জুমার-খুৎবা

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’র প্রতি দরুদ-সালামের ফযীলত

অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভি

২১ রবিউল আউয়াল|১৪৪৩ হিজরি|শুক্রবার|২৯ অক্টোবর’২১

২১ রবিউল আউয়াল|১৪৪৩ হিজরি|শুক্রবার|২৯ অক্টোবর’২১

 

 

“রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’র প্রতি দরুদ-সালামের ফযীলত”

পবিত্র কুরআনের আলোকে দরুদ-সালামের গুরুত্ব:

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র উপর দরুদ-সালাম পাঠ করা এক বরকতময় ইবাদত। মহান আল্লাহ তা’আলা দরুদ-সালামের বিধান সম্পর্কিত সুস্পষ্ট একটি আয়াত অবতীর্ণ করেন, “এরশাদ হয়েছে, নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফিরিস্তাগণ নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র উপর দরুদ পাঠ করেন, হে মু’মীনগণ তোমরাও তাঁর উপর যথাযথভাবে দরুদ ও সালাম পাঠ করো।” (সূরা: আহযাব:৩৩, আয়াত: ৫৬)

 

 

দরুদ শরীফ মূলত:

প্রিয় রাসূলের প্রতি সালামীর নামান্তর। এর উপকারিতা অপরিসীম গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনাতীত। দরুদ সালাম পাঠ করা প্রিয় নবীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এক মহান উৎকৃষ্ট নিদর্শন। পবিত্র কুরআনের কোন আয়াতে আল্লাহ তা’আলা এ কথা বলেননি আমি নামায পড়ি ও কুরআন পড়ি, তোমরাও পড়ো। কিন্তু দরুদ-সালামের ব্যাপারে কতই চমৎকার বলেছেন, আমিও আমার ফিরিস্তারা আমার নবীর উপর দরুদ-সালাম পাঠ করি, তোমরাও দরুদ-সালাম পাঠ করো।

 

 

হাদীস শরীফের আলোকে দরুদ সালামের গুরুত্ব:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ শরীফ পাঠ করবে আল্লাহ তা’আলা তার উপর দশটি রহমত অবতীর্ণ করবেন, দশটি গুণাহ ক্ষমা করবেন, তাঁর দশটি মর্যাদা বুলন্দ হবে। (নাসায়ী শরীফ, খন্ড:১ম, পৃ: ১৪৫)

 

 

দরুদ শরীফের ওসীলায় দুআ কবুল হয়:

নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাত, দান-সদকা, কুরআন তিলাওয়াত প্রতিটি বরকতময় আমল পুণ্যময় ইবাদত, কিন্তু এসব ইবাদত তখনই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় যখন তাঁর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র উপর দরুদ-সালাম পাঠ করা হয়। হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই দুআ আসমান ও জমীনের মধ্যখানে ঝুলন্ত থাকে তোমার নবীর উপর দরুদ পাঠ না করা পর্যন্ত কিছুই উপরে উঠবেনা। (তিরমিযী শরীফ)

 

 

নবীজির প্রতি দরুদ-সালাম না পড়া কৃপণতার পরিচয়:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র বরকতময় নাম মুবারক শ্রবণ করা মাত্র তাঁর নামের সম্মানে দরুদ শরীফ পাঠ করা মু’মীনের দায়িত্ব। নবী প্রেমের পরিচায়ক, পক্ষান্তরে এর বিরোধীতা করা দরুদ শরীফ পাঠ থেকে বিরত থাকা দরুদ শরীফ প্রসঙ্গে মুসলমানদেরকে নিরুৎসাহিত করা কৃপণতার পরিচায়ক। হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ঐ ব্যক্তি বড় কৃপন যার নিকট আমার নাম উল্লেখ করা হয় অথচ সে আমার উপর দরুদ পাঠ করেনা। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, পৃ: ৮৭)

 

 

দরুদের ওসীলায় বান্দা আল্লাহর নৈকট্য পাবে:

বান্দার জন্য আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্তি বড় সৌভাগ্যের ও আনন্দের। দরুদ শরীফ গুনাহের কাফফারা স্বরূপ। দরুদ সালাম পাঠে আমল পবিত্র হয়। দরুদ পাঠ কারীর জন্য আল্লাহর রহমত ও সন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ হয়। দরুদ শরীফ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে উত্তম ও প্রিয় আমল। দরুদ পাঠে অন্তর পাপ পঙ্কিলতা ও কালিমামুক্ত হয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ঐ ব্যক্তিই কিয়ামতের দিবসে সকলের চেয়ে আমার অধিক নিকটে আসবে যে আমার উপর অধিকহারে দরুদ পাঠ করবে। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, পৃ: ৮৬)

 

 

দরুদ শরীফ সম্পর্কিত মাসআলা:

আল্লামা ছাখাবী (র.) বর্ণনা করেন, দরুদ শরীফ পাঠ সম্পর্কিত কুরআনের আয়াতের নির্দেশমতে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর জীবনে একবার দরুদ শরীফ পাঠ করা ফরয।
হযরত ইমাম কুরতুবী (র.) বলেন, জীবনে একবার দরুদ শরীফ পাঠ করা ওয়াজিব।

 

 

দরুদ সালামের প্রতি উৎসাহ সৃষ্টির জন্য দরুদ-সালাম সম্পর্কিত আয়াত পড়া উত্তম। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর আধিকহারে দরুদ পাঠ করা সাওয়াবের কাজ। (ফাতওয়া-এ শামী, ১ম খন্ড, পৃ: ৬০৬, ওয়াকারুল ফাওয়া ১ম খন্ড, পৃ:১২৩)

অধিক পরিমাণ দরুদ পাঠে গুনাহ ক্ষমা হয়:

 

 

প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত উবাই বিন কাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহর খিদমতে আরজ করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আপনার উপর অধিক পরিমাণ দরুদ পাঠ করি। আমাকে বলুন, কি পরিমাণ দরুদ পাঠ করব। নবীজি বললেন, (যে পরিমাণ) তোমার ইচ্ছা, আমি বললাম আমার সময়ের এক চতুর্থাংশ, নবীজি উত্তর দিলেন, যে পরিমাণ তোমার ইচ্ছা, তবে তার চেয়ে অধিক পড়লে তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আরজ করলাম, আমার সময়ের অর্ধেক দরুদ পাঠে ব্যয় করব নবীজি এরশাদ করেন, যে পরিমাণ তুমি চাও। তবে আরো অধিক পড়লে তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম আমার সময়ের দুই তৃতীয়াংশ সময় ব্যয় করবো হুযুর এরশাদ করলেন, তোমার যত ইচ্ছে পড়তে পার। আরো অধিক পড়লে তোমার কল্যাণ হবে, আরজ করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার সম্পূর্ণ সময়টা দরুদ পাঠে ব্যয় করব। নবীজি এরশাদ করলেন তা হলে তোমার সার্বিক চিন্তা ও পেরেশানী বিদূরীত হবে। তোমার গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (মিশকাত, পৃ: ৮৬, আনোয়ারুল বায়ান, খন্ড: ২য়, পৃ: ১১)

ফেরেস্তারা স্বর্ণের নির্মিত কলমে দরুদ শরীফ লিপিবদ্ধ করেন:

 

 

হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আল্লাহর কিছু নির্দিষ্ট ফেরেস্তা রয়েছে। যারা প্রতি বৃহস্পতিবার ও জুমার দিনে আসমান থেকে অবতরণ করেন। তাদের হাতে থাকে স্বর্ণের নির্মিত কলম, আরো থাকবে রৌপ্যের তৈরী দুআত ও নূরের কাগজ, তারা কেবল মাত্র প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র উপর পঠিত দরুদ শরীফই লিপিবদ্ধ করেন। (কানযুল উম্মাল)

দরুদ শরীফ না পড়ার পরিণতি:

 

 

এক ব্যক্তি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র নাম মুবারক শুনে দরুদ শরীফ পাঠে কৃপণতা করল, তার মুখ বোবা হয়ে গেল, চক্ষু অন্ধ হয়ে গেল, লোকটি গোসল খানার নালায় পতিত হয়ে মারা গেল। (সাআদাতুত দ্বারাঈন, পৃ: ১৪৪)

হযরত কুতুব উদ্দিন বখতিয়ার কাকী (র.)’র দরুদ শরীফ:

 

 

হযরত শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভি (র.) বর্ণনা করেন, হরযত খাজা কুতুব উদ্দীন বখতিয়ার কাকী (রাহমাতুল্লাহ আলায়হি) প্রতি রাতে তিন হাজার বার দরুদ শরীফ পাঠ করতেন যখন তাঁর বিবাহ অনুষ্ঠিত হল তখন নির্ধারিত তিন রাতে দরুদ শরীফ পড়তে পারেননি, রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক ব্যক্তিকে স্বপ্নযোগে জানিয়ে দিলেন বখতিয়ার কাকীকে আমার সালাম পৌছিয়ে দিও, তাঁকে বলে দিও, প্রতি রাতে তিনি দরুদ শরীফের যে উপহার আমার নিকট প্রেরণ করতেন তিনরাত পর্যন্ত তা আমার নিকট পৌছেনি। (আখবারুল আখইয়ার, পৃ: ৩২৫)

হযরত ওমর বিন আবদুল আজীজের দরুদ শরীফ:

 

 

আমীরুল মু’মিনীন হযরত ওমর বিন আবদুল আজীজ (রা.) সিরিয়া থেকে মদীনা মনোওয়ারা দূত প্রেরণ করতেন যিনি হুযুর পুরনূর সরকারে দোআলম সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লামের রওজা শরীফ পৌছে আমীরুল মু’মিনীনের পক্ষ থেকে দরুদ সালাম পেশ করতেন (জযবুল কুলুব, পৃ: ২৩২)

দরুদ শরীফ শাফায়াত লাভের ওসীলা:

 

 

হযরত ইবরাহীম বিন আলী বিন আতীয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি স্বপ্নযোগে ছরকারে দোআলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র যিয়ারত লাভ করি, নবীজির খিদমতে আরজ করলাম এয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আপনার শাফায়াত প্রার্থনা করছি। নবীজি এরশাদ করেছেন, আমার উপর অধিকহারে দরুদ শরীফ পাঠ করো। (সাআদাতুদ দ্বারাঈন, আনোয়ারুল বয়ান, খন্ড: ২য়, পৃ: ২৯)

“দালায়িলুল খায়রাত” প্রণেতা ইন্তেকালের পরও অক্ষত:

 

 

দরুদ শরীফের ফযীলত সংক্রান্ত প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “দালায়িলুল খায়রাত” শরীফের লিখক হযরত আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ ইবনে সোলাইমান জাযুলী (রা.)’র ইন্তেকালের ৭৭ বৎসর পর তাঁর দেহ মুবারক কবর থেকে উত্তোলন করে মরক্কো শহরে স্থানান্তরিত করা হল, তাঁর দেহ মোবারক সম্পূর্ণ সতেজ ও অক্ষত অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া গেল, চেহারা মুবারকে আঙ্গুলী স্থাপন করলে স্থানটি সাদা হয়ে গেল। এটি ছিল নবীজির উপর দরুদ শরীফের বরকতের ওসীলা।

মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের কে সকল প্রকার কল্যাণ অর্জনের সহায়ক বরকতময় উত্তম আমল দরুদ সালাম অধিক হারে পাঠ করার তাওফিক নসীব করুন। আমীন!

 

 

লেখক : অধ্যক্ষ, মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল (ডিগ্রী),বন্দর, চট্টগ্রাম;
খতীব, কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ।

 

“রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’র প্রতি দরুদ-সালামের ফযীলত”

পবিত্র কুরআনের আলোকে দরুদ-সালামের গুরুত্ব:

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র উপর দরুদ-সালাম পাঠ করা এক বরকতময় ইবাদত। মহান আল্লাহ তা’আলা দরুদ-সালামের বিধান সম্পর্কিত সুস্পষ্ট একটি আয়াত অবতীর্ণ করেন, “এরশাদ হয়েছে, নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফিরিস্তাগণ নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র উপর দরুদ পাঠ করেন, হে মু’মীনগণ তোমরাও তাঁর উপর যথাযথভাবে দরুদ ও সালাম পাঠ করো।” (সূরা: আহযাব:৩৩, আয়াত: ৫৬)

 

 

দরুদ শরীফ মূলত:

প্রিয় রাসূলের প্রতি সালামীর নামান্তর। এর উপকারিতা অপরিসীম গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনাতীত। দরুদ সালাম পাঠ করা প্রিয় নবীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এক মহান উৎকৃষ্ট নিদর্শন। পবিত্র কুরআনের কোন আয়াতে আল্লাহ তা’আলা এ কথা বলেননি আমি নামায পড়ি ও কুরআন পড়ি, তোমরাও পড়ো। কিন্তু দরুদ-সালামের ব্যাপারে কতই চমৎকার বলেছেন, আমিও আমার ফিরিস্তারা আমার নবীর উপর দরুদ-সালাম পাঠ করি, তোমরাও দরুদ-সালাম পাঠ করো।

 

 

হাদীস শরীফের আলোকে দরুদ সালামের গুরুত্ব:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ শরীফ পাঠ করবে আল্লাহ তা’আলা তার উপর দশটি রহমত অবতীর্ণ করবেন, দশটি গুণাহ ক্ষমা করবেন, তাঁর দশটি মর্যাদা বুলন্দ হবে। (নাসায়ী শরীফ, খন্ড:১ম, পৃ: ১৪৫)

 

 

দরুদ শরীফের ওসীলায় দুআ কবুল হয়:

নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাত, দান-সদকা, কুরআন তিলাওয়াত প্রতিটি বরকতময় আমল পুণ্যময় ইবাদত, কিন্তু এসব ইবাদত তখনই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় যখন তাঁর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র উপর দরুদ-সালাম পাঠ করা হয়। হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই দুআ আসমান ও জমীনের মধ্যখানে ঝুলন্ত থাকে তোমার নবীর উপর দরুদ পাঠ না করা পর্যন্ত কিছুই উপরে উঠবেনা। (তিরমিযী শরীফ)

 

 

নবীজির প্রতি দরুদ-সালাম না পড়া কৃপণতার পরিচয়:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র বরকতময় নাম মুবারক শ্রবণ করা মাত্র তাঁর নামের সম্মানে দরুদ শরীফ পাঠ করা মু’মীনের দায়িত্ব। নবী প্রেমের পরিচায়ক, পক্ষান্তরে এর বিরোধীতা করা দরুদ শরীফ পাঠ থেকে বিরত থাকা দরুদ শরীফ প্রসঙ্গে মুসলমানদেরকে নিরুৎসাহিত করা কৃপণতার পরিচায়ক। হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ঐ ব্যক্তি বড় কৃপন যার নিকট আমার নাম উল্লেখ করা হয় অথচ সে আমার উপর দরুদ পাঠ করেনা। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, পৃ: ৮৭)

 

 

দরুদের ওসীলায় বান্দা আল্লাহর নৈকট্য পাবে:

বান্দার জন্য আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্তি বড় সৌভাগ্যের ও আনন্দের। দরুদ শরীফ গুনাহের কাফফারা স্বরূপ। দরুদ সালাম পাঠে আমল পবিত্র হয়। দরুদ পাঠ কারীর জন্য আল্লাহর রহমত ও সন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ হয়। দরুদ শরীফ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে উত্তম ও প্রিয় আমল। দরুদ পাঠে অন্তর পাপ পঙ্কিলতা ও কালিমামুক্ত হয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ঐ ব্যক্তিই কিয়ামতের দিবসে সকলের চেয়ে আমার অধিক নিকটে আসবে যে আমার উপর অধিকহারে দরুদ পাঠ করবে। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, পৃ: ৮৬)

 

 

দরুদ শরীফ সম্পর্কিত মাসআলা:

আল্লামা ছাখাবী (র.) বর্ণনা করেন, দরুদ শরীফ পাঠ সম্পর্কিত কুরআনের আয়াতের নির্দেশমতে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর জীবনে একবার দরুদ শরীফ পাঠ করা ফরয।
হযরত ইমাম কুরতুবী (র.) বলেন, জীবনে একবার দরুদ শরীফ পাঠ করা ওয়াজিব।

 

 

দরুদ সালামের প্রতি উৎসাহ সৃষ্টির জন্য দরুদ-সালাম সম্পর্কিত আয়াত পড়া উত্তম। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর আধিকহারে দরুদ পাঠ করা সাওয়াবের কাজ। (ফাতওয়া-এ শামী, ১ম খন্ড, পৃ: ৬০৬, ওয়াকারুল ফাওয়া ১ম খন্ড, পৃ:১২৩)

অধিক পরিমাণ দরুদ পাঠে গুনাহ ক্ষমা হয়:

 

 

প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত উবাই বিন কাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহর খিদমতে আরজ করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আপনার উপর অধিক পরিমাণ দরুদ পাঠ করি। আমাকে বলুন, কি পরিমাণ দরুদ পাঠ করব। নবীজি বললেন, (যে পরিমাণ) তোমার ইচ্ছা, আমি বললাম আমার সময়ের এক চতুর্থাংশ, নবীজি উত্তর দিলেন, যে পরিমাণ তোমার ইচ্ছা, তবে তার চেয়ে অধিক পড়লে তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আরজ করলাম, আমার সময়ের অর্ধেক দরুদ পাঠে ব্যয় করব নবীজি এরশাদ করেন, যে পরিমাণ তুমি চাও। তবে আরো অধিক পড়লে তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম আমার সময়ের দুই তৃতীয়াংশ সময় ব্যয় করবো হুযুর এরশাদ করলেন, তোমার যত ইচ্ছে পড়তে পার। আরো অধিক পড়লে তোমার কল্যাণ হবে, আরজ করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার সম্পূর্ণ সময়টা দরুদ পাঠে ব্যয় করব। নবীজি এরশাদ করলেন তা হলে তোমার সার্বিক চিন্তা ও পেরেশানী বিদূরীত হবে। তোমার গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (মিশকাত, পৃ: ৮৬, আনোয়ারুল বায়ান, খন্ড: ২য়, পৃ: ১১)

ফেরেস্তারা স্বর্ণের নির্মিত কলমে দরুদ শরীফ লিপিবদ্ধ করেন:

 

 

হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আল্লাহর কিছু নির্দিষ্ট ফেরেস্তা রয়েছে। যারা প্রতি বৃহস্পতিবার ও জুমার দিনে আসমান থেকে অবতরণ করেন। তাদের হাতে থাকে স্বর্ণের নির্মিত কলম, আরো থাকবে রৌপ্যের তৈরী দুআত ও নূরের কাগজ, তারা কেবল মাত্র প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র উপর পঠিত দরুদ শরীফই লিপিবদ্ধ করেন। (কানযুল উম্মাল)

দরুদ শরীফ না পড়ার পরিণতি:

 

 

এক ব্যক্তি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র নাম মুবারক শুনে দরুদ শরীফ পাঠে কৃপণতা করল, তার মুখ বোবা হয়ে গেল, চক্ষু অন্ধ হয়ে গেল, লোকটি গোসল খানার নালায় পতিত হয়ে মারা গেল। (সাআদাতুত দ্বারাঈন, পৃ: ১৪৪)

হযরত কুতুব উদ্দিন বখতিয়ার কাকী (র.)’র দরুদ শরীফ:

 

 

হযরত শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভি (র.) বর্ণনা করেন, হরযত খাজা কুতুব উদ্দীন বখতিয়ার কাকী (রাহমাতুল্লাহ আলায়হি) প্রতি রাতে তিন হাজার বার দরুদ শরীফ পাঠ করতেন যখন তাঁর বিবাহ অনুষ্ঠিত হল তখন নির্ধারিত তিন রাতে দরুদ শরীফ পড়তে পারেননি, রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক ব্যক্তিকে স্বপ্নযোগে জানিয়ে দিলেন বখতিয়ার কাকীকে আমার সালাম পৌছিয়ে দিও, তাঁকে বলে দিও, প্রতি রাতে তিনি দরুদ শরীফের যে উপহার আমার নিকট প্রেরণ করতেন তিনরাত পর্যন্ত তা আমার নিকট পৌছেনি। (আখবারুল আখইয়ার, পৃ: ৩২৫)

হযরত ওমর বিন আবদুল আজীজের দরুদ শরীফ:

 

 

আমীরুল মু’মিনীন হযরত ওমর বিন আবদুল আজীজ (রা.) সিরিয়া থেকে মদীনা মনোওয়ারা দূত প্রেরণ করতেন যিনি হুযুর পুরনূর সরকারে দোআলম সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লামের রওজা শরীফ পৌছে আমীরুল মু’মিনীনের পক্ষ থেকে দরুদ সালাম পেশ করতেন (জযবুল কুলুব, পৃ: ২৩২)

দরুদ শরীফ শাফায়াত লাভের ওসীলা:

 

 

হযরত ইবরাহীম বিন আলী বিন আতীয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি স্বপ্নযোগে ছরকারে দোআলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র যিয়ারত লাভ করি, নবীজির খিদমতে আরজ করলাম এয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আপনার শাফায়াত প্রার্থনা করছি। নবীজি এরশাদ করেছেন, আমার উপর অধিকহারে দরুদ শরীফ পাঠ করো। (সাআদাতুদ দ্বারাঈন, আনোয়ারুল বয়ান, খন্ড: ২য়, পৃ: ২৯)

“দালায়িলুল খায়রাত” প্রণেতা ইন্তেকালের পরও অক্ষত:

 

 

দরুদ শরীফের ফযীলত সংক্রান্ত প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “দালায়িলুল খায়রাত” শরীফের লিখক হযরত আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ ইবনে সোলাইমান জাযুলী (রা.)’র ইন্তেকালের ৭৭ বৎসর পর তাঁর দেহ মুবারক কবর থেকে উত্তোলন করে মরক্কো শহরে স্থানান্তরিত করা হল, তাঁর দেহ মোবারক সম্পূর্ণ সতেজ ও অক্ষত অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া গেল, চেহারা মুবারকে আঙ্গুলী স্থাপন করলে স্থানটি সাদা হয়ে গেল। এটি ছিল নবীজির উপর দরুদ শরীফের বরকতের ওসীলা।

মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের কে সকল প্রকার কল্যাণ অর্জনের সহায়ক বরকতময় উত্তম আমল দরুদ সালাম অধিক হারে পাঠ করার তাওফিক নসীব করুন। আমীন!

 

 

লেখক : অধ্যক্ষ, মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল (ডিগ্রী),বন্দর, চট্টগ্রাম;
খতীব, কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ।