প্রবন্ধ

ইসলামের মহানুভবতা | মুহাম্মদ মাসুম চৌধুরী

ইসলাম মানবতার ধর্ম। উদার ধর্ম। ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যার কারণে অনেক অমুসলিমদের নিকট ভুল সংবাদ যাচ্ছে। মানবজাতির কল্যাণ সাধনে ইসলাম ব্যাপক গুরুত্ব প্রদান করেছে। পবিত্র কোরআনে ‘মুসলমান’ শব্দ যতবার উল্লেখ হয়েছে তার চেয়ে বেশী উল্লেখ করা হয়েছে ‘নাস’ (মানষ) শব্দটি।

হযরত আবু হুরাইয়া (রা.)’র নাম ছিল আবদুল ওজজা অর্থাৎ ওজজার দাশ। মহান আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নাম রাখলেন, আবদুর রহমান। পরে নবীজী তাঁকে ভালোবেসে নাম রাখলেন আবু হুরাইয়া বা বিড়ালের বাপ বা বিড়ালের মালিক। যেসব নামে কুফুরী ছিল না সেসব নাম ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পরও (কোন সাহাবীর) পরিবর্তন করেননি। ‘আল্লাহ’ শব্দটি হযরত আদম (আ.) হতে ব্যবহৃত। ইসলাম ধর্ম উদার বলেই অমুসলিম যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আবার বিয়ের আক্দ পড়ার প্রয়োজন মনে করেননি প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। পূর্বের সব নবী রাসুল (দ.)’র উপর ঈমান না আনলে মুসলমান হওয়া যায় না। অথচ বর্তমান যারা পূর্বের নবী (আ.)’র অনুসারী আছে তারা আমাদের নবী (দ.)’র উপর বিশ্বাসী নন।

মানব কল্যাণের গুরুত্ব ইসলামে অত্যন্ত ব্যাপক। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ পাক কিছু দোয়া নিজেই শিখিয়ে দিয়েছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দোয়া, রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসনাতাঁও, ওয়াফিল আখেরাতে হাসনাতাঁও, ওযাকিনা আজাবাল্লার’। অর্থাৎ হে আল্লাহ তুমি আমাকে দুনিয়ায় কল্যাণ দাও এবং আখিরাতের কল্যাণ দাও, জাহাান্নামের আগুণ হতে রক্ষা করো।

এই আয়াতে করিমায় সমস্ত প্রার্থনাকে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে যতসব কল্যাণ আমি জানি আর যা জানি না সব অমাকে প্রদানের জন্য প্রার্থনা করার কথা মহান আল্লাহ পাক শিখিয়ে দিলেন। কী ধরনের কল্যাণ, কী ভাবে, কত প্রকার তার হাজার ব্যাখ্যা থাকলে মহান আল্লাহই একটি আয়াতে সংক্ষিপ্ত কথায় একত্র করে সুন্দরভাবে বলতে আমাদের শিখিয়ে দিতে পারেন। এটি কোরআনের সৌন্দর্য।

মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষভাবে সাতটি কাজের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এ সবের প্রথম নির্দেশ হলো রোগীর শুশ্রƒতা করা। রুগ্ন ব্যক্তির সেবা করার গুরুত্ব এত বেশী।
রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখার ফজিল সম্পর্কে মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে কুদমীতে ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক বলবেন, ‘হে আমার বান্দা! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমাকে দেখতে আসনি’। বান্দা বলবে, আপনি বিশ্ব জগতের মালিক, আপনি তো অসুস্থ হাতে পারেন না। আল্লাহ পাক বলবেন, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল, তুমি তাঁকে দেখতে যাওনি। যদি তুমি তাকে দেখতে যেতে সেখানে আমাকে দেখতে পেতে। (সহিহ বোখারী)

প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোন মুসলিম ব্যক্তি যখন অপর মুসলমানকে সকালে সেবা শুশ্রƒষা করে, তখন সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেস্তা তার জন্য দোয়া করে। আর যদি সন্ধ্যায় সেবা শুশ্রƒষা করে তাহলে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেস্তা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং আল্লাহ তার জন্য একটি বাগান নির্দিষ্ট করেন।

ইসলাম শান্তি ও উদার ধর্ম। ইসলামের সুন্দর্য আজকের মুসলমান গ্রহণ করতে সক্ষম হলে মুসলিম বিশ্বে শান্তির সুবাতাস বয়ে যেত। নও মুসলিম এবং ইসলামী গবেষক যিনি ইংরেজি ভাষায় প্রথম পবিত্র কোরআন অনুবাদকারী মুহম্মদ মারমাটিউক পিকটাল ১৮৮৫ সালের ৭ এপ্রিল ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা চার্লস পিকটাল ছিলেন গির্জার পাদ্রী। পিকটাল ইসলাম গ্রহণের কারণ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমি বহু পড়াশোনা ও গবেষণার পর মুসলমান হয়েছি। আমার জীবনে এর অসীম গুরুত্ব রয়েছে। মুসলমানগণ ইসলাম উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। এজন্য ওরা ইসলামের কদর বুঝে না। বাস্তবতা হলো ইসলাম শান্তি ও নিরাপত্তার ভান্ডার’।

আজকের মুসলমানগণ যদি এই শান্তি ও নিরাপত্তার বাণী আত্মস্থ করতে পারতো সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কার্যক্রমে কখনো লিপ্ত হতো না।

মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসতে পারবে না। আমি কী তোমাদেরকে বলে দেব কোন জিনিস তোমাদের মাঝে ভালোবাসা বৃদ্ধি করবে ? আর সেটি হলো তোমরা পর পর সালাম বিনিময় করবে। (মুসলিম শরীফ)

সালাম মানে শান্তি। এই শান্তির ওপর ভিত্তি করে মুমিন হতে হয় এবং মুমিনের ওপর ভিত্তি করে জান্নাত পাওয়া যায়। মুমিনের বিষয়টি বিষ্ময়কর। প্রতিটি কাজই মুমিনের জন্য কল্যাণকর। তাঁর কোন ক্ষতি হলে সে ধৈর্যধারণ করে, এটাও তার জন্য কল্যাণকর (সওয়াব)। সুখে শান্তিতে থাকলে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে এটিও তাঁর জন্য কল্যাণকর। (মুসলিম)

একজন মুমিন দুঃখে সুখে সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করে। প্রার্থনায় নিজের মন হালকা হয়। প্রার্থনার সময় মনে হবে আপনি একা নন, আপনার সাথে আছে মহাশক্তি। প্রার্থনার সময় আল্লাহকে সব কথা বলতে পারবেন, প্রাণ খুলে বলতে পারবেন। যে কথা দুনিয়াতে কাউকে বলতে পারেননি, যে অপরাধ দুনিয়ার কারো নিকট প্রকাশ করতে পারেননি, তা স্রষ্টাকে বলে দুনিয়াতে আপনার মন হালকা করতে পারবেন। অর্জন করতে পারবেন আখিরাতের মুক্তি। তাঁর কাছে কোন কথা লুকাতে হয় না, যাঁর কাছে সব পাপের কথা বললে ছোট হয় না বড় হয়। সে স্রষ্টার কাছে কিছু লুকানো সম্ভবও নয়। সে প্রার্থনা শক্তি যোগায়, কাছে প্রেরণা যোগায়। যখন নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলি তখন মহাশক্তির কাছে প্রার্থনা করি। মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এক মুসলমান অপর মুসলমানের জন্য দোয়া না করলে নিজের দোয়া কবুল হবে না’। প্রতিটি মুসলমান প্রার্থনা মহান আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য করতে চাইলে সব মুসলমানকে দোয়া করতে হবে। কোটি কোটি মুসলমান পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তে একে অপরকে দোয়া করছেন। সে দোয়া অনলাইনে প্রতি মুসলমানের একাউন্টে জমা হচ্ছে। পুণ্যে পুণ্যে প্রতি মুসলমানের একান্ট ভর্তি হচ্ছে প্রতিটি মুহূর্তে। গুনাহ জমা হয় না এভাবে। সুবহানাল্লাহ। এসবই ইসলামের মহান সৌন্দর্য।”’
লেখক : কলাম লেখক, রাজনীতিক