঐতিহ্যের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে ইসলামের সংস্কৃতি ও গৌরবগাথাকে দূরে ঠেলে বিজাতীয় সংস্কৃতিকে লালন করছি যুগের পর যুগ। খ্রিষ্টীয় সালকে নিজেদের সংস্কৃতির অনুসঙ্গ বানিয়ে ’থার্টিফার্স্ট নাইট’ নামক এক বেলাল্লাপনার আসর জমে যায় বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীজুড়ে। অমুসলিম দেশগুলোতে তারা তাদের নিজস্ব ধাঁচে বা ঢংয়ে যেকোনো উৎসব পালন করুক কিন্তু মুসলমান হয়ে কীভাবে আমরা তা অন্ধ অনুকরণ করে যুগ-যুগান্তর লালন করি! একদিকে খ্রিষ্টীয় নববর্ষ আবার অন্যদিকে বাংলা নববর্ষের নামেও আমাদের দেশে ১ বৈশাখে আল্পনা আঁকা, নগ্নপদে নৃত্যোল্লাস, বিভিন্ন জীবজন্তুর মুখোশ পরাসহ বিজাতীয় সংস্কৃতির এক মহড়া হয়ে যায় যা মোটেও মুসলিম সংস্কৃতি কিংবা বাঙালি সংস্কৃতির অংশ নয়। আমরা সকলে আমাদের দ্বীনি ও দেশীয় সংস্কৃতি ভুলে বিজাতীয় সংস্কৃতির উদ্দামতায় গা ভাসিয়ে দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। অপরদিকে যারা মুসলমানদের এই সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে লালন করে দেশে সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চালু করতঃ বিজাতীয় সংস্কৃতির নগ্ন থাবা থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা চালায় তাদের কথা আমাদের প্রিন্ট মিডিয়া বলেন আর ইলেকট্রনিক মিডিয়া বলেন কেউ প্রচার করে না অথচ ‘থার্টিফার্স্ট নাইট’ এবং ‘বাংলা নববর্ষ’ উদযাপনে মিডিয়াগুলো থাকে ব্যতিব্যস্ত।

আসুন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের হিজরতের প্রেক্ষাপটকে স্মরণার্থে হিজরি নববর্ষ পালন করে আগামী প্রজন্মের কাছে ইসলামের ইতিহাস তথা সংস্কৃতিকে তুলে ধরি।তাই সময় এসেছে সম্মিলিতভাবে হিজরি নববর্ষ পালন করে বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করা এবং ইসলামি সংস্কৃতির বলয়ে নিজেদেরকে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। বিদায় হোক পুরাতন বছরের জীর্ণতা, অপূর্ণতা আর অসঙ্গতি। নতুন প্রত্যাশার ভেলায় চড়ে আসুক নতুন বছর, জেগে উঠুক সবাই নতুন উদ্দীপনায়। সত্য আর সুন্দরে ভাস্বর হয়ে উঠুক মানবতার ক্যানভাস।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজারকুল মাছুমিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া আলিম মাদরাসার আরবি প্রভাষক আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি এস এম আবদুল্লাহ শাহেদ।

প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হিজরি নববর্ষ উদযাপন পরিষদ রামুর কো-চেয়ারম্যান প্রভাষক আজিজুল ইসলাম। এবং অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন এস এম নিয়ামত উল্লাহ, খাজা মুহাম্মদ বাকি বিল্লাহ, এহসানুল হক, মাওলানা রহমত উল্লাহ, ছৈয়দ করিম শাহীন,এস এম ছফিউল্লাহ মুনির, হাফেজ মিজানুর রহমান, আবদুল্লাহ প্রমুখ।

আলোচনা সভা শেষে দেশ, জাতির সমৃদ্ধি কামনায় এবং করোনা মহামারী হতে দেশ ও জাতির মুক্তি কামনায় মুনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

Related Articles

Back to top button
close