প্রবন্ধ

শির দিলেন তবু এজিদের হাতে হাত দেন নি

সারদাদ না দাদ দাস্তে দার দস্তে ইয়াজিদ

— শির দিলেন তবু এজিদের হাতে হাত দেন নি

কি হতো যদি মওলা হোসাইন (আঃ) সেদিন এজিদের কথা মতো তার হাতে বায়াত নিতেন? মওলা হোসাইন (আঃ) নিজে বাঁচতেন,তাঁর পুরো পরিবার বেঁচে যেতো। ইতিহাসে কারবালা একটি স্থান থেকে পরিবর্তিত হয়ে কখনোই একটি শোকাবহ, বেদনাদায়ক ঘটনায় রূপ নিতো না। তবে ইসলামের সম্পুর্ণ রূপরেখায় পাল্টে যেতো!!

কিন্তু না মওলা হোসাইন(আঃ) সেই জন নন। ইনি মোস্তফার বাগানের ফুল। তিনি ইমামুল মুরসালীন (দঃ)’র নাতি। তাঁর আম্মাজান জান্নাতী নারীদের সর্দার। তাঁর আব্বাজান মুমিনদের মাওলা, আক্বা(দঃ)’র জ্ঞান রাজ্যের প্রবেশদ্বার। তিনি কি করে পাপীষ্ট এজিদের হাতে বায়াত নিতেন!
কিভাবে নানাজানের ইসলামের বিকৃতিতে অংশ নিতেন। তাঁর পবিত্র হাত মোবারকেই তো ইসলামের নিরাপত্তা। খাজা গরীবে নেওয়াজ বলেছিলেন — “দ্বীন পানাহ আস্ত হোসাইন”

উনি মোস্তফার পবিত্র জাতে পাক!
সেদিন মওলা হোসাইন (আঃ) বায়াত নিলেই এজিদ তাঁকে দলিল বানিয়ে নিজের সকল কুকর্মের মাধ্যমে ইসলামের পুরো রূপরেখায় বদলে দিয়ে যেতো।

মওলা হোসাইন (আঃ) নিজের মস্তক দিয়ে আসতে পারেন, কিন্তু নানাজানের(দঃ) ইসলাম এজিদের মতো ফাসিকের হাতে ধ্বংস হওয়া কখনোই মেনে নিতে পারেন না। ইসলামের নামে অন্যায় অবিচারের এজিদিয়াত প্রতিষ্ঠা করে নির্যাতন, দাঙ্গা-হাঙ্গামার বীজ বপন করা হবে ; ইমাম তা কখনোই মেনে নিতে পারতেন না।

তাইতো,সেদিন এজিদের হাতে বায়াত না নিয়ে কারবালার ময়দানে সীমারের তলোয়ার উপেক্ষা করে মহান রব্বুল আলামীনের দরবারে নামাজে সিজদায় রত অবস্থায় ফরিয়াদ করে নিজের কোরবানির সওয়াবটুকুও আমাদের মতো গরীব উম্মতের জন্য দান করে গিয়েছিলেন। শুধুমাত্র তাঁর নানাজান(দঃ)’র ইসলামকে, ইসলামের সুউচ্চ মর্যাদাকে সমুন্নত রাখতে।

সর্বোপরি উম্মতে মোহাম্মদীকে কিয়ামত পর্যন্ত শান্তির ইসলাম,ভালোবাসার ইসলাম, মর্যাদায় পরিপূর্ণ নীতিমালা উপহার দিতে মওলা হোসাইন (আঃ) কারবালার ময়দানে এই ত্যাগ দিয়েছিলেন।
এই মহান সত্তার প্রতি জানাই লক্ষ সালাম।

কিন্তু মওলা হোসাইন (আঃ) এর এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া হুসাইনি আদর্শ আমাদের বুকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে নিতে পারি নি। মর্যাদা দিতে পারিনি হোসাইনের শাহাদাতের। পারতাম যদি আমরা ফিতনা আঁকড়ে এভাবে দূর থেকে দূরান্তরিত হতাম না। কারবালা তো প্রেমময় ত্যাগের দর্শন। কিন্তু এই প্রেম দিতে কে রাজি আর ত্যাগের মহিমা সে তো অহংকারেই শেষ। আমাদের সংস্কৃতিতে মুহররমের দেশি মুরগি, বিনি চালের গল্পটা মানবিকতার হওয়া প্রয়োজন ছিল। মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে মুরগি চেয়ে নিয়ে খাওয়ার মতো নীচ মানসিকতা হুসাইনি আদর্শের সম্পুর্ন পরিপন্থী। এসব নিকৃষ্টতা দূর করতেই মওলা হোসাইনের শাহাদাতবরণ।

তাই এ মাসে আহলে বাইতের আত্মত্যাগের কথা বারে বারে স্মরিয়ে দিয়ে কারবালা দর্শনটুকু সমাজের সর্বসাধারণের মনে গেঁথে দিতে দায়িত্বশীল সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা এখন অনেকটা বাধ্যতামূলক।

পৃথিবীতে এমন কোন নাতি আছে যে নানাজানের আদর্শ, নানাজানের দর্শন বাচাঁতে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে পারে!!

ইসলামের আদিলগ্ন থেকে অনেকেই শাহাদাতের এই অমৃত সুধা পান করেছেন। কিন্তু একটি দর্শন রক্ষার্থে পরিবার পরিজন সহ নিজের জীবন এভাবে বিসর্জন দেওয়ার ইতিহাস শুধুমাত্র কারবালার ময়দানেই ঘটেছিল। সুতরাং, মওলা হোসাইনের শাহাদাতের মর্যাদা দুনিয়ার অন্য কোনো শহীদের মতো নয়, অন্য কোনো শহীদের সমতুল্য নয়৷
— ‘না কোয়ি দোসরা হোসাইন হ্যা’

এজিদসহ তার লালিত ইবনে যিয়াদ, সীমাররা সেদিন মওলা হোসাইন (আঃ) কে পিপাসার্থ রেখে শাহাদাত সুধা পান করিয়েছিল। কিন্তু আজ এতো বছর পরেও হোসাইন প্রেমিকদের গলা শুকিয়ে নেই। ভাবতেই অবাক লাগে।

ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি ১০ মুহররমের এই দিনে সবার বাসায় ভালো খাওয়া দাওয়া আয়োজন করা হয়৷ এর প্রেক্ষাপট হয়তো ভিন্ন কিছু। কিন্তু একটা ব্যাপার কিন্তু ঘটছে। যেই দিনে এজিদিরা ইমামের গলারুদ্ধ করতে চেয়েছিল, যেই দিনে তারা ইমামকে পিপাসার্থ করেছিল। আজকে সেই দিনেই ইমামের উছিলায় আমরা খাই এবং আমরা খাওয়ায়।

ফাতেহা নেওয়াজির এই ধারা যূগ যূগ ধরে চলতে থাকুক মওলা হোসাইন (আঃ)’র আদর্শের পতাকাবাহী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআত এর মুক্তি ধারায়।

শান্তিপূর্ণ ভাবে, মর্যাদাগত ভাবে, শৃঙ্খলা বজায় রেখে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রচেষ্টাও কোনো জালিমের বিরুদ্ধে জিহাদ করা যায়। এই যে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, এটিই কারবালার নীতিগত ভাবাদর্শ। আজকের জিহাদি দাবিদার এজিদ প্রেতাত্মারা কারবালার এই মহান আদর্শ বুকে নিতে পারেনি বলেই কথায় কথায় উগ্রচেতা দাঙ্গা হাঙ্গামা বাধায়। এরা বিষাক্ত ঠিক এজিদের মতোই।

ন্যায় ভিত্তিক শান্ত, শৃঙ্খল, সৌহার্দ্যপূর্ণ সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টির মূল হাতিয়ার হোক কারবালা দর্শন।

ওঁহ দ্বীন কা সারদার থা
সারদার হী রাহা
ছের দে দিয়া ইয়াজিদকো
ল্যাখিন দিয়া না হাত।

 

 

হক্ব হোসাইন, মওলা হোসাইন (আঃ)

লেখক- সহ সমন্বয়ক, কুঁড়েঘর বাংলাদেশ (পাঠশালা ডিপার্টমেন্ট)