প্রবন্ধ

জ্ঞানের সার্চ ইঞ্জিন আ’লা হযরত ও মাদানি আফতাব কানযুল ঈমান

এম সাইফুল ইসলাম নেজামী আলকাদেরী

সময়টা এখন প্রযুক্তির। সার্চ ইঞ্জিন Google সম্পর্কে জানেন না, বিশ্বায়নের এ যুগে তেমন মানুষ সংখ্যায় অপ্রতুল। বর্তমানে ইন্টারনেটে যেকোন তথ্য খোঁজার সহজ মাধ্যম হলো গুগল। অনুসন্ধানী মানুষের বদ্ধমূল ধারণা, সার্চ ইঞ্জিন গুগলে সবধরণের তথ্য পাওয়া যায়। তাই সচেতন মহল গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য প্রয়োজন হলেই সার্চ ইঞ্জিন গুগলের শরণাপন্ন হয়। আমরাও বিভিন্নভাবে গুগল থেকে তথ্যসেবা গ্রহণ করি। অবশ্য গুগল ছাড়াও আরও কয়েকটি সার্চ ইঞ্জিন রয়েছে। কিন্তু অধিক সমাদৃত হলো গুগল। তবে এই গুগল থেকে পাওয়া তথ্য সঠিক কিংবা বেঠিক হতে পারে।

আমরা তথ্য-প্রযুক্তির যুগে এসে সার্চ ইঞ্জিনের সাথে পরিচিত হলেও; প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের বহুকাল আগে মহান আল্লাহ অনুসন্ধিৎসু বান্দাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে একটি জীবন্ত সার্চ ইঞ্জিন প্রেরণ করেছিলেন। যে সার্চ ইঞ্জিনকে নিখিল দুনিয়া ইমাম আ’লা হযরত নামে চিনে। ১২৭২ হিজরীতে নেওয়া জ্ঞানের আটলান্টিক মহাসাগর ইমাম আ’লা হযরত এমন নির্ভরযোগ্য সার্চ ইঞ্জিন ছিলেন, যিনি নিজের জন্মের হিজরী সাল কুরআনের পাক থেকে খুঁজে বের করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ। সাথে-সাথে ইন্তেকালের পূর্বাভাস তথা সালও কুরআন থেকে আগাম খুঁজে নিয়ে দিদারে ইলাহির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন। মানবসৃষ্ট সার্চ ইঞ্জিনগুলোর দেওয়া তথ্যে সন্দেহের অবকাশ থাকলেও; সুনিপুণ স্রষ্টার সৃষ্ট সার্চ ইঞ্জিন ইমাম আহমদ রেজার দেওয়া তথ্য ছিল নির্ভুল। খোদাদ্রোহীদের এক ঘনঘোর অমানিশা যখন উপমহাদেশের আকাশকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল, ঠিক সে সময় আল্লাহ’র রহমত স্বরূপ জ্ঞানের আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে ভারতের বাঁশ বেরেলীতে জন্ম গ্রহণ করেন হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (রহঃ)। ১০ই শাবান ১২৭২ হিজরী মোতাবেক ১৮৫৬ ইং বেরেলীর এক খান্দানী পাঠান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সিপাহী বিদ্রোহের ১ বৎসর পূর্বেই তাঁর জন্ম। সুতরাং পরবর্তী আযাদী আন্দোলনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ২৫ শে সফর ১৩৪০ হিজরী মোতাবেক ১৯২১ ইং ৬৮ বছরের বর্ণাঢ্য দুনিয়াবি জীবনের ইতি (ইন্তেকাল) ঘটে।

 

দুনিয়ার সব সার্চ ইঞ্জিনের শক্তি হলো ইন্টারনেট। আর মহান প্রভুর সার্চ ইঞ্জিন আ’লা হযরতের পাওয়ার হাউস ছিলো হুব্বে ইলাহ আর ইশকে মোস্তফা (দ.)। জ্ঞানের এনসাইক্লোপিডিয়া ইমাম আ’লা হযরতের একটি সত্যবাণীতে পাওয়া যায় এর সত্যতা। তিনি বলেন, ‘আমার কলিজাটি দু’টুকরো করলে একভাগে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অন্যভাগে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ লেখা দেখতে পাবেন।’ এ উক্তি সন্দেহাতীতভাবে খোদাভীতি আর রাসূলপ্রীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। দুনিয়াবি সার্চ ইঞ্জিনে নিদিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে খোঁজ করার সুযোগ থাকলেও আমার ইমামের সীমাহীন মেমোরিতে ছিল অর্ধশত সাবজেক্টের উপর দেড় হাজার গ্রন্থের বর্ণাঢ্য তথ্যভাণ্ডার। প্রযুক্তি নির্ভর সার্চ ইঞ্জিন অন্যের দেওয়া তথ্য উপস্থাপন করে মাত্র। আর আ’লা হযরত নামক সমৃদ্ধ সার্চ ইঞ্জিনটি আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানে নিজেই সৃষ্টি করেছেন তত্ত্বভাণ্ডার। আ’লা হযরত নামক সার্চ ইঞ্জিনে খুঁজে পাবেন ইলমুল কুরআন, ইলমুল হাদীস, ইলমে তাফসীর, ইলমে উসুলে হাদীস, ইলমে আসমাউল রিজাল (হাদীস বর্ণনাকারীদের জীবনী), ইলমে ফিকহ, ইলমে উসুলে ফিকহ, ইলমে আকাঈদ ওয়াল কালাম (দর্শন), ইলমে ফারায়েজ, ইলমে নাহু, ইলমে সরফ, ইলমে মা’আনী, ইলমে বয়ান, ইলমে বদী, ইলমে আরুজ, ইলমে মোনাযারা, ইলমে মানতিক, ইলমুল আদব (সর্ব বিষয়ের সাহিত্য), ইলমে ফিকহে হানাফী, ইলমে জদল মহাযযব, ইলমে ফালছাফা, ইলমে হিসাব (গণিত), ইলমে হাইয়াত জ্যোতি বিদ্যা), ইলমে হান্দাসা (জ্যামিতি), ইলমে ক্বেরাত, ইলমে তাজবিদ, ইলমে তাসাউফ (সুফীতত্ত্ব), ইলমে সুলুক (তরিকত জগতে ভ্রমণ), ইলমে আখলাক, ইলমে সিয়াম, ইলমে তারিখ (ইতিহাস), ইলমে লুগাত (অভিধান), এ্যারিস মাতী ক্বী, যবর ও মোকাবালাহ, হিসাবে সিত্তানী, লগারিদম, ইলমে তাওকীত (সময় নির্দ্ধরণ বিদ্যা), মুনাযারা ও মারাযাহ, ইলমুল আকর, যীজাত, মুছাল্লাছে কুরভী, মুছাল্লাছে মোসাত্তাহ, হাইয়াতে জাদীদা, মুরাব্বাআত, ইলমে জফর, ইলমে যায়েরজাহ, আরবী পদ্য, ফার্সী পদ্য, হিন্দী পদ্য, আরবী গদ্য, ফার্সী গদ্য, হিন্দী গদ্য, কেতাবাত বা লিখন পদ্ধতি, খত্তে নাস্তালীক পদ্ধতির লিখন (ক্যালিওগ্রাফী), তাজবীদসহ ক্বেরাত। উল্লেখিত বিষয় ছাড়া আর কত বিষয়ে যে আ’লা হযরত পারদর্শী ছিলেন তা উনার স্রষ্টাই ভালো জানেন। প্রতিটি বিষয়ের উপর রয়েছে একাধিক নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় সাহিত্য সম্রাট দার্শনিক আ’লা হযরতের সমান দখল দেখে দুনিয়াজুড়া শিক্ষাবিদ ড. স্যার জিয়াউদ্দীন বলেছিলেন, ‘নিজ দেশে (ভারতবর্ষ) আহমদ রেযার মতো এতো বড় বিজ্ঞ পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও জ্ঞান শিক্ষার জন্য আমরা ইউরোপ গিয়ে দুঃখজনকভাবে অযথা সময় অপচয় করছি।’ আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের কথায় স্পষ্ট বোঝা যায় আ’লা হযরত শুধু একজন ব্যক্তি নন; বরং বিশ্বমানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়। নিজের পরিপূর্ণ একটি স্বার্থক লাইব্রেরি। আমি বলবো তার চেয়েও বেশি কিছু আমার ইমাম। মুসলিম মিল্লাতের ইস্পাত-দৃঢ় অভিভাবক ইমাম আ’লা হযরতের ব্যাপারে মাওলানা আশরাফ আলী থানভী বলেছিল, ‘আমার যদি সুযোগ হতো, আমি মৌলভী আহমদ রেযা খান বেরলভীর পেছনে নামাজ পড়ে নিতাম।’ আক্বিদায় ভিন্ন মেরুতে থাকা মাওলানার এমন মূল্যায়ন ইমামে পাকের গ্রহণযোগ্যতাকে আকাশচুম্বী করে তুলে। পবিত্র কুরআনের বিশ্ব নন্দিত অনুবাদগ্রন্থ কানযুল ঈমান, ফতোয়ায়ে রেজভীয়া, আদ্দৌলাতুল মক্কিয়া বিল মাআদ্দাতিল গাইবিয়া, হুসসামুল হারামাঈন, আল কাওকাবাতুশ শিহাবীয়া ফি রদ্দে আবিল ওয়াহাবিয়া কিতাবসমগ্র আ’লা হযরতের অসাধারণ পাণ্ডিত্যের সফল উপস্থাপক। এবারের প্রবন্ধে আমাদের আলোচনা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কুরআনের অনুবাদ গ্রন্থ কানযুল ঈমান নিয়ে।

 

মদিনার মুনিব (দ.)’র বাস্তব মোজেজা ইমাম আ’লা হযরতের তৃষ্ণার্ত আত্মা সর্বদা জ্ঞানের পিপাসায় ব্যাকুল থাকতেন। কালামুল্লাহ’র বিশুদ্ধ তেলাওয়াত, অনুধাবন, অনুবাদ, বিশ্লেষণ ও মুখস্থকরণ, সর্বোপরি কুরআন-সুন্নাহ’র বাস্তব শিক্ষা সমাজে বাস্তবায়ন ছিল ইমামের জীবনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

 

সৃষ্টির সমস্ত জ্ঞানের মূল উৎস পবিত্র কুরআন নিজের ব্যাপারে স্বাক্ষী দিচ্ছেন, ‘কুরআন মাজীদ হচ্ছে এমন গ্রন্থ, যাতে প্রত্যেক কিছুরই বিবরণ রয়েছে।’ এককথায় সর্বজ্ঞানের নির্ভুল আধার হলো কুরআন। পবিত্র কুরআন আরবি ভাষাতে হওয়ায় অনারবদের জন্য এর মর্মার্থ বুঝতে বেগ পেতে হয়। ঠিক এ দুর্বলতাটাকে কাজে লাগিয়ে একদল ধর্মদ্রোহী, ধর্মীয় লেবাসে কুরআনে এটা নেই, সেটা নেই বলে মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে মহা সম্পদ ইমান হরণের চেষ্টায় যখন লিপ্ত, তখন সে বিভ্রান্তির অন্ধকার দূর করতে মাদানি সূর্য নিয়ে অবতীর্ণ হলেন আ’লে হযরত (দ.)’র নিরেট প্রেমিক আ’লা হযরত। সেই মাদানি সূর্যের কিরণ শুধু উপমহাদেশকে নয়, সারা নীলগগনকে আলোকিত করেছে। খোদাভীতি আর রাসূলপ্রীতিতে পরিপূর্ণ করেছে আশেকদের অন্তরাত্মা। সেই মাদানি আফতাবের নাম কানযুল ইমান। ১৩৩০ হিজরী মোতাবেক ১৯১১ সালে সুসম্পন্ন হওয়া পবিত্র কুরআনের উর্দু অনুবাদের কিতাব কানযুল ইমান। যে অনুবাদ গ্রন্থকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কুরআনের অনুবাদ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে মিশর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়সহ অসংখ্য বিদ্যাপীঠ। বিশ্বনন্দিত স্কলার আল্লামা গোলাম রসুল সাঈদী’র তাওযীহুল বয়ান, শায়খুল ইসলাম সৈয়দ মুহাম্মদ মাদানী মিয়ার তারাজুমে কুরআন কা তাকাবুলী জা-ইযাহ কিতাবসহ অসংখ্য প্রামাণ্য গ্রন্থ কানযুল ইমানের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। ইমাম আ’লা হযরত ও কানযুল ঈমান নিয়ে খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে দেওয়া পিএইচডি, এমফিল ডিগ্রিসহ উচ্চতর গবেষণাগুলো সারা পৃথিবীর বোদ্ধামহলে ইমামকে পৌঁছে দিয়েছেন। সদা শির উন্নত আমার ইমাম কলমে ফুটে উঠছে, সবসে আওলা ও আলা হামারা নবী; সবসে বালা ও ওয়ালা হামারা নবী; মোস্তফা জানে রহমত পে লাখো সালাম। মদিনার মুনিবের সম্মান-মর্যাদা সর্বোর্ধ্ব মেনেছেন বলে ইমাম আহমদ রেযা খানকে আল্লাহ আ’লা হযরত বানিয়ে দিয়েছেন। মোস্তফা (দ.)-কে সর্বোচ্চ সম্মানিত মানলে যে, ব্যক্তিও সর্বোত্তম হয় তার জীবন্ত উদাহরণ ইমাম আ’লা হযরত।

 

সাগর গভীরে মুক্তার বাস। কিন্তু সবাই কি আর তার নাগাল পায়? মাটির তলদেশে খনিজ সম্পদে ভরপুর; তা আমাদের অধরাই। ঠিক, পবিত্র কুরআনেও সব বিষয়ের ব্যাখা সমেত বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু খোদায়ী জ্যোতিহীন ব্যক্তির মন-মগজে ধরা দেবে না। কুরআনের এ জ্ঞান আলোকিত করেছে আমার ইমামের হৃদয়। কুরআনের অনুবাদের নামে একদল যখন মনগড়া কথাবার্তা সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে লাগলো; আল্লাহ-রাসুলের শানে অসঙ্গতিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে অনুবাদের নামে শানে উলুহিয়াত ও রিসালতকে চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে লাগলো; ঠিক তখনই ইমাম আ’লা হযরত কুরআনের প্রেমে ডুব দিয়ে মুক্তা আহরণ করে আনলেন মানব কল্যাণে। সমসাময়িক পৃথিবীকে বিজ্ঞানময় কুরআনের রৌশনি ছড়িয়ে, দিয়েছেন এক নব বিজয়ী বার্তা। কুরআন থেকে প্রমাণ দিয়েছেন আল্লাহ সর্বশক্তিমান; কিন্তু সম্পূর্ণ মিথ্যামুক্ত। দিয়েছেন নবী নূরের সন্ধান। প্রমাণ করেছেন ইমান আর নবীপ্রেম দু’শব্দের এক অর্থ। খুঁজে দিয়েছেন ঈদে মিলাদুন্নবীর অস্তিত্ব। জানিয়ে দিয়েছেন খোদা প্রদত্ত সর্বজ্ঞানী প্রিয় নবী। কুরআন থেকে বের করে একই সুতোয় গেঁথেছেন মুক্তার মালা। বের করেছেন উসিলার প্রয়োজনীয়তা। দোষমুক্ত আম্বিয়া কেরাম, নিষ্পাপ আহলে বায়েত, নবীগণের পিতা-মাতা মাসুম, সত্যের মাপকাঠি সাহাবায়ে কেরাম, আল্লাহর প্রতিনিধি আউলিয়া কেরাম, ঈমান-আক্বিদা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, জীবন চলার পথে সব বিষয়ের স্পষ্ট সমাধান কানযুল ইমান।

 

কুরআনের অনুবাদ নেহাৎ কম নয় কিন্তু কানযুল ঈমান শ্রেষ্ঠ কেন? বর্ণনা করতে চাইলে হাজারো কারণ বর্ণনা করা যায়; কিন্তু লেখার কলেবর বৃদ্ধি হয়ে যাবে। আমার কাছে শ্রেষ্ঠত্বের প্রথম ও প্রধান কারণ হলো ‘প্রেমসিক্ত অনুবাদ’। সকল নির্ভুল অনুবাদকের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলছি- অন্যরা অনুবাদ করেছেন নিজ জ্ঞানে, আর আমার ইমাম অনুবাদ করেছেন মদিনার মুনিবের প্রেমমাখা কলমে। তাই তো কানযুল ইমানের প্রতিটি পরতে-পরতে আল্লাহর বাণী ‘ওয়ারাফা’না লাকা জিকরাক’ (এবং আমি আপনার স্মরণকে সমুন্নত করেছি)’র প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে। যেখানে মহান আল্লাহর স্মরণ সেখানে প্রিয় নবীকে বরণ; এটা তো কালিমার শিক্ষা। এ শিক্ষার জীবন্ত শিক্ষক কানযুল ইমান।

 

কুরআন তেলাওয়াতে পূণ্য আছে; কিন্তু কুরআনের জ্ঞান জীবনে প্রয়োগে আছে উভয় দুনিয়ায় উন্নতি ও সমৃদ্ধি। কলম সম্রাট ইমামের এ অসাধারণ থিউরি তিমির সরিয়ে নূরের সন্ধান দেয়। কুরআনের ভুল অনুবাদ এবং ব্যাখ্যাই যখন ইমানের জন্য হুমকি, তখন ইমানের মহা-সম্পদ কানযুল ইমান দিয়েছে ইমানের পূর্ণ স্বাদ। মারিফাতের জ্ঞানপিপাসু, হিদায়তের জ্যোতি অন্বেষণকারী, কুরআন রহস্য জানতে অভিলাষীর পরিতৃপ্তির জন্য কানযুল ইমান যথেষ্ট। আমরা নতুন প্রজন্ম যখন দিকহারা পথিক, তখন কানযুল ইমান আমাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য মদিনার পথ দেখিয়ে যাচ্ছে।

 

কৃতজ্ঞ হে মহান ইমাম! আমাদের জন্য একটি আলোর মশাল রেখে যাওয়ায়। আমরা এখন অন্ধকারে ভয় পাই না, কারণ আমাদের হৃদয়ের মিনারে প্রজ্জ্বলিত আলোক শিখা কানযুল ইমান চারপাশ উজ্জ্বল করে দেয়। প্রজন্মকে যখন ইসলামের সৌন্দর্য থেকে দূরে সরিয়ে উগ্রবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে; তখনই কানযুল ইমান তপ্ত মরুভূমিতে শান্তির নহর জারি করে সত্য দ্বীন শান্তির ধর্ম ইসলামে প্রজন্মকে ফিরিয়ে আনছে।

 

ধর্ম মানুষকে বিনয়ী করে। আক্বিদা মানুষকে দৃঢ় করে। কুরআন মানুষকে আলোকিত করে। সুন্নাহ মানুষকে পরিপূর্ণ করে। আর কানযুল ইমান ইমানের দৃঢ়তা বাড়ায়। মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ কিতাব কুরআন, আর কুরআনের সর্বোৎকৃষ্ট অনুবাদ কানযুল ইমান। শ্রেষ্ঠ কিতাবের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক আ’লা হযরত, ও ব্যাখাকারী সদরুল আফাযিল আল্লামা সৈয়দ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদীকে আল্লাহ জান্নাতের আ’লা মকাম নসীব করুন। এ মহান অনুবাদ ও তাফসীর গ্রন্থের (কানযুল ইমান ও খায়াইনুল ইরফান) সফল বাংলা অনুবাদক এ বাংলার কলম সম্রাট আল্লামা এম এ মান্নানকে মহান আল্লাহ হায়াতে খিজরি দান করুন। হুজুরের কলমে নবীপ্রেমের নির্যাসমিশ্রিত সুঘ্রাণ অবারিত ধারায় বের হতে থাকুক। আমিন।

 

নির্ভরযোগ্য জ্ঞানের কষ্টিপাথর আ’লা হযরত ও ঈমানের খনি কানযুল ঈমান জ্ঞানী ও বিদ্যোৎসাহীদের নিকট কেয়ামততক নন্দিত থাকবে, সে বিশ্বাসে শেষ করছি।