প্রবন্ধ

স্বাস্থ্যকর ঘুম (Healthy Sleep)

সেনানী ডেস্ক

ঘুমের সময়ঃ

এশার সলাতের পর:

 

রাত ৯টা থেকে ১২টাএই সময় ঘুম খুবই উপকারী। এই সময় যে কেউ ৮০% গভীর ঘুম পেতে পারে। এ সময় ১ ঘন্টার ঘুম=৩ ঘন্টার ঘুম। এ সময় পিনিয়াল গ্রন্হি (Pineal gland) মেলাটোনিন ( Melatonin)।

 

হরমোন উৎপন্ন করে। তবে শর্ত দুটি-
1.কক্ষটি নিঃশব্দ ও অন্ধকার হতে হবে।
2.পূর্ণভাবে আরামে শায়িত হতে হবে।

 

রাত ১২টা থেকে ২টাঃ

 

এই সময় ২০% গভীর ঘুম হয়। বাকী ঘুম গুলো ঘুমন্ত স্বপ্ন হয়। এই সময় ১ঘন্টা ঘুম=১ঘন্টা ঘুম।

রাত ২টা থেকে ফজরের আগ পর্যন্তঃ

 

এই সময়টা একটা উত্তম সময় যা মন মানসিকতা চিন্তাশীলতা,ও শরীরকে প্রশান্ত রাখে৷ এই সময় মুখস্ত করা, আল্লাহকে স্মরন করার জন্য মন সুস্হির থাকে।

 

মাদ্রাসায় হাফেজগন এসময় ঘুম থেকে উঠে কোরআন মুখস্থ করেন৷ যে কোন মুখস্থ করার সবচে উত্তম সময় এটি৷

ফজরের পর ঘুমঃ

 

এই সময় ঘুমের কোন উপকারিতা নেই। এই সময় ৩ ঘন্টা ঘুম=১ঘন্টা ঘুম। আমাদের সমাজে বিশেষ করে ছাত্র ছাত্রীরা এ সময় ঘুমিয়ে থাকে, কিন্তু এই সময়ের ঘুমে শরীরে নির্জীবতা, অলসতা, অবসান্নতা, মাথাব্যাথা হয় এবং মনঃসংযোগের অভাব দেখা দেয়। এটা স্মৃতি শক্তি হ্রাস ও মেধা বিকাশে অন্তরায়৷

 

ফজরের পর থেকে সূর্য উঠা পর্যন্ত ঘুমঃ

 

এই সময় পিনিয়াল গ্রন্হি অন্য আরেক রকম হরমোন সেরোটোনিন (Serotonin) উৎপন্ন করে।এবং এটা ফজরের পর থেকে সূর্যোদয় সময়ে উৎপন্ন হয়।

 

তবে শর্ত হলো-
1.ব্যক্তিটি জাগ্রত থাকতে হবে।
2. হালকা নড়াচড়া থাকতে হবে (like mental exercise) যেমন এক ব্যক্তি মাসজিদে গিয়ে জামায়াতে সলাত আদায় করল।

এ সময় কুরআন তেলোয়াত স্নায়ুকে উদ্দীপ্ত করে।আত্নাকে প্রশান্ত করে। এ সময় দিনের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর প্লান করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়।
সূর্যোদয়ের পর হালকা ব্যায়াম ( কমপক্ষে ৪০মি:) ও শ্রম সাধ্য কাজ শুরু করা ভাল।

 

রাত্রি জাগরণের ক্ষতি কি?

 

দেরিতে ঘুমানোর কারনে হরমোন ঘাটতির জন্য অ্যালজেইমার/স্মৃতিভষ্ট, হবার ঝুকি থাকে।

 

বিজ্ঞানসম্মত সুন্নত:

 

রাসূল (সাঃ) এর জীবন-যাপন অনুসরন করলে দেখা যায় তিনি ঈশার সালাতের পরই বিশ্রাম এর জন্য যেতেন এবং গভীর রাত থেকে ফজর পর্যন্ত এবাদতে মশগুল থাকত। বর্তমানে আমরা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকি এবং নিজের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা হ্রাস করছি৷ তাই নিজের মেধার বৃদ্ধি ও বিকাশে দুনিয়া ও আখিরাতের সুরক্ষায় আমাদের বিজ্ঞান সম্মত সুন্নাহ জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হয়া প্রয়োজন।

 

কখন ঘুমানো উত্তম?

 

বায়োলজি কি বলে? এ নিয়ে ডা. সাইফুল আলম ভাইয়ের সাথে এক পোস্টের কমেন্টে আলাপ হয়৷ সেই আলাপচারিতা তুলে দিচ্ছি৷

 

সারমর্মঃ

 

★ রাতের খাবার মাগরিবের আগে বা পরে খেতে হবে।
★ এশার পর ৯টা,১০ টার আগে ঘুমিয়ে যাওয়া উত্তম।
★ আড়াইটার (২.৩০) দিকে ঘুম থেকে উঠে যাওয়া।
★ ভোরে না ঘুমানো।
★ সকাল ১১ টার আগে শর্করাজাতীয় খাবার না খাওয়া। ডিম, ভিনেগার, চিনি ছাড়া চা ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে এই সময়টায়।
★ সকাল ১১-১২ টায় ব্রেকফাস্ট & লাঞ্চ একসাথে করা।
★মিল সেরে আধঘন্টা ঘুম/বিশ্রাম করা, তারপর যোহরের প্রস্তুতি নেয়া। রাতে ঘুমানোর ৩-৪ ঘন্টা আগে খাওয়া। গুরুপাচ্য খাবার এভয়েড করা।

 

আলাপচারিতাঃ

 

Only monophasic sleep এ অভ্যস্ত হলে প্রতিদিন কত ঘন্টা ঘুমাতে হবে?

 

এটা নির্ভর করে আপনি কোন সময়ে ঘুমাচ্ছেন তার ওপর। আপনি যদি ঈশার পরপর অর্থাৎ ৯ টা বা ১০ টা থেকে ঘুমান তবে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা ঘুম আপনার জন্য যথেষ্ট হবে। ১০ টায় ঘুমালে দেখবেন স্টেরয়েড হরমোনের প্রভাবে ২ টা বা আড়াইটায় ঘুম ভেঙ্গে যাবে। তখন উঠে তাহাজ্জুদ পড়বেন। ফজর পড়ে, সূর্যোদয়ের পর ইশরাক পড়বেন। সারাদিন আপনার স্ট্যামিনা থাকবে তুঙ্গে। যোহরের আগে দুপুরের খাবার খেয়ে চাইলে নামাজের আগে আধাঘন্টা গড়াগড়ি বা কাইলুল্লাহ করে নিতে পারবেন।

 

তবে একটা ব্যাপার যারা দায়ী তাদের ঘুমে আল্লহ বরকত দান করেন। তাদের অল্প কয়েক মিনিটের ঘুমেও আল্লহ সারা রাতের বরকত দিতে পারেন।

 

ভুল সময়ে ঘুমালে ডীপ স্লিপ হয় না। এই জন্য বায়োলজিক্যাল ক্লক অনুযায়ী স্লীপ ফিজিওলজি সবার জানা উচিৎ। এ্যাবনরমাল স্লিপ প্যাটার্ণ ইম্মিউনিটি ডিপ্রেস করে, হরমোনাল ইমব্যালেন্স তৈরি করে। ফলে থাইরয়েড প্রবলেম, ডায়াবেটিস, হার্ট ব্লক, স্ট্রোক, হাইপারটেনশান, ED, ডিপ্রেশান ইত্যাদি তৈরি হয়।

 

আমিও এটা খেয়াল করেছি। এশার পরে ঘুমালে ৪ ঘন্টার আশে পাশে ঘুমায়। এমন কেন হয়? স্টেরয়েড হরমোনের ব্যাপারটা আরো বিস্তারিত বলতে পারবেন কঢট করে প্লিজ। জানতে অনেক আগ্রহী। আমি ভাবতাম এটা শুধুমাত্র আল্লাহর কুদরতে হয়। আর রাতে এরকম ৪-৫ ঘন্টা ঘুমালে আর দিনে আধা ঘন্টার ন্যাপ নিলেই কি এনাফ? সবাই যে বলে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে। এখানে সবাই বলতে আমি রেলিজিয়াস স্কলার বুঝাচ্ছি। islamqa, ইমাম গাজ্জালি, সবাই ৮ ঘন্টার কথা বলেছেন৷ কিন্তু আবার রুটিন দিয়েছেন এরকম। এশার পর ঘুমিয়ে রাতে উঠে যাওয়া৷ তাহলে ৮ ঘন্টা কিভাবে হয়। আর দিনের বেলার যে কাইলুল্লাহ এটা আসলে কখন করলে উত্তম হয়। দুপুর ২-৩ টার দিকে? নাকি সকাল ১১ টার দিকে। সময় পেলে জানাবেন প্লিজ।

 

৮ ঘন্টা কি আসলেই ঘুমানো সম্ভব? এত ঘুমালে ইবাদত কখন করবেন? সূর্য ডোবার সাথে সাথে ঘুমানোর জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন রিলিজ শুরু হয়ে যায়। শহুরে জীবনে ব্রাইট লাইটে এই হরমোন এর রিলিজ হ্যাম্পার হয়। একারনেই দেখবেন যে গ্রামে যেখানে কারেন্ট নেই সেখানে কুপি বা হারিকেনের আলোয় সন্ধ্যায়ই ঘুম চলে আসে। তাই এই সময় জেগে থাকলে শরীরে স্ট্রেস পড়ে। ৯ টা ১০ টায় ঘুমালে ২ টার পর থেকে স্টেরয়েড হরমোন রিলিজ শুরু হয়, ফলে ঘুম পাতলা হতে শুরু করে। তাই এই সময় ঘুম থেকে উঠে যাওয়া উত্তম। স্টেরয়েড ইঞ্জেকশান নিয়ে বসে থাকলে শরীরে যেমন চর্বি জমে যায়, তেমনি এই সময় ঘুমিয়ে থাকলে শরীরের হার্ট, বিভিন্ন রক্তনালীতে চর্বি জমবে। একারনেই যারা রাত জাগে আর ভোর রাতে ঘুমিয়ে কাটায় তারা হার্ট ব্লক, হাইপারটেনশান এ ভোগে। উচিৎ হচ্ছে এই সময় অর্থাৎ ২-৩ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে যাওয়া। তারপর তাহাজ্জুদ আদায় করে তেলাওয়াত করে, ফজর পরে কিছুক্ষন জিকির করে ইশরাকের পরে প্রয়োজনে রেস্ট নেয়া। প্রায় সকাল ১১ টা পর্যন্ত স্টেরয়েড হরমোনের ইফেক্ট থাকে। তাই এই সময় ব্যায়াম করা উপকারী। এইসকালে কাজের বা রিজিকের বরকত হয় বলে হাদীসে উল্লেখ আছে। ১১ টার আগে না ঘুমানো উত্তম হবে। এই সময় কার্ব জাতীয় খাবার খাওয়াও নিষেধ। এই সময় ইনসুলিন সিক্রেশান কম হয়, তাই এই সময় কার্ব জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি, মিষ্টি ইত্যাদি খেলে শরীরে শর্করার পরিমান আনকন্ট্রোল্ড ভাবে বেড়ে যাবে, শরীর ব্যাক্টেরিয়া ভাইরাসের আক্রমনে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে। ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চ একসাথে ১১-১২ টায় করলে ভাল, এই সময় লাঞ্চ করে আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা ঘুমিয়ে তারপর যোহরের নামাজের প্রস্তুতি।

 

ঠিক একই ভাবে রাতের খাবার এমন সময় খেতে হবে ও এতটুকু খেতে হবে যেন তা ঘুমানোর আগেই স্টমাক থেকে বের হয়ে যায়। স্টমাক ক্লিয়ারেন্স টাইম ৩-৪ ঘন্টা। তাই ১০ টায় ঘুমালে ৭ টায় ডিনার সারতে হবে। এবং গুরু পাচ্য খাবার এ্যাভয়েড করতে হবে।

 

তাহলে এশার পর পর ঘুমিয়ে পড়লে (যেমন ৯ঃ৩০) রাতের খাবারের জন্য বেটার সময় মাগরিবের আগে হলে ভাল হয় নাকি মাগরিবের পর। কারন সাড়ে ৬ থেকে ৭ টা এই সময়ের আশে পাশে মাগরিব হয়। ৬ টার দিকে খেলে বিফোর মাগরিব হবে, আর বাদ মাগরিব করতে হলে সাড়ে ৭ টার মত বেজে যাবে৷ আর আপনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বলেছেন। আপনার কমেন্ট গুলো একসাথে কপি করে এই গ্রুপেই পোস্ট আকারে দিতে পারি কি? অনেকেই এগুলো জানতে চাইতে পারে। আর সকালে, ১১ টার পূর্বের সময়টায় কি রকম খাবার খাওয়া যায়। আমি মুড়ি খাই, এতে কি সমস্যা আছে?

 

সেক্ষেত্রে মাগরিবের আগে পার্ফেক্ট হবে। তবে মাগরিব আর আওয়াবীনের মাঝেও হতে পারে। সকালে মুড়ি খাওয়া যাবে না। চিনি ছাড়া চা খেতে পারেন। ডিম খেতে পারেন। পানিতে ভিনেগার মিশিয়ে খেতে পারেন। সোজা কথায় সকালে শর্করা এ্যাভয়েড করবেন। তবে আপনি যদি শারিরীক শ্রমের কাজ করেন, যেমন সকালে অনেক দূর হাটা, বা এ ধরনের কিছু তবে আপনি সকালে ভাত খেলেও সমস্যা নেই। আমি শহুরে সেডেন্টারি লাইফের মানুষের অনুযায়ী বলছি।