যুগে যুগে মহান আল্লাহ তায়ালার মনোনীত মহামানব নবীগণ (আলাইহিমুস সালাম), সাহাবায়ে কিরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) এবং বুযুর্গানে দ্বীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহিম) আপন আপন মর্যাদা অনুযায়ী আল্লাহ্ তায়ালার রাস্তায় কোরবানী দিয়েছেন এবং কোরবানীর এই ধারাবাহিকতা আজও অব্যহত রয়েছে। বুযুর্গানে দ্বীন আল্লাহ্ তায়ালার পথে কখনো সম্পদ কোরবানী দিয়েছেন, কখনো জীবন উৎসর্গ করেছেন, কখনো রাজত্ব কোরবানী করেছেন, কখনো মন্ত্রীত্ব কোরবানী দিয়েছেন। মোটকথা যখন যেখানে যা কোরবানী করার প্রয়োজন হয়েছে তারা সেই জিনিসটিই আল্লাহ্ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনে কোরবানী করেছেন।

আম্বিয়ায়ে কিরামদের (আলাইহিমুস সালাম) মর্যাদা ও স্থান যেমন সমস্ত সৃষ্টি হতে উচ্চ ও উচ্চতর, তাঁদের উপর আসা পরীক্ষাও তেমনি কঠিন, তারা এই পথে আসা বিপদাপদকে আনন্দচিত্তে সহ্য করেছেন এবং আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে সফল হয়ে উচ্চ মর্যাদা অর্জন করেছেন। তাঁদের এমন মহান কোরবানী সমূহ কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের জন্য চলার পাথেয় স্বরূপ। আম্বিয়ায়ে কিরামগণ আলাইহিমুস সালাম শুধু আল্লাহ্ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্যই কঠিনতম সফর করেন নি বরং, কষ্ট সহ্য করেছেন, বাতিলের শক্তিকে পরাজিত করেছেন, নিজের শহর এবং দেশ থেকে হিজরত করেছেন, নিজের জীবনকে ওয়াক্ফ করে দিয়েছেন এবং যেখানে প্রয়োজন হয়েছে সেখানে নিজের পবিত্র প্রাণকেও বিসর্জন করে দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে- ঐসব লোক, যারা আল্লাহ্র আয়াত সমূহকে অস্বীকার করে এবং পয়গাম্বরগণকে অন্যায়ভাবে শহীদ করে এবং ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দাতাদেরকে হত্যা করে, তাদেরকে সুসংবাদ দিন বেদনাদায়ক শাস্তির! (সূরা আলে ইমরান: আয়াত -২১) হযরত সায়্যিদুনা আবু উবাইদা বিন জাররাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: হে আবু উবাইদা! বনি ইসরাঈল দিনের প্রথমাংশে ৪৩ জন নবীকে শহীদ করে দিয়েছে। আর দিনের শেষ অংশে তাদের সম্প্রদায়ের ঐ ১১২ জন মুত্তাকীকেও শহীদ করে দিয়েছে, যারা তাদেরকে নেকীর আদেশ দিতো, মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখতো। (জামেউল বয়ান, ৩/২১৬, নম্বর-৬৭৭৭)

 

হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর যুগে তাঁর শাহাজাদা হযরত সায়্যিদুনা হাবিল (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) আল্লাহ্ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে খোদাভীরুতা অবলম্বন করে প্রথমে নিজের সম্পদ (অর্থাৎ ছাগল) কোরবানী করার জন্য পেশ করেছেন, অতঃপর নিজের প্রাণ উৎসর্গ করে দিয়েছেন। (আজাইবুল কোরআন মাআ গারাইবুল কোরআন, ৮৫-৮৬ পৃ:; সীরাতুল জিনান, ২/৪১৬) ইরশাদ হচ্ছে: যখন তারা (হাবীল-কাবীল) উভয়ে কোরবানী করেছিল,তখন একজনের (হাবীল) পক্ষ থেকে তার কোরবানী কবুল করা হয়েছিল। (সূরা মায়েদা, আয়াত:২৭)

 

হযরত সায়্যিদুনা ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) আল্লাহ্ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শুধু নিজের সন্তান এবং পরিবারকে নির্জন মরুভূমিতে একা ছেড়ে দিয়ে মহা কোরবানীর সৌভাগ্য অর্জন করেছেন তাই নয়, বরং আল্লাহ্ তায়ালার পথে নিজের সন্তানকে উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করেননি। তিনি জিলহজ্ব মাসের ৮ তারিখ রাতে একটি স্বপ্ন দেখলেন, স্বপ্নে কোন বক্তা বলছেন: “নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা তোমাকে তোমার প্রিয় বস্তু (সন্তান) জবেহ করার নির্দেশ দিচ্ছেন।” ৯ তারিখ রাতে আবারো একই স্বপ্ন দেখলেন, ১০ তারিখ রাতে পুনরায় ঐ স্বপ্ন দেখার পর তিনি সকালে এই স্বপ্নের উপর আমল করার (ছেলেকে কোরবানি করার) দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেন। (সীরাতুল জিনান, ৫/১৮৩; তাফসীরে কবীর, ৯/৩৪৬) মরুর প্রান্তে হযরত ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম) কে শক্ত করে বেঁধে নিলেন, নিজের ছুরি ধারালো করলেন, উপুড় করে শুইয়ে দিলেন, তাঁর চেহারা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন এবং তাঁর গলায় ছুরি চালালেন, কিন্তু ছুরি তার কাজ করলো না অর্থাৎ গলা কাটলো না। তখন হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের প্রতি ওহী অবতীর্ণ হলো। ইরশাদ হচ্ছে: আমি তাকে আহ্বান করলাম, হে ইব্রাহীম! নিশ্চয় তুমি স্বপ্নকে সত্য করে দেখালে। আমি এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি সৎকর্ম পরায়ণদেরকে। নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা ছিলো এবং আমি এক মহান কোরবানি তার বিনিময়ে দিয়ে তাকে মুক্ত করে নিয়েছি। (সূরা সাফফাত, আয়াত ১০৪-১০৭; তাফসীরে খাযিন, ৪/২২)

 

অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কিরামের (আলাইহিস সালাম) মতো আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ মুস্তফাও (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অসংখ্য কোরবানী দিয়েছেন। রিসালতের ঘোষণা হতেই দুষ্টু কাফেরদের পক্ষ থেকে উগ্রতা ও নিষ্ঠুরতার তুফান চলতে থাকে, কখনো অত্যাচার ও নিপীড়নের পাহাড় ভেঙ্গে পড়েছে, কখনো বা বিভিন্ন ধরণের অপবাদ আরোপ করা হয়েছে। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (আল্লাহ্র পানাহ!) মিথ্যাবাদী, যাদুকর বলা হয়েছে, রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে দেয়া হয়েছে, পাথর বর্ষন করা হয়েছে, তাঁর প্রতি ঈমান আনয়নকারীদের উপর মারাত্মক হামলা করা হয়েছে, এমনকি তিনি খানায়ে কাবার দিকে অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে মক্কায়ে মুকাররমা থেকে মদীনায়ে মুনাওয়ারার দিকে আল্লাহ্ তায়ালার নির্দেশে হিজরত করেছেন। তাঁকে মদীনায় পৌঁছার পরও শান্তিতে থাকতে দেয়া হয়নি। অসভ্য কাফেররা অত্যাচার-নিপীড়ন এমনভাবে বৃদ্ধি করে দিলো যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাথে মদীনাবাসীও প্রাণের শত্রু হয়ে গেলো, তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য তাদের বিপক্ষে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলো। (সীরাতে মুস্তফা, ১১৪-১১৬ পৃ)

 

সাহাবায়ে কিরামগণ নিজেদেরে যুগে অসংখ্য কোরবানী দিয়েছেন, অনেক সাহাবায়ে কিরাম নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে মক্কা থেকে মদীনার দিকে হিজরত করেছেন এবং মুহাজিরের উপাধী অর্জন করেছেন। মদীনা মুনাওয়ারায় অবস্থানরত সাহাবায়ে কিরামগণও কোরবানী দেওয়াতে পিছপা হননি বরং আনন্দচিত্তে আপন মুহাজির ভাইদের জন্য নিজের ঘর-বাড়ি, জায়গা-জমি, স্বীয় স্ত্রী এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস উৎসর্গ করে আনসার (সাহায্যকারী) হওয়ার উদাহরণ প্রতিষ্ঠা করেন। সাহাবায়ে কিরামদের বড় একটি অংশ ইসলামের উন্নতির জন্য নিজের প্রাণ কোরবান করে শহীদের মর্যাদায় অধিষ্টিত হয়েছেন।

 

দ্বীনে ইসলামের সরল পথ-নিদের্শনা সম্বলিত উজ্জল শিক্ষা দ্বারা পুরো জগতকে আলোকিত করতে আউলিয়ায়ে কিরাম এবং আল্লাহ্ তায়ালার নেক বান্দারাও শুধুমাত্র আল্লাহরই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই অসংখ্য কোরবানী দিয়েছেন। শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মাত্র ১৭ বছর বয়সে নিজের মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে জিলান শহর থেকে বাগদাদে মুয়াল্লায় সফর করেছেন। ছাত্রাবস্থায় ক্ষুধা, পিপাসা, উপবাস এবং নির্জনবাসের পরীক্ষায় ধৈর্য্য ও দৃঢ়তার সহিত প্রতিষ্ঠিত থেকে মহান মর্যাদা (গাউসুল আজম) পেয়েছেন এবং সারা জীবন দ্বীন ইসলামের প্রসার এবং নেকীর দাওয়াতের জন্য ওয়াকফ করে দিয়েছেন। (কালাইদুল জাওয়াহের, ১০ পৃ:)

 

সুলতানুল হিন্দ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন হাসান চিশতী আজমিরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) প্রায় ১৬ বছর বয়সেই বুখারা, সমরকন্দ, নিশাপুরে সফর করে যখন হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে মদীনায়ে মুনাওয়ারায় উপস্থিত হলেন তখন তাকে ‘মঈনুদ্দীন’ (দ্বীনের সাহায্যকারী) উপাধী দান করা হয় এবং দ্বীনের দাওয়াতের মিশন বাস্তবায়নে ভারতের প্রাচীন শহর আজমিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। তাঁর দাওয়াতের বরকতে অসংখ্য (৯৯ হাজার) অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। তাঁর পুরো জীবন রাসূলে হাশেমী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহান বাণী সমূহকে প্রসার করার জন্য উৎসর্গ করেছেন। (আল্লাহ্কে খাস বান্দে, ৫০৮-৫১৩ পৃ:)

 

ইসলামী শিক্ষার প্রচার প্রসারে হুযুর দাতা গঞ্জে বখশ আলী হাজবেরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ঘর-বাড়ি ত্যাগ করেছেন, গযনি শহরের (আফগানিস্তান) হাজবেরী মহল্লা থেকে লাহোরে হিজরত করেছেন। এমনিভাবে আরো অনেক আউলিয়ায়ে কিরামগণ আরাম-আয়েশ, ঘর-বাড়ি ছেড়েছেন, কষ্ট সহ্য করেছেন, এবং জীবন বিসর্জন দিয়েছেন।

 

সম্মানিত পাঠকবৃন্ধ! উপরোক্ত ঘটনাবলী থেকে শিক্ষণীয় বিষয়- নিজের মাঝে ধৈর্য্য ও কৃতজ্ঞতার অভ্যাস সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা করা এবং আল্লাহ্ তায়ালার পথে কোরবানী দেয়ার মানসিকতা তৈরি করা, যেন প্রয়োজনে কোন দ্বিধাদ্বন্দ ছাড়াই আল্লাহ্ তায়ালার পথে কোরবানী দেওয়া যায়। মহামানবগণ তাদের পুরো জীবন আল্লাহ্ তায়ালার আনুগত্যে অতিবাহিত করেছেন, আল্লাহ্ তায়ালার আদেশে নিজের মন প্রাণ বিসর্জন করাকে আমলি ভাবে প্রদর্শন করেছেন, এমনকি চাঁদের মতো ফুটফুটে সন্তানকেও আল্লাহ্ তায়ালার পথে কোরবান করতে দ্বিধা করেননি। আল্লাহ্ তায়ালার নিকট হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের এই আচরণ এমন পছন্দ হলো যে, সকল উম্মতে মুসলিমার জন্য আদেশ দিলেন, তোমরাও আমার খলিল (ইব্্রাহিম) এর এই আচরনের উপর আমল করতঃ পশু যবেহ করো। হযরত সায়্যিদুনা যায়িদ বিন আরকাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এই কোরবানী কি? হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন: তোমাদের পিতা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নাত। সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এতে আমাদের জন্য কি সাওয়াব রয়েছে? ইরশাদ করলেন: কোরবানীর পশুর প্রত্যেক লোমের পরিবর্তে একটি করে নেকী রয়েছে। আরয করলেন: আর (ভেড়ার) লোমে? ইরশাদ করলেন: এর প্রত্যেকটি লোমের পরিবর্তেও একটি নেকী। ( সুনানে ইবনে মাযাহ, ৩/৫৩১, নম্বর-৩১২৭) নবীজি আরো ইরশাদ করেন: হে লোকেরা! খুশি মনে কোরবানী করো এবং এর (পশুর) রক্তে আল্লাহ্ তায়ালার সন্তুষ্টি এবং প্রতিদানের আশা রাখো, যদিও তা মাটিতে পতিত হয়; কেননা তা আল্লাহ্ তায়ালার নিরাপত্তায় পতিত হয়ে থাকে। (মু’জামুল আওসাত, ৬/১৪৮, হাদীস : ৮৩১৯) অন্যত্র ইরশাদ করেন: মানুষ কোরবানীর ঈদের দিন এমন কোন নেক আমল করে না, যা আল্লাহ তায়ালার নিকট কোরবানীর পশুর রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে অধিক প্রিয়। আর এ কোরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পতিত হওয়ার পূর্বেই আল্লাহ তায়ালার দরবারে কবুল হয়ে যায়। এই পশু কিয়ামতের দিন নিজের শিং, লোম এবং পায়ের খুর সহ উপস্থিত হবে। অতএব তোমরা খুশী মনে কোরবানী করো। (তিরমিযী, ৩/১৬২, হাদীস :১৪৯৮) যে ব্যক্তি খুশি মনে সাওয়াব লাভের নিয়্যতে কোরবানী করলো, তবে তা জাহান্নামের আগুনের মাঝে পর্দা হয়ে যাবে। (মুজামুল কবীর, ৩/৮৪, হাদীস: ২৭৩৬)

 

আমাদের সমাজের একটি অংশ রয়েছে, যাদের একই ঘরে বসবাসরত একাধিক ব্যক্তি নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক হওয়া স্বত্বেও পুরো ঘরের পক্ষ থেকে একটি ছাগল কোরবানী দেয়া হয় এবং কোরবানীর জন্য কেমন পশু হওয়া চাই? বা কিরূপ ত্রুটির কারণে কোরবানিই হবে না? অনেকে তা জানে না। বরং তারা কোরবানি করার পর এই খুশিতে থাকে যে, আমরাও সন্নাতে ইব্রাহিম আদায় করেছি আর আমাদের ওয়াজিব আদায় হয়ে গেছে। অথচ তাদের যিম্মায় ওয়াজিব আদায় বাকী রয়ে গেছে। এজন্য কোরবানির আহকামের জ্ঞান থাকা নিতান্তই জরুরী। কোরবানির সুন্নাত ও আদাব হচ্ছে- ১. কোরবানির পশুকে মাটিতে ফেলার পূর্বেই কিবলা নির্ধারণ করা। কারণ, মাটিতে শুয়ানোর পর বিশেষ করে পাথরী মাটিতে টেনে কিবলামুখী করা নির্বাক পশুর জন্য খুবই কষ্টের কারণ হয়। ২. জবাই করাতে এতটুকু না কাটনো যে, যাতে ছুরি গর্দানের হাঁড় পর্যন্ত পৌঁছে যায়, কেননা এটা অযথা পশুকে কষ্ট দেয়া। ৩. যতক্ষণ পর্যন্ত পশু সম্পূর্ণরূপে ‘ঠান্ডা’ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত এর পা না কাটা, চামড়া না ছাড়ানো। জবাই করার পর রূহ বের না হওয়া পর্যন্ত ছুরি কাটা গলায় স্পর্শ না করানো এমনকি হাতও না লাগানো। কিছু কসাই দ্রুত “ঠান্ডা” করার জন্য জবাই করার পর গর্দানের চামড়া উল্টিয়ে ছুরি ভিতরে ঢুকিয়ে হৃদপিন্ডের রগ কেটে দেয়। একইভাবে ছাগল জবাই করার সাথে সাথে বেচারার দেহ থেকে গর্দান পৃথক করে দেয়, বোবা পশুদের উপর এরকম অত্যাচার করা উচিত নয়। ক্ষমতাবান ব্যক্তির উপর আবশ্যক যে, পশুদের অযথা এরূপ কষ্টদাতাকে বাঁধা দেয়া, যদি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বাধা প্রদান না করে তবে নিজেও গুনাহগার ও জাহান্নামের হকদার হবে। পশুদের উপর অত্যাচার করা অমুসলিম বন্দীর উপর অত্যাচার করার চেয়েও জগন্য। (আর বন্দীদের উপর অত্যাচার করা মুসলমানদের উপর অত্যাচার করার চেয়েও জগন্য।) কেননা আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত পশুদের সাহায্য করার কেউ নেই, এই অসহায়কে এ অত্যাচার থেকে কে রক্ষা করবে! (রদ্দুল মুহতার, ৯/৬৬২) ৪. কোরবানী করার কয়েক ঘন্টা পূর্ব থেকে পশুকে ক্ষুধার্ত রাখা হয়, এতে পশু কষ্ট পায়। হযরত আল্লামা মুফতী আমজাদ আলী আযমী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: কোরবানি করার পূর্বে একে খাবার ও পানি দিবে অর্থাৎ ক্ষুধার্ত জবাই করবে না এবং একটি পশুর সামনে আরেকটি জবাই করবে না, আর পূর্ব থেকে ছুরি ধারালো করে নিবে । (বাহারে শরীয়ত, ৩/৩৫২) আসুন! আজ থেকে আমরা সবাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করি, আমরাও নিজের জীবনকে আল্লাহ্ তায়ালা এবং তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিধানাবলী অনুযায়ী অতিবাহিত করবো এবং আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করতে সদা প্রস্তুত থাকবো।

 

“সুন্নাতোঁ কি করোঁ খুব খিদমত হার কিসি কো দোঁ নেকী কি দাওয়াত,
নেক মে ভি বনোঁ ইলতিজা হে ইয়া খোদা তুঝ চে মেরী দোয়া হে।”

 

লেখক: আরবী প্রভাষক, রাণীরহাট আল আমিন হামেদিয়া ফাযিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।