জীবনী

বিখ্যাত সুফি ও তাপস শায়খ মারুফ আল কারখী (রহ.)’র সংক্ষিপ্ত পরিচিতি | জীবনী

তাহের হোসাইন

বিখ্যাত সুফি ও তাপস শায়খ মারুফ আল কারখী (রহ.)’র সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

জন্মঃ

কাদেরিয়া ত্বরিকার বিখ্যাত এই শায়েখ ১৩৩/১৪৩ হিজরি মোতাবেক ৭৫০ কিংবা ৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে বাগদাদের কারখ নামক স্থানে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ফিরোজ। ওনার পুরো নাম হলো, আবু মাহফুজ মারূ’ফ ইবনে ফিরোজ আল-কারখী।

ইসলামী ও ত্বরিকত জীবনের সন্ধানঃ

তাজকিরাতুল আউলিয়ার বর্ণনাতে পাওয়া যায়, হযরত মারুফ কারখী (রঃ)’র জন্ম খ্রিস্টান পরিবারে হলেও শিশুকাল থেকেই তাঁর ক্বলব ও চাল চলনে ইসলামের ভক্তি এবং বিশ্বাস বিদ্যমান ছিল। তিনি শিশু বয়সে মুসলমানদের সাথে মসজিদে যেতেন এবং মা-বাবা কে ইসলামের তালিম দিতেন। এসব দেখে তাঁর পিতা-মাতা ধর্মীয় শিক্ষার জন্য একজন শিক্ষক নিয়োগ করলেন। প্রথমদিন শিক্ষক শিশু মারুফ কারখীকে জিজ্ঞেস করল তোমার পরিবারে কে কে আছে? তিনি বললেন, বাবা, মা আর আমি অর্থাৎ আমরা তিনজন। তখন ঐ খ্রিস্টান শিক্ষক বলল, তাহলে তুমি বল- সালিসু সালাসাতি অর্থাৎ ঈসা তিন খোদার মধ্যে তৃতীয় জন। তখন তিনি বললেন, আমার বিশ্বাস বলছে, খোদা একজন ব্যতিত দ্বিতীয় কোন খোদা নেই। এটা বলার সাথে শিক্ষক তাঁকে মারতে আরম্ভ করে আর যতবেশি বেত্রাঘাত করতে থাকে তিনি ততবেশি অস্বীকার করতে থাকেন। তখন মা-বাবা কে ডেকে বলা হল, তাঁকে কারাগারে প্রেরণ করতে। কারাগারে তিনদিন বন্ধি রাখার পর কিছু না খাওয়ায় সেখান থেকে মুক্ত করলে তিনি পালিয়ে যান। এরপর দেখা হয় হযরত শাহ মুসা রেযা (রহঃ)’র সাথে। কাদেরিয়া ত্বরিকার ৮ম তম মহান সাধাক হযরত শাহ মুসা রেযা (রহঃ)’র শিষ্যত্ব লাভ করে পান করেন ইসলামের অমিয় সুধা ও গভীর জ্ঞান তাসাউফ। পরে তাঁর আচার-আচরণে প্রভাবিত হয়ে পিতা-মাতাও ইসলামের ছায়াতলে চলে আসেন।

শিক্ষা জীবন ও খেলাফতঃ

হযরত মারুফ কারখী (রহঃ) হযরত শাহ মুসা আলি রেযা ও ইমামে আজম আবু হানিফা (রাঃ)’র সান্নিধ্যে থেকে শরিয়ত, ত্বরিকত ও মারেফাতের গভীর জ্ঞান লাভ করেন। তাঁর মুর্শিদে কামেল হযরত মুসা রেযা (রহঃ) হতে খেলাফতে ধন্য হোন। তাঁর এই খেলাফত হযরত সিররিউস সাক্বতী (রহঃ) হয়ে হযরত গাউসুল আজম আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) পর্যন্ত পৌছায়।

তরিকতের সিলসিলাঃ

১) হযরত আহমদ মোস্তফা  মুহাম্মদ  ﷺ
(২) হযরত শেরে খোদা মাওলা আলী (রাঃ)
(৩) হযরত ইমামুশ শোহাদা ইমাম হোসাইন (রাঃ)
(৪) হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (রাঃ)
(৫) হযরত ইমাম বাকের (রাঃ)
(৬) হযরত ইমাম জাফর সাদিক (রাঃ)
(৭) হযরত ইমাম মুসা কাজেম (রাঃ)
(৮) হযরত শাহ মুসা রেযা (রহঃ)
(৯) হযরত মারুফ কারখী (রহঃ)
(১০) হযরত সিররিউস সাক্বতী (রহঃ)
(১১) হযরত জুনাইদ বাগদাদী (রহঃ)
(১২) হযরত আবু বক্বর জাফর আশ শিবলী (রহঃ)
(১৩) হযরত আবদুল ওয়াহিদ আত-তামীমী (রহঃ)
(১৪) হযরত আবুল ফরাহ আত-তারতুসী (রহঃ)
(১৫) হযরত করশী হানকারী (রহঃ)
(১৬) হযরত আবু সাঈদ মুবারক মাখযুমী (রহঃ)
(১৭) হযরত গাউসুল আজম আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)

কারামতঃ

জনৈক ব্যক্তি বর্ণানা করেন, তিনি সারাদিন হযরত মারুফ কারখী (রহঃ)’র সাথে ছিলেন, রাত্রে দোয়া নিয়ে ঘরে চলে যান। পরের দিন যখন আমার তাঁর দরবারে হাজির হয় তখন তিনি দেখেন, তাঁর কপালে আঘাতের চিহ্ন। উপস্থিত মজলিসের আরেকজন ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু মাহফুজ! আমিতো গতকাল আপনার সাথেই ছিলাম কিন্তু কপালে কোন দাগ দেখিনি, আজকে এই আঘাতের চিহ্ন কেমনে হলো? তিনি জবাব দিলেন, এটা জানা তোমার উদ্দেশ্য নয়, তুমি যে উদ্দেশ্যে এসেছ সে সম্পর্কে বল। তখন ব্যক্তিটি বলল, আপনার রবের কসম! আপনি আমাকে সে সম্পর্কে বলুন। তখন হযরত মারুফ কারখী বললেন, গত রাতে আমি ইশারের নামায আদায় করে তাওয়াফের উদ্দেশ্যে মক্কায় গমন করে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে যখন জমজমের কূপের পানি পান করে বের হচ্ছিলাম তখন দরজায় পড়ে গিয়েছিলাম। পড়ে যাওয়ার কারণে আমার কপালে তার দাগ লেগেছে।

সূত্রঃ জামিউল কারামাতুল আউলিয়া, খন্ড-২, পৃঃ৪৯১

মুস্তাজাবুদ দাওয়াতঃ

তিনি ছিলেন মুস্তাজাবুদ দাওয়াত এর অন্তর্ভূক্ত অন্যতম একজন আল্লাহর প্রিয় বান্দা। মুস্তাজাবুদ দাওয়াত বলা হয়, ঐসব মহান আল্লাহর ওলীগণকে যাঁদের দোয়া মহান আল্লাহর দরবারে অনতিবিলম্বে কবুল হয়ে যেত।

ইমাম কুশাইরী (র.) বলেন, এই মাজারের উসিলা নিয়ে অনাবৃষ্টির সময় দোয়া করা হলে আল্লাহর হুকুমে বাগদাদে বৃষ্টি নেমে আসত। তাঁর দোয়া সরাসরি কবুল হওয়া প্রসঙ্গে অসংখ্য কারামতও পাওয়া যায়।

ওফাতঃ

আপন জমানার কুতুব, গুপ্তরহস্য উন্মোচনকারী হযরত শায়েখ মারুফ কারখী (রহঃ) ২ মহররম ২০০হিজরি মোতাবেক ১১ আগস্ট ৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ওফাত লাভ করেন। ইরাকের বাগদাদে তাঁর মাজার শরীফ অবস্থিত।

তথ্যসূত্রঃ

মাসিক তরজুমান
উইকিপিডিয়া