প্রবন্ধ

গাউসে জামান ও গাউসিয়া কমিটি ঘোর তিমিরে আলোর মিনার

হুজুর কেবলা তৈয়্যব শাহ (রহ.), এ ক্রিয়াশীল মোবারকময় নামটি আত্মার প্রশান্তি। হৃদয়ের শিহরণ। প্রেমের ঝর্ণাধারা। যে প্রেমের মেলবন্ধন সুদূর বাগদাদ হয়ে ঈমানের বাড়ি মদিনা। গাউসে জামান তৈয়্যব শাহ আশেক ভক্তের শিরে তাজ। হৃদ মাজারে সুউচ্চ মিনার। মুজাদ্দিদে জমান তৈয়্যব শাহ ইলমে দ্বীনের মহান বাহক। খোদাভীতি আর রাসূলপ্রীতির পূর্ণজাগুরক। আউলাদে রাসূল (দ.) তৈয়্যব শাহ অসহায়ের সহায়। এতিমের বন্ধু। পীর ও বীর তৈয়্যব শাহ গুনেহগারদের আশ্রয়স্থল। মুরিদানের ছায়াসঙ্গী। সর্বহারাদের সাহস। এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। ইলমে লাদুনীর ধারক, খলিফায়ে শাহে জিলান হুজুর খাজা চৌহরভী (রহ.)’র দোয়া, কুতুবুল আউলিয়া শাহিনশাহে সিরিকোট (রহ.)’র প্রত্যাশার বাতিঘর হলো হুজুর কেবলা গাউসে জামান হাফেজ ক্বারি আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহ.)।

উল্লেখ্য ১৩৪০ হিজরি মোতাবেক ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের হাজারা জেলার সুবিখ্যাত দরবারে আলীয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরীফের শাহানশাহ কুতুবুল আউলিয়া আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রহ.)’র ঘর ও আম্মাজান সৈয়্যদা খাতুন (রহ.)’র কোল আলোকিত করে মাতৃগর্ভের অলী ‘পাক চীজ’ তৈয়্যব শাহ নামক নুর মোবরকের আগমন। পিতা-মাতার উভয় দিক থেকেই তিনি ইমাম হোসাইন (রা.)’র বংশধারায় বিখ্যাত মাশওয়ানী গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। প্রিয় রাসূল করীম (দ.)’র ৪০তম নুরানি বংশধর হুজুর গাউসে জামান খুবই অল্প বয়সে পবিত্র কুরআনের হিফয সম্পন্ন করে ‘হাফেজ ক্বারি’ব খেতাব অর্জন করেন। এরপর প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানার্জন করেন শাহানশাহে সিরিকোট প্রতিষ্ঠিত হরিপুর রহমানিয়া মাদরাসা থেকে। বুজুর্গ পিতা কুতুবুল আউলিয়ার সান্নিধ্যে পর্যায়ক্রমে হুজুর কেবল শরীয়ত-ত্বরীক্বতের সুযোগ্য নেতৃত্বের যাবতীয় গুণাবলী অর্জন করেন।

অল্প বয়স থেকেই গাউসে জামানের নূর বিচ্ছুরিত হতে থাকে। মাত্র চার বছর বয়সে সম্মানিত পিতাকে বলেছিলেন, “বাজী নামাজ মে আপ আল্লাহকো দেখতা হ্যাঁয়, মুঝেহ ভি দেখনা হ্যাঁয়।” আর মাত্র সাত বছর বয়সে পিতার সাথে আজমীর শরীফ যিয়ারতের সময় খোদ খাজা গরীবে নেওয়ায মঈনুদ্দীন চিশতি (রা.)‘র সাথে তাঁর জাহেরী মোলাক্বাত ও কথোপকথন হয়। এছাড়াও শৈশবে আরও অনেক আধ্যাত্মিক ঘটনা সকলের অন্তরকে বিমোহিত করে। ১৯৫৬ সালে পিতা শাহানশাহে সিরিকোটের সাথে পবিত্র হজ্ব ও মদিনা শরীফ যিয়ারাতে ধন্য হন। ১৯৫৮ সালে ৪২ বছর বয়সে হুজুর পাক (দ.)’র নির্দেশে স্বীয় পীর-মুর্শিদ হুজুর কুতুবুল আউলিয়া সৈয়্যদ আহমদ শাহ ছিরিকোটি (রহ.) তাঁকে সিলসিলায়ে আলীয়া কাদেরিয়ার প্রধান খলিফা মনোনীত করেন। ১৯৬১ সালে ১ শাওয়াল ১৩৮০ হিজরীতে প্রথম বারের মতো স্বীয় পিতা ও পীর শাহানশাহ সিরিকোটের নির্দেশে ঈদের নামাজের ইমামের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে হুজুর কেবলা গাউসে জামানের উপর অর্পিত বিশাল দ্বীনি দায়িত্বর আড়ম্বরপূর্ণ অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৬১ সালে পীর হিসেবে প্রথম চট্টগ্রাম আগমনে হলেও ইতোপূর্বে পিতার সাথে ১৯৪২ সালে সর্বপ্রথম চট্টগ্রাম সফর করে বাংলাবাসীকে ধন্য করেছিলেন হুজুর কেবলা। নিজ পীর মুর্শিদ শাহানশাহে সিরিকোট তৈয়্যব শাহ (রহ.)’র ব্যাপারে প্রায়ই বলতেন, “তৈয়্যব মার্দাজাদ অলি হ্যাঁয়, তৈয়্যবকা মক্বাম বহুত উঁচা হ্যায়।” হুজুর কেবলা বানিয়ে জামেয়া শাহানশাহে সিরিকোটের আদর্শে উজ্জীবীত হয়ে ১৯৬৮ সালে রাজধানী ঢাকার বুকে প্রতিষ্ঠা করেন নবীপ্রেমের বাগান কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া কামিল মাদরাসা। যা আজ ঢাকার বুকে সুন্নি মুসলমানদের রাজমুকুট। শান্তিকামী মুসলমানদের মহাখুশির উপলক্ষ ঈদে মিলাদুন্নবী যখন বাতিল সম্প্রদায় কর্তৃক বারবার উপেক্ষিত হচ্ছে তখন হুজুর মুজাদ্দিদে জমান তৈয়্যব শাহ ১৯৭৪ সালে দরবারে সিরিকোট শরীফ থেকে আনজুমে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়াকে নির্দেশ দেন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে ‘জশনে জুলুছ’ আয়োজন করতে। ১৯৭৭ সালে সর্বপ্রথম হুজুর কেবলা আ’লে রাসূল (দ.) নিজের শ্রেষ্ঠ সংস্কার পবিত্র জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)-এ নেতৃত্ব দিয়ে এ তাৎপর্যপূর্ণ আয়োজন মহান আল্লাহ-রাসূল (দ.) কর্তৃক কবুল করে নেন। তাই তো আজ সারা বিশ্বে জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী নবীপ্রেমিকদের প্রাণের উৎসবে পরিনত হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রাম হালিশহরে মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া, কালুরঘাটে মাদরাসায়-এ তৈয়্যবিয়া হাফেজিয়া, পাকিস্তানের করাচীতে মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া করাচী প্রতিষ্ঠা করে দ্বীনি শিক্ষার বিস্তার ঘটান। ১৯৭৬ সালে কর্ণফুলীর তীরবর্তী ভিন্নধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত চন্দ্রঘোনায় মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া প্রতিষ্ঠা করে ঘোর অন্ধকারে আলোর মশাল জ্বালিয়েছিলেন মহিউল উলুম তৈয়্যব শাহ। এ প্রবন্ধের লেখক আমি অধমও চন্দ্রঘোনা তৈয়বিয়া মাদরাসার আলোয় আলোকিত (ছাত্র)। চন্দ্রঘোনা তৈয়বিয়া মাদরাসা উত্তর চট্টলায় স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। অবশ্য এ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মুজাদ্দিদ বাবাজী ইমাম শেরে বাংলা (রহ.)’র অবদানও অনস্বীকার্য। সাধারণ মুসলমানদের ঈমান আকিদায় পারদর্শী করতে মুজাদ্দিদে জমান ১৯৭৮ সালে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের মুখপত্র খ্যাত তরজুমান-এ আহলে সুন্নাত প্রতিষ্ঠা করেন। যা আজ আলেম-আওয়াম সকলের জন্য ঈমানী হাতিয়ার। ১৯৭৯ সালে হুজুর গাউসুল আজম জিলানী (রা.)’র যিয়ারতের সময় রাত ১২টায় গাউসে পাক থেকে নির্দেশিত হয়ে প্রতিষ্ঠা করেন তরিকত চর্চার মহান এদারা আলমগীর খানকা শরীফ। যার মাধ্যমে তরিকত চর্চার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। তরিকতপন্থীদের প্রাণকেন্দ্রে পরিনত হয় এ খানেকা। খাজা চৌহরভী (রহ.) রচিত ৩০ পারা দরুদ শরীফের অদ্বিতীয় কিতাব মাজমুয়ায়ে সালাওয়াতে রাসূল (দ.) ১৯৮২ সালে ৫০০০ কপি প্রকাশ করেন হুজুর কেবলায়ে আলম।

সুন্নি মতাদর্শ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে গঠিত বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার ২১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সম্মেলনে চট্টগ্রাম মুসলিম ইন্সটিটিউট হলে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনাকে উদ্দেশ্য করে ১৯৮৬ সালে ঘোষণা দিয়েছেন “ইয়ে হামারী ঈমানী ফৌজ হ্যাঁয়। ইয়ে আউলিয়ায়ে কেরাম কী ফৌজ হ্যাঁয়।” যে মকবুল বানী প্রতিটি সুন্নি নেতা-কর্মীর মনে সাহস-প্রেরণা হয়ে সজীব থাকবে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত।

১৯৮৫ সালে হুজুর কেবলা মিয়ানমার সফর করেন। সে সময়ে ঐখানকার অসংখ্য লোক হুজুর কেবলার হাতে বায়াত গ্রহণ করে ধন্য হন। বার্মা সফরেও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতে ভুলেননি মহিউল উলুম তৈয়্যব শাহ। বার্মার রেঙ্গুনে প্রতিষ্ঠা করেন, মাদরাসা-এ আহলে সুন্নাত। উল্লেখিত প্রতিষ্ঠান ছাড়াও হুজুর কেবলা আরও অসংখ্য দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে সুন্নি মুসলমানদের ভাগ্যোন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। হুজুর কেবলার বদান্যতায় এদেশে কাদেরিয়া তরিকা ও সুন্নিয়াত এক নতুন জীবন লাভ করেন। হুজুরের নির্দেশে আজ খতমে গাউসিয়া, গেয়ারভী ও বারভী শরীফ এবং মিলাদ-ক্বিয়াম শুধু নতুনত্ব অর্জন করেনি বরং পুনর্জীবন লাভ করে ঘরে ঘরে, জনে জনে সকলের প্রাণে প্রাণে সমাদৃত হয়েছে। এগুলো আজ সুফিবাদী মুসলমানদের জীবনে অপরিহার্য অনুসঙ্গ। গাউসে জামান তৈয়ব শাহ (রহ.)’র অবদান অবিবেচক ও অকৃতজ্ঞতা ছাড়া সকলেই একবাক্যে স্বীকার করতে বাধ্য।

কুমিল্লা শাহপুর দরবারের সম্মানিত পীর, নন্দিত শিক্ষাবিদ, আল্লামা সৈয়্যদ ড. আহমদ পেয়ারা বাগদাদী (রহ.) আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহ.)-কে সবসময় প্রকাশ্যে গাউসে জমান সম্বোধন করতেন। গাউসে জমান কেন বলতেন এ প্রসঙ্গে হুজুরের ভক্ত মুরিদগণের শ্রদ্ধাপূর্ণ জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি (আহমদ পেয়ারা বাগদাদী) চাক্ষুষ ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,

“সময়টা হয়তো ১৯৭৯ সাল। তখন আমি বাগদাদ শরীফ গাউসুল আজমের দরবারের খাদেম ছিলাম। গাউসে জমান আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহ.) বাগদাদে গাউসে পাকের মাজার যিয়ারতে গেছিলেন। সেবার গাউসে পাক বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)’র মাজারের বিশেষ জায়গায় যিয়ারতের অনুমতি পান হুজুর তৈয়্যব শাহ। তাঁর পরে যিয়ারতের অপেক্ষায় ছিলেন আফ্রিকার একটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। সবার জন্য সময় সুনির্দিষ্ট ছিল কিন্তু হুজুর কেবলা তৈয়্যব শাহ (রহ.)’র সময় শেষ হবার পরও তিনি গাউসে পাকের রওজা হতে বের হচ্ছেন না, আর ঐ দিকে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের সিডিউল ভঙ্গ হবার উপক্রম, বারবার তাগিদ আসছে আমার প্রতি। আমি নিরুপায় হয়ে ভিতরে প্রবেশে বাধ্য হলাম। ভেতরে প্রবেশ করতেই অবাক হলাম। আল্লাহু আকবর! আমি স্বাক্ষী হলাম এক ঐতিহাসিক বাস্তবতার। দেখলাম প্রেমময় মুহূর্ত। দেখলাম গাউসে জামান তৈয়্যব শাহ সে সময় বড়পীর গাউসুল আজম (রা.)’র সাথে সমগ্র জাহানের হিসাব-নিকাশ নিয়ে ব্যস্ত। যেসব দায়িত্ব পালন হয়েছে তা গাউসে পাককে বুঝিয়ে দিচ্ছেন আর নতুন কিছু দায়িত্ব বড়পীর থেকে বুঝে নিচ্ছেন। সে অবস্থাদৃষ্টে আমার বুঝতে আর বাকী রইলো না যে, আল্লামা হাফেজ ক্বারি সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ এ সময়ের ‘গাউসে জামান’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যার নিয়ন্ত্রণ মূলত বাগদাদ শরীফে রয়েছে। এ জন্যই আমি সিরিকোট দরবারের সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহকে গাউসে জামান বলে ডাকি।” একজন সাহেবে কাশফে কারামত, আধ্যাত্মিক সাধক, বরেণ্য গবেষক, আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্কলার আল্লামা ড. সৈয়্যদ আহমদ পেয়ারা বাগদাদী (রহ.)’র বর্ণিত চাক্ষুষ ঘটনা শতাব্দীর মহান সংস্কারক, সিরিকোট বাগের ফুটন্ত গোলাপ, আ’লে রাসূল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মাদ তৈয়্যব শাহ (রহ.) সমসাময়িক যুগের অলিকুল শিরোমণি তথা গাউসে জামান হওয়ার প্রমাণ বহন করে। হুজুর কেবলার ব্যাপারে এমন অনেক বরেণ্য ব্যক্তিত্বের মূল্যায়ন গাউসে জামানকে জানতে লেখককে অনুপ্রাণিত করেছে। হুজুর কেবলার অসাধারণ সংস্কার নিঃসন্দেহে উনাকে মুজাদ্দিদের মহান আসনে আসীন করেছেন।

হুজুর গাউসে জামান, মুজাদ্দিদে জামানের এক একটি সংস্কার, এক একটি নিদিষ্ট দল বা সম্প্রাদায়ের জন্য। যেমন ইলমে দ্বীনের (মাদরাসা) সংস্কার আলেম ও ছাত্রদের জন্যই বেশি লাভজনক। জশনে জুলুছ সুন্নি জনতার জন্য প্রধান প্রাণের উৎস। এভাবে প্রত্যেকটা অবদান। এ মহান মুজাদ্দিদের একটি অনন্য তাজদিদ (সংস্কার) সারা সৃষ্টি জাহানের জন্য। যা প্রমাণ হয়েছে ২০২০ সালের অন্ধকারাচ্ছন্ন করোনাকালিন। আর তা হলো মানবতার সংগঠন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ। প্রতিদিন সূর্যের উদয়াস্ত হয়। কিন্তু ১৯৮৬ সালে বাংলার আকাশে এক নতুন সূর্যের উদয় হয়েছিল, যার সূর্যাস্ত হবে না কেয়ামততক। সে সূর্যের নাম হলো গাউসিয়া কমিটি। পবিত্র কুরআনের সুমহান নির্দেশ “সত্যবাদীদের সাথী হও” শ্লোগানকে সামনে রেখে এ সত্যান্বেষী জান্নাতি কাফেলার পথচলা শুরু। অবশ্য এ মাদানি কাফেলার গোড়াপত্তন আরও বহুদিন আগে। বলাচলে দূর আরবে মরুর দুলাল প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (দ.) প্রতিষ্ঠিত হিলফুল ফুজুলের ছায়াসংগঠন গাউসিয়া কমিটি। ফিলফুল ফুজুল প্রতিষ্ঠা করেন প্রিয় রাসূল (দ.) আর গাউসিয়া কমিটি প্রতিষ্ঠা করেন আউলাদে রাসূল (দ.)। তাই উভয় সংগঠনের কার্যক্রমে আছে সুনিপুণ মিল। আরবের বিখ্যাত ওকাজ মেলায় জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে কুরাইশ ও হাওয়াজিন গোত্রের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পাঁচ বছর চলতে থাকা এই যুদ্ধে অনেক প্রাণহানি ঘটে। এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থেকে ফিরিয়ে সকলের মাঝে শান্তি ও সৌহার্দ্য নিশ্চিতে সমমনা যুবকদের নিয়ে কুরাইশ কর্তৃক আল আমীন খেতাবপ্রাপ্ত হযরত মুহাম্মদ (দ.) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এ শান্তিসংঘ। যে সংগঠন অন্ধকারাচ্ছন্ন আরব সমাজে জ্যোতি ছড়িয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “ওমা আরসালনাকা ইল্লা রহমাতাল্লিল আলামিন। অর্থ: আর অবশ্যই আমি আপনাকে বিশ্বমানবতার জন্য রহমত করে পাঠিয়েছি।” হুজুরের সারাজীবন ছিল এ আয়াতের পূর্ণ প্রতিফলন। সামাজিক ঐক্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা, যুদ্ধ বন্ধ করে সম্প্রীতি গড়া, নিঃস্ব, বিধবা ও অভাবীদের পাশে দাঁড়ানো, বিদেশি বণিকদের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া, সব ধরনের অন্যায় ও অবিচারের অবসান ঘটিয়ে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা এবং সর্বোপরি গোত্র, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানবতার কল্যাণে কাজ করাই ছিল হিলফুল ফুজুলের উদ্দেশ্য। প্রিয় রাসূলের হিলফুল ফুজুল আর আউলাদে রাসূলের গাউসিয়া কমিটি।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এযাবৎ কল্যাণমূলক কাজগুলো নিয়ে গবেষণা করলে যেকোনো বিদগ্ধজনের কাছে গাউসিয়া কমিটি নিঃসন্দেহে হিলফুল ফুজুলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন মনে হবেই। তরিকত জগতের আফতাব গাউসিয়া কমিটি এখন মানবতার আকাশে ধ্রুবতারা। মানবতার পরম বন্ধু হুজুর গাউসে জামান তৈয়্যব শাহ (রহ.) প্রতিষ্ঠিত গাউসিয়া কমিটি শুরুতে মসজিদ, মাদরাসা, খানেকা ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ থেকে মানুষকে সিরাতুল মুস্তাকিম তথা সহজ সরল পথ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের দিকে আহবান করেছেন। কুপথে চলা পথিককে দিয়েছেন সৎপথের সন্ধান। নিশ্চিত জাহান্নামিকে দেখিয়েছেন জান্নাতের স্বপ্ন। চট্টগ্রাম থেকে প্রতিষ্ঠিত গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ আজ শুধু চট্টগ্রাম কিংবা বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ নেই। পাকিস্তানের হরিপুর থেকে বিচ্ছুরিত নূর আজ নিখিল দুনিয়াকে মুনাওয়ার করেছে। চট্টগ্রামের গাউসিয়া কমিটি আজ সারা পৃথিবীতে বিস্তৃত। আধ্যাত্মিক সংগঠনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ হওয়া গাউসিয়া কমিটি বর্তমানে আষ্টেপৃষ্ঠে একটি মানবতার সেবায় সেচ্ছাসেবী সংগঠনে রূপ নিয়েছে। যা পৃথিবীবাসীর জন্য সুখবর। নিজের মেয়ে বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পিতার হলেও, পিতা-মাতা কিংবা বড় ভাইয়ের অপারগতায় এ দায়িত্ব কাধে তুলে নেন মানবিক গাউসিয়া কমিটি। গাছ লাগিয়ে পরিবেশ বাঁনোর দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। কিন্তু বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে মুক্ত নিঃশ্বাস সঞ্চালনের ব্যবস্থা করছেন সচেতন গাউসিয়া কমিটি। শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসহায়তা প্রদান। মুসলিম শিশুদের জন্য খৎনা কর্মসূচি। অসহায়ের মুখে অন্নদান। সমাজের কুপ্রথা, অপসংস্কৃতি, ধর্ষণ, মাদক, জোরজুলুম, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদসহ সবধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান। বেকারকে কর্মসংস্থান গড়ে দেওয়া গাউসিয়া কমিটির জনকল্যাণমুখী চলমান কর্মসূচির অন্যতম। গাউসিয়া কমিটির এসব কার্যক্রম ঐতিহাসিক হিলফুল ফুজুলের কার্যক্রমের সদৃশ।

আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থা আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়ার পরিচালনাধীন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ বর্তমানে মানবতার সংগঠন হিসেবেই সমধিক সমাদৃত। মানবতা শব্দটি যখন বইয়ের মলাটে আবদ্ধ। টকশোর টেবিলে সীমাবদ্ধ। কথিত মানবাধিকার কর্মীদের বক্তব্যের ভাষা মাত্র। জনগণের ভোট হাতিয়ে নেওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধিদের কৌশল যখন শাব্দিক মানবতা। তখন বাস্তবতা পুরোটাই ভিন্ন। বেচারা মানবতা শব্দটি নিজেই যখন অমানবিকতার জাতাকলে পিষ্ট ঠিক তখনই মানবতার বাস্তব সংজ্ঞা হয়ে ভিন্নরূপে আবির্ভাব হলো গাউসিয়া কমিটির। সকলের জানা পৃথিবী নামক মানবগ্রহটি আজ বড় অন্ধকার সময় পার করছে। এ অন্ধকার রাতের গহিন কালোর চেয়েও ঢের কালো। চারদিকে বাজছে এক নিরব যুদ্ধের দামামা। যে যুদ্ধের নাম কভিট-১৯ বা করোনা মহামারি। সে যুদ্ধ কোন দেশের সাথে দেশের নয়; বরং অদৃশ্য মরণঘাতী ভাইরাসের সাথে মানবসভ্যতার। বিপর্যস্ত হচ্ছে মানুষ ও মানবতা। আজ মানুষ যেন মানুষের বড় শত্রু। প্রেমালিঙ্গণ মানা। পাশে বসা নিষেধ। একে অন্যের স্পর্শ যেন বিষের চেয়েও বিষাক্ত। একের স্পর্শে অন্যের কাছে যাওয়া করোনা ভাইরাসের ভয়ে মুহূর্তেই সন্তান ভুলে যাচ্ছে পিতা-মাতার স্বর্গীয় সম্পর্ক। অসুস্থ আপনজন সঙ্গীহারা। অথচ প্রিয় নবীর সুন্নাত হলো অসুস্থ ব্যাক্তির সেবা করা। করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারীর লাশ পড়ে আছে ঘরে বা বাড়ির আঙ্গিনায়, কেউ ছুঁয়েও দেখে না। দাফন-কাফন তো দূরের কথা। অসুস্থ বাবাকে পাওয়া যাচ্ছে রাস্তার দ্বারে। করোনা উপসর্গ আছে বলে মাকে হাসপাতালের গেইটে ফেলে সন্তানের পালায়ন। স্ত্রীকে রেখে স্বামীর দৌড়! মানবতার আর্তনাদে আকাশ বাতাস বারি হয়ে আসছে। টকশোর টেবিল গরম করে এক কথিত মানবিক উপস্থাপিকার জোর দাবি করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের পুড়িয়ে ফেলা হোক!

এমন ঘোষণা একজন প্রকৃত মানবিক মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করলো। এক মানবপ্রেমীর চোখের ঘুম কেড়ে নিল। কী করা যায় মানবতার জন্য, কী করা যায় ভাবতে ভাবতে চিন্তার বন্দরে নোঙর করলো এক অসাধারণ কনসেপ্ট। আর তা হলো করোনায় মৃতের দাফন-কাফন ও সৎকার কার্যক্রম। এ দুঃসাধ্য কর্মযজ্ঞের সহজ স্বপ্নদ্রষ্টা আর কেউ নন, সিরিকোট বাগানের সুবাসিত ফুল, হোসাইনী আদর্শে অনুপ্রাণিত গাউসে পাকের সৈনিক, বিশিষ্ট আইনজ্ঞ, বরেণ্য গবেষক এডভোকেট সৈয়দ মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার। যিনি মানবতার সংগঠন গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত বাংলাদেশের সম্মানিত মুখপাত্র। সেদিন এ বিদগ্ধ সংগঠকের একটি ফেইসবুক স্টাটাস (করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের দাফন-কাফন করবে গাউসিয়া কমিটি) ক্ষোভ, ভয় ও শঙ্কিত আত্মায় প্রশান্তির সূর্যোদয় ঘটায়। সবাই নিজে নিজেকে অভয় দিতে শুরু করে। যাক সর্বহারাদের জন্য অন্তত গাউসিয়া কমিটি আছে। যে ঘোষণা সে কাজ।

তখনও করোনা এমন ভয়াবহ আকার ধারণ করেনি। কেউ কেউ বলছিল করোনা বাংলাদেশে আসবে না। আসলেও ভয়াবহ হবে না। কিন্তু দূরদর্শী গাউসিয়া কমিটির মানবিক টিম সেইদিন থেকে প্রস্তুত ছিল। ২০২০ সালের শুরুতে করোনা সংক্রমণ কম থাকলেও করোনা এখন ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর। আজ পর্যন্ত এ করোয়ায় বাংলাদেশে প্রায় ২০ হাজার তাজাপ্রাণ ঝড়ে গেছে। সংক্রামণের কোন অন্ত নেই। প্রথমে শহরে করোনার বসবাস হলেও এখন করোনা বেশি গ্রামে। সারাবিশ্বে একটিই শ্লোগান ঘরে থাকুন, ঘরে থাকুন এবং ঘরে থাকুন। প্রায় সকলেই যখন ঘরে তখন গাউসিয়া কমিটির মানবিক কর্মীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিবা-রাত্রি বাইরে। সব চাকরিতে ছুটি আছে। আছে বিশ্রাম। কিন্তু এ মানবিক কাজে ঈদের দিনেও ছুটি নেই। নেই রাতেও বিশ্রাম। ছুটি কেউ দিচ্ছি না তা নয়; বরং বলা চলে এ মানবিক কর্মীরা ছুটি নিচ্ছে না! রমজানে সবাই যখন বাহারি ইফতারের পশরা সাজিয়ে বসে, ঠিক তখন গাউসিয়া কমিটির মানবিক কর্মীরা লাশ কিংবা অক্সিজেন নিয়ে ব্যস্ত। ইফতার হিসেবে সামান্য পানিতেই স্বাদ মেটাচ্ছিল। রোজামুখে সবাই যখন বিশ্রামে গাউসিয়া কমিটির মানবিক কর্মীরা তখন লকডাউনে কর্মহীন মানুষের ঘরে ঘরে সাহরি ও ইফতার সামগ্রী নিয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছিল। ঈদুল ফিতরে সবাই যখন নিজের শপিংয়ে ব্যস্ত, ঠিক তখন গাউসিয়া কমিটির কর্মীরা নিজের শপিংয়ের টাকায় অভুক্তের মুখে অন্নদান করে হাসি ফুটাচ্ছিল। ঈদুল আযহায় যখন আমরা কুরবানি পশুর গোশতে জোলে পিঠা ভিজিয়ে অমৃতের স্বাদ নিয়েছিলাম, ঠিক তখন গাউসিয়া কমিটির মানবিক কর্মীরা মুমূর্ষুর মুখে অক্সিজেন সেবা দিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখায়।

এ সেবা কি শুধু মুসলমানদের জন্য? নারে ভাই না। এ সেবা মানুষের জন্য। হোক না সে লাওয়ারিশ, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান। সকলের তরে গাউসিয়া কমিটির এহসান। দিন রাত বিনিময়হীন কর্মে ছুটে চলা। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, ঝড়-তুফান, বৃষ্টি-বাদল, আগুন-পানি কোন বাধায় তাঁদের এ অদম্য ছুটে চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। যে করোনা রোগী ভয়ের কারণ, সে করোনা রোগীর সেবায় ব্যস্ত গাউসিয়া কমিটি। স্বজনের ফেলে দেওয়া ভালোবাসাগুলোকে খুড়িয়ে কাধে তুলে শেষ বিদায়ে উপযুক্ত মর্যাদা দিচ্ছি গাউসিয়া কমিটির মানবিক কর্মীরা। হে আল্লাহ এ মানবিক মানুষগুলোকে নিরাপদে রাখুন। উত্তম প্রতিদান প্রদান করে সম্মানিত করুন উভয় জাহানে। সব চেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, করোনার ভয়ে আপনজন একে অন্যকে ফেলে চলে গেলেও করোনা রোগীকে সেবা দেওয়া গাউসিয়া কমিটির একজন মানবিক কর্মীও করোনা আক্রান্ত হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ।

এ কাজে গাউসিয়া কমিটির চারটি অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি রয়েছে প্রায় তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক। কেউ ফোন করছে রোগী বহনের জন্য। এম্বুলেন্স ছুটে চলছে সেদিকে। একটু নিঃশ্বাসের জন্য চারিদিকে হাহাকার। একটু অক্সিজেন হলে বেঁচে যায় তাজাপ্রাণ। বাঁচার শেষ অবলম্বন অক্সিজেন নিয়ে হাজির গাউসিয়া কমিটি। গভীর রাতেও রোগীর স্বজনের ফোনে বিরক্ত হন না মানবিক টিমের সদস্য মাওলানা আব্দুল্লাহ ও আহসান হাবিব চৌধুরী হাসান। প্রতিদিন ২০ জন মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন-কাফনের কাজ করতে হয় তাঁদের। শুধু মুসলিম নয় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সৎকারেও কোন গড়িমসি নেই। হ্যাঁ, এটাই প্রিয় নবীর দেখানো উত্তম পথ। এটাই মানবতা। হাসপাতাল যখন অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে তখনও গাউসিয়া কমিটি কাদাজল গায়ে মেখে দিয়ে যাচ্ছে সেবা। করে যাচ্ছে দাফন কাফন। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সর্বশেষ ২৫ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২ হাজার ৯২৪ জনসহ সারাদেশে ৩ হাজার ৫৭৯ জন মৃত ব্যক্তির দাফন ও সৎকার সম্পন্ন করেছে গাউসিয়া কমিটি। এদের মধ্যে ৩৭ জন হিন্দু, ৫ জন বৌদ্ধ, ১ জন মারমা, ১ জন খ্রিস্টানসহ মোট ৪৪ জন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী। এছাড়া ৩৭ জন মুক্তিযোদ্ধা, ২৪ জন অজ্ঞাত লাশ এবং ৪ জন কারাবন্দি কয়েদির লাশ দাফন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জীবন্ত সংজ্ঞা উপস্থাপন করেন মানবিক গাউসিয়া কমিটি। এ পর্যন্ত ২১ হাজার ০৩৭ জন করোনা রোগীকে জরুরি অক্সিজেন সেবা দেওয়া হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৬৯ জনকে। প্রায় ১২০০০ জনকে দেওয়া হয়েছে ফ্রি চিকিৎসা সেবা। প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ কোভিড-১৯ টেস্ট টিমের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। অন্ধের যষ্টি গাউসিয়া কমিটি এ করোনাকালে প্রায় আড়াই লাখ পরিবারকে দিয়েছে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা।

বিভিন্ন মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও ইসলামী সংগঠনগুলো মুহাম্মদ (দ.)’র রাজনৈতিক জীবন নিয়ে হাঁক ডাক দেখালেও মানবসেবা ও সামাজিক কাজে তাদের অনুপস্থিতি আমাদের আশাহত করে। পাশাপাশি মহানবী (দ.)’র আশেক পরিচয় দেয়া বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশাল বিশাল আয়োজন হলেও হুজুর পাকের দেখানো মানবসেবার আদর্শিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম চোখে পড়ে না। অথচ মহানবী (দ)’র আদর্শের প্রতিফলন ছাড়া শান্তির কথা কল্পনাও করা যায় না। পবিত্র কুরআনের ভাষায়, “তোমাদের জন্য রাসূল (দ.)’র জীবনেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।” আরও এসেছে, “রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা বর্জন কর। আর আল্লাহকে ভয় কর। অপরাধীদের জন্য তিনি কঠোর শাস্তিদাতা।” তাই আসুন! আমরা নবীজির সাংগঠনিক সুন্নাতকে লালন করি। প্রিয় নবীর হিলফুল ফুজুলের অনুপ্রেরণায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষের কল্যাণে নিজের মেধা-শ্রম ব্যয় করি। শেষ বিদায়ের সাথী গাউসিয়া কমিটির এ মানবিক কর্মযজ্ঞে নিজেকে সম্পৃক্ত করে গাউসে জামান তৈয়্যব শাহ (রহ.)’র বেলায়তের খাতায় নাম লেখাই। তবেই ইসলাম স্বমহিমায় বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। তবেই বুক চেতিয়ে বলা যাবে আমরাই শ্রেষ্ঠ নবীর গর্বিত উম্মত।