প্রবন্ধ

হযরত আলী (রাঃ)’র কিছু মূল্যবান উপদেশবলী

সেনানী ডেস্ক

মুসলমানদের চতুর্থ খলিফা, আমীরুল মু’মিনীন হযরত মাওলা আলী শেরে খোদা (রাঃ) সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ “আমি জ্ঞানের শহর এবং আলী তাঁর দরজা।” (সহিহ বুখারি শরিফ)

১| আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিষের জন্য অনেক বেশি ভীত থাকি: (১) চাহিদার অনুসরণ এবং (২) দীর্ঘ আশা। (আয যাহিদ লিইবনিল মুবারক, ১/৮৬, হাদীস ২৫৫)

 

২| শুনো! পরিপূর্ণ ফকীহ হলো সেই, যে মানুষদের আল্লাহর রহমতে নিরাশ করে না, আল্লাহ পাকের আযাবের প্রতি নির্ভয় হতে দেয় না, তাঁর অবাধ্যতায় ছাড় দেয় না এবং কোরআনে করীমকে ছেড়ে অন্য কোন কিছুর প্রতি আগ্রহ রাখে না। (দারামী, ১/১০১, হাদীস ১৯৭, ১৯৮)

 

৩| হে লোকেরা! জ্ঞানের উৎস, রাতের প্রদীপ (অর্থাৎ রাত জেগে আল্লাহর ইবাদতকারী), পুরোনো পোশাক এবং পবিত্র অন্তরের অধিকারী হয়ে যাও, এর কারণে আসমানে তোমাদের প্রসিদ্ধি হবে এবং জমিনে তোমাদের আলোচনা সমুন্নত হবে। (দারামী, ১/৯২, হাদীস ২৫৬)

 

৪| জ্ঞান সম্পদের চেয়ে উত্তম। জ্ঞান তোমাকে নিরাপত্তা প্রদান করবে আর সম্পদকে তোমার নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে। জ্ঞান প্রসারে বৃদ্ধি পায় আর সম্পদ খরচ করাতে কমে যায়। জ্ঞানীকে লোকেরা ভালবাসে। জ্ঞানীরা

 

৫| তিনটি জিনিষ স্মৃতিশক্তিকে প্রখর ও কফ দূর করে। (১) মিসওয়াক (২) রোযা (৩) কোরআন পাঠ করা। (ইহইয়াউল উলুম, ১/৩৬৪)

 

৬| যে না জেনে মানুষদেরকে ফতোয়া দেয়, আসমান ও জমিনের ফিরিশতারা তার প্রতি অভিশাপ প্রদান করে থাকে। (আল মুস্তারাফ, ১/৩৯)

 

৭| মজলুমের অত্যাচারির উপর প্রাধান্য লাভের দিন (অর্থাৎ কিয়ামতের দিন) অত্যাচারির মজলুমদের উপর প্রাধান্য লাভের চেয়ে বেশি কঠিন। (আল মুস্তারাফ, ১/১৮৬)

 

৮| সামান্য জিনিস দেয়াতে লজ্জা করো না, কেননা দেয়া থেকে বঞ্চিত থাকা এর চেয়েও সামান্য। (আল মুস্তারাফ, ১/৩৮৩)

 

৯| আল্লাহ পাকের শপথ! আমি কোরআনে করীমের প্রতিটি আয়াতের ব্যাপারে জানি যে, তা কখন ও কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে, নিশ্চয় আমার প্রতিপালক আমাকে অনেক বুঝার অন্তর এবং অনেক প্রশ্নকারী জিহ্বা দান করেছেন। (আত তাবকাতে কুবরা লিইবনে সাআদ, ২/২৫৭)

 

১০| আমলের চেয়ে বেশি তা কবুলের ব্যবস্থা করো, এই কারণেই যে, পরহেযগারীতার সহিত করা সামান্য আমলও অনেক হয়ে থাকে আর যে আমল কবুল হয়ে যাবে তা কিভাবে সামান্য হয়। (কানযুল উম্মাল, ১ম অংশ, ২/২৭৮, হাদীস ৮৪৯২)

 

১১| বান্দা অধৈর্য হয়ে নিজেকে হালাল রুজি থেকে বঞ্চিত করে দেয় এবং এরপরও নিজের ভাগ্য থেকে বেশি অর্জন করতে পারে না। (আল মুস্তারাফ, ১/১২৪)

 

১২| যেই “কষ্টের” পর “জান্নাত” অর্জিত হয়, তা “কষ্ট” নয় আর যেই “প্রশান্তির” পরিণাম “দোযখ” হয়, তা “প্রশান্তি” নয়। (আল মুস্তারাফ, ১/১৪০)

 

১৩| নিজের মতকে যথেষ্ট মনেকারী বিপদে রয়েছে।
(আল মুস্তারাফ, (১/১৩১)

 

১৪| যখন তুমি নিজের শত্রু থেকে প্রতিশোধ নেয়াতে সক্ষম হয়ে যাবে তখন এর কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাকে ক্ষমা করে দাও। (আল কাওকাবুদ দারিয়াতি, ১/১০২)

 

১৫| ঐসকল লোকেদের অন্তভুর্ক্ত হয়ো না, যাদের উপদেশ তখনই উপকৃত করে যখন অনেক বেশি লজ্জিত করা হয়। (আল মুস্তারাফ, ১/১৩৯)

 

১৬| লালসার চমক দেখে অধিকাংশেরই জ্ঞান মার খেয়ে যায়। (আল মুস্তারাফ, ১/১২৮)

 

১৭| যখন কোন ব্যক্তির জ্ঞান পরিপূর্ণ হয়ে যায়, তখন তার কথাবার্তা কমে যায়। (আল মুস্তারাফ, ১/১৪৬)

 

১৮| যে ব্যক্তি এই ধারণা রাখে যে, নেক আমল করা ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করবে, তবে সে মিথ্যা আশার শিকার। (আয়াহাল ওয়ালাদ, ১১ পৃষ্ঠা)

 

১৯| ব্যয় করো, লোক দেখানো করো না এবং নিজেকে এর জন্য উচ্চ করো না যে, তোমাকে চেনা যায় আর তোমার নাম হয় বরং পেছনে থাকো আর নিরবতা অবলম্বন করো, নিরাপদ থাকবে। (ইহইয়াউল উলুম, ৩/৩৩৯)

 

২০| মানুষের উচ্চতা ২২ বছর আর জ্ঞান ২৮ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, এরপর মৃত্যু পর্যন্ত অভিজ্ঞতা অব্যাহত থাকে।

 

(আল কাওয়াকাবুদ দারিয়াতি, ১/১০২)

২১| গুনাহের ভয়াবহতায় ইবাদতে অলসতা এবং রিযিকে স্বল্পতা আসে। (তাবকাতুস সুফিয়া, ১/১০৬)

 

২২| হে কোরআন শিক্ষা গ্রহণকারী! কোরআনের বিধানের উপর আমল করো, আলিম (জ্ঞানী) হলো সেই, যে ইলম অর্জন করার পর এর উপর আমল করে এবং তার ইলম ও আমল উভয়ই একই হয়ে যায়। (তারিখুল খোলাফা, ১৪৩ পৃষ্ঠা)

 

২৩| “আল্লাহর তৌফিক” অনন্য পথনির্দেশক, “সদাচরণ” অনন্য বন্ধু, “প্রজ্ঞা ও চেতনা” অনন্য সাথী, “আদব” অনন্য উত্তরাধীকার সম্পদ এবং “শোক” অহঙ্কারের চেয়েও বেশি নিকৃষ্ট। (তারিখুল খোলাফা, ১৪৪ পৃষ্ঠা)

 

২৪| বিপদ ও পেরেশানিও একটি পর্যায়ে গিয়ে শেষ হয়ে যায়। এর জন্য বুদ্ধিমানের উচিৎ যে, বিপদের অবস্থায় ধৈর্যধারণ করা, যাতে বিপদ তার স্থিতিকালের চলে যায়, অন্যথায় স্থিতিকাল শেষ হওয়ার পূর্বে বিপদকে দূর করার চেষ্টা বিপদকে আরো বাড়িয়ে দেয়। (তারিখুল খোলাফা, ১৪৪ পৃষ্ঠা)

 

২৫| যে ব্যক্তি জান্নাতের আশাবাদী হয়, সে নেকী করাতে তাড়াতাড়ি করে, যে ব্যক্তি জাহান্নামকে ভয় করে সে নিজেকে নাজায়িয চাহিদা থেকে বিরত রাখে আর যার  মৃত্যুর প্রতি বিশ্বাস হয়ে গেলো, সে দুনিয়ার স্বাদকে শেষ করে দিলো। (মুকাশাফাতুল কুলুব, ৩১ পৃষ্ঠা)

 

২৬| চোখ হলো শয়তানের ফাঁদ, দ্রুত প্রভাব গ্রহণকারী অঙ্গ আর খুবই দ্রুত হেরে যায়, যে ব্যক্তি নিজের শরীরের অঙ্গকে আল্লাহ পাকের ইবাদতে ব্যবহার করলো তার আশা পূরণ হলো এবং যে ব্যক্তি নিজের শরীরের অঙ্গকে চাহিদার পেছনে লাগিয়ে দিলো, তার আমল বাতিল হয়ে গেলো। (মুকাশাফাতুল কুলুব, ৯২ পৃষ্ঠা)

 

২৭| ৮টি বিষয় মনে রাখবে: (১) সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো “প্রজ্ঞা” (২) সবচেয়ে বড় দারিদ্র্য হলো “বোকামি” (৩) সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হলো “অহঙ্কার” (৪) সবচেয়ে বড় মাহাত্ম ও করুণা হলো “প্রফুল্লতা ও উত্তম আচরণ”। চারটি বিষয় থেকে সর্বদা বিরত থাকবে: (১) বোকার বন্ধুত্ব থেকে, যদিও সে লাভবান করে কিন্তু অবশেষে তার থেকে কষ্টই পাবে। (২) মিথ্যুক সাথী থেকে, কেননা সে নিকটকে দূরে আর দূরকে নিকটে করে দেয়। (৩) কৃপণের সঙ্গ থেকে, এই জন্য যে, সে তোমার থেকে ঐ বিষয়গুলো ছাড়িয়ে দেয়, যা তোমার প্রবল প্রয়োজন হয় আর (৪) ফাজিরের (অর্থাৎ গুনাহগার) বন্ধুত্ব থেকে, এই জন্য যে, সে তোমাকে সামান্য কিছুর পরিবর্তে বিক্রি করে দিবে। (তারিখুল খোলাফা, ১৪৫ পৃষ্ঠা)

 

২৮| অত্যধিক সতর্কতা মূলত “কুধারণা”।

 

(তারিখুল খোলাফা, ১৪৬ পৃষ্ঠা)

২৯| নিজের মুখকে নিয়ন্ত্রণে রাখো, কেননা মানুষের ধ্বংস অধিক কথাবার্তা করার মধ্যেই রয়েছে। (বাহরুদ দুমু, ১৭৫ পৃষ্ঠা)

 

৩০| যে ব্যক্তি নামাযে দাঁড়িয়ে কোরআনে করীম তিলাওয়াত করে, তার জন্য প্রতিটি হরফের পরিবর্তে ১০০টি নেকী রয়েছে এবং যে ব্যক্তি বসে তিলাওয়াত করে তার জন্য প্রতিটি হরফের পরিবর্তে ৫০টি নেকী রয়েছে আর যে ব্যক্তি নামায ব্যতীত অযু সহকারে তিলাওয়াত করবে তার জন্য ২৫টি নেকী রয়েছে আর যে ব্যক্তি অযু বিহীন কোরআন তিলাওয়াত করবে তার জন্য ১০টি নেকী রয়েছে এবং রাতের কিয়াম (অর্থাৎ ইবাদত) উত্তম, কেননা তখন অন্তর বেশি অবসর হয়ে থাকে। (ইহইয়াউল উলুম, ১/৩৬৬)

 

৩১| আশ্চার্য লাগে ঐ ব্যক্তির জন্য, যে মুক্তির উপলক্ষ্য রাখার পরও ধ্বংস হয়ে যায়। জিজ্ঞাসা করা হলো: মুক্তির উপলক্ষ্য কি? বললেন: ইস্তিগফার। (ইহইয়াউল উলুম, ১/৪১৪)

 

৩২| যখন বান্দা মারা যায় তখন জমিনে তার নামাযের স্থান এবং আসমানে তার আমলের ঠিকানা তার জন্য কান্না করে থাকে। (আয যুহুদে লিইবনিল মুবারক, ১১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস ৩৩৬)