জীবনী

সৈয়দ মুহাম্মদ ইজহার আশরাফীর জীবনী

সৈয়দ মুহাম্মদ ইজহার আশরাফ

সৈয়দ মুহাম্মদ ইজহার আশরাফ (আশরাফী) ভারতবর্ষের একজন বিখ্যাত সুন্নী আলেম ছিলেন।

তিনি শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ৩৮তম বংশধর।তিনি বিখ্যাত কাছাউছা দরবার(ছিলছিলায়ে আশরাফীয়া) শরীফের সাজ্জাদানশীন ছিলেন। কাছাউছা দরবার শরীফ বিশ্বব্যাপী সুন্নী সুফিধারার ইসলাম প্রচারের একটি প্রধান কেন্দ্র। সৈয়দ ইজহার আশরাফ All India Ulema and Mashaikh Board এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

তাঁর উপাধি ছিলো শায়খ-এ-আজম।

দ্বীনের প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেকগুলো মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাঁর অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদ রয়েছেন। তিনি ছিলেন “ছরকারে কালা” হিসেবে সুপরিচিত সুফি দরবেশ সৈয়দ মুখতার আশরাফ আশরাফী আল জিলানী(রহ:) এর জ্যেষ্ঠপুত্র।

প্রকৃতপক্ষে, বিখ্যাত সুফি দরবেশ ও ধর্মপ্রচারক সৈয়দ আশরাফ জাহাঙ্গীর সিমনানী (রহ:), যিনি সিমনান এর বাদশাহ ছিলেন এবং ধর্মপ্রচারের জন্য রাজসিংহাসন পর্যন্ত ত্যাগ করেছিলেন, আশরাফীরা হচ্ছেন তাঁরই আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী।

ইসলাম ধর্মের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বংশধর এবং গাউছে পাক সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী এর বংশধর হিসেবে আশরাফী পরিবার ভারতবর্ষে অত্যন্ত সম্মানিত। তাদের শাজরা (বংশপরম্পরা) বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত।

জন্ম ও পারিবারিক জীবন

সৈয়দ মুহাম্মদ ইজহার আশরাফ ভারতবর্ষের বিখ্যাত আশরাফী পরিবারের একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব।
শায়খ-এ-আজম সৈয়দ মুহাম্মদ ইজহার আশরাফ ৬ই মহররম, ১৩৫৫ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শেষ নবী, সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ৩৮ তম বংশধর। তাঁর সম্মানিত পিতা হলেন “ছরকারে কালা” হিসেবে সুপরিচিত সুফি দরবেশ সৈয়দ মুখতার আশরাফ আশরাফী আল জিলানী (রহ:)।

বিবাহিত জীবনে সৈয়দ মুহাম্মদ ইজহার আশরাফ আশরাফী আল জিলানী (রহ:) তিন পুত্র এবং এক কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর তিন পুত্র হলেন –

  • কায়েদে মিল্লাত সৈয়দ মাহমুদ আশরাফ
  • আশরাফ এ মিল্লাত সৈয়দ মুহাম্মদ আশরাফ
  • সৈয়দ হাম্মাদ আশরাফ

এবং তাঁর একমাত্র কন্যা সন্তানের নাম বিবি জোবাইদা।

শিক্ষাজীবন

সৈয়দ মুহাম্মদ ইজহার আশরাফ তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা কাছাউছা শরীফের মাদ্রাসায়ে আশরাফীয়ায় লাভ করেন। অত:পর তিনি জামেয়া নঈমীয়া মুরাদাবাদে শিক্ষা অর্জন করেন।সর্বশেষ তিনি ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান জামেয়া আশরাফীয়া মুবারকপুর এ এলমে দ্বীনের সকল গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্রে পূর্ণ দক্ষতা হাসিল করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে দরস-এ-নেজামীয়ার ফাজিল-এ-নেজামীয়া ডিগ্রী প্রাপ্ত হন এবং দস্তারে ফজিলত লাভ করেন।

শিক্ষকতা জীবন

শিক্ষকতার প্রতি সৈয়দ ইজহার আশরাফ এর সহজাত ঝোঁক ছিল। শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করার পর তিনি ১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তিনি জামেয়া নঈমীয়া মুরাদাবাদে শিক্ষকতা করেন। অত:পর খানকা নির্মাণ এবং সম্প্রসারণ ও ছিলছিলার প্রসারের জন্য তিনি তাঁর সম্মানিত পিতার নির্দেশে শিক্ষকতার দ্বায়িত্বে ইস্তফা দিয়ে তরীক্বত প্রচারের মহান কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

বায়াত ও খেলাফত

সৈয়দ মুহাম্মদ ইজহার আশরাফ তাঁর স্বীয় পিতা ছরকারে কালা সৈয়দ মুখতার আশরাফের হাতে সিলসিলায়ে আলীয়া কাদেরীয়া চিশতীয়া আশরাফীয়ায় বায়াত হন। অত:পর তিনি কাদেরীয়া মুনাওয়াবিয়া মুয়াম্মারিয়া, নকশবন্দিয়া সোরওয়ারদীয়া এবং ওয়ায়েসিয়া সিলসিলায় খেলাফত লাভ করেন।

দ্বীন ও সমাজের খেদমত

আশরাফী সিলসিলা বিশ্বব্যাপী সুন্নী সুফিধারা প্রচারের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। আশরাফ জাহাঙ্গীর সিমনানী (রহঃ) এর দরবারের সাজ্জাদানশীন হিসেবে শায়খ-এ-আজম সৈয়দ মুহাম্মদ ইজহার আশরাফ আশরাফীয়া ছিলছিলার প্রচার ও প্রসার তথা সুফি ভাবধারার প্রচার প্রসারে বিশাল অবদান রাখেন। তিনি ত্বরীকতের একজন বড় শায়খ ছিলেন। বিশ্বব্যাপী ইসলামে সত্য শ্বাশ্বত শান্তির বাণী প্রচারে তিনি আজীবন নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন।

তিনি দ্বীনের প্রচার প্রসারের উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী অনেক মাদ্রাসা স্থাপন করেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

  • জামে আশরাফ, কাছাউছা শরীফ
  • মাদ্রাসা মুখতারুল উলুম, বিহার
  • মাদ্রাসা আশরাফীয়া ইজহারুল উলুম, বিহার
  • মাদ্রাসা আশরাফীয়া ইজহারুল উলুম, মহারাষ্ট্র
  • মাদ্রাসা আশরাফীয়া গুলশানে কবীর, বিহার
  • জামিয়া আশরাফীয়া ইজহারুল উলুম, আশুলিয়া, ঢাকা

মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি তিনি মসজিদও নির্মাণ করেন। তন্মধ্যে মসজিদে আলা হযরত আশরাফী অন্যতম।

শায়খ-এ-আজম সৈয়দ ইজহার আশরাফ এর প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

  • মাখদুম আশরাফ মেমোরিয়াল হাসপাতাল
  • নুরুল আইন পার্ক।
  • মাওলানা আহমদ আশরাফ হল।
  • আশরাফ হুসাইন মিউজিয়াম।
  • মুখতার আশরাফ লাইব্রেরী।

প্রকাশনা ও সম্পাদনা

ইসলামিক কাব্যের প্রতি সৈয়দ ইজহার আশরাফের বিশেষ অনুরাগ ছিলো। তিনি অনেকগুলো নাত, মানকাবাত ও গজল রচনা করেন, যা একত্রিত করা হয়েছে “ইজহার-এ-আক্বীদত” নামক সংকলনে।

সৈয়দ ইজহার আশরাফ বিশ্ববিখ্যাত “মসনবী” শরীফের উর্দু কাব্যানুবাদ করেন যা “ইজহারুল মনযুম” নামে প্রকাশিত হয়।

সৈয়দ ইজহার আশরাফ ত্রৈমাসিক “গাউসুল আলম” পত্রিকার প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
জ্ঞানের প্রসারের লক্ষ্যে তিনি ১৯৯৫ সালে মুখতার আশরাফ লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করেন। এই লাইব্রেরীতে কয়েক হাজার দুর্লভ গ্রন্থ রয়েছে। এই লাইব্রেরীকে এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ লাইব্রেরীতে পরিণত করতে বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান যা ইসলামী গবেষণা ও অধ্যয়নের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে।

এই মহান বুজুর্গ আজীবন দ্বীনের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে ২২শে ফেব্রুয়ারী ২০১২ ইং রোজ বুধবার ইন্তেকাল করেন। আল্লাহর এই মহান ওলির পবিত্র মাজার শরীফ কাছাউছা দরবারে অবস্থিত।