জীবনী

মুফতি সাইয়্যেদ মুহাম্মদ আমীমুল ইহসান বারকাতী(রহ); এক অবিস্মরণীয় ক্ষণজন্মা মনীষী

আবছার তৈয়বী

মুফতি সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান বারকাতী (রহ.) ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সর্বপ্রথম খতীব (১৯৬৪-১৯৭৪) ও বিশিষ্ট ইসলামী ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন একাধারে মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফকীহ ও মুফতী এবং বহু উচ্চ মানসম্পন্ন ইসলামী গ্রন্থাবলীর রচয়িতা ও সংকলক।

জম্ম ও নাম:

মুফতি আমীমুল ইহসান ১৯১১ সালের ২৪ জানুয়ারি (হিজরী: ২২ মুহাররম ১৩২৯) বিহার প্রদেশের মুঙ্গের জেলার অন্তর্গত পাঁচনা নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হাকিম আবদুল মান্নান এবং মা সৈয়দা সাজেদা। তিনি চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন। পিতা ও মাতা উভয় সূত্রেই তিনি নাজিবুত্তারাফাইন সৈয়দ ছিলেন। জন্মের পর মুফতী সাহেবের নাম রাখা হয় ‘মুহাম্মদ’ এবং লকব ‘আমীমুল ইহসান’। তার দাদা সাইয়্যেদ নূরুল হাফেয আল-কাদেরিও একজন কামেল সাধক ছিলেন।

জ্ঞানার্জন:

মুফতি সাইয়্যেদ আমীমুল ইহসান (রহ.) তাঁর পিতা ও চাচার নিকট থেকে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি মাত্র তিন মাস সময়ের মধ্যে তাঁর চাচা সাইয়্যেদ আব্দুদ দাইয়্যানের নিকট হতে পূর্ণ ত্রিশ পারা কুরআন খতম করেন; এ সময় তার বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর।

সাইয়্যেদ আবদুদ দাইয়ান তাহাকে ফার্সি ভাষায় বিশেষ জ্ঞান দান করেন। পাঞ্জাবের সাধক সাইয়্যেদ আল্লাহ ইয়ার শাহ্ কাদেরির বংশধর সাইয়্যেদ আবু মুহাম্মাদ বারকত আলী শাহ্ কলকাতায় বসবাস করতেন; তার পিতা তাকে সেখানে নিয়ে যান। শাহ সাহেব নিজ ভক্ত মুরীদদের সাথে আসা শিশু আমীমুল ইহসান কে দেখে মুগ্ধ হন। মাত্র দু বছরের ব্যবধানে মুফতী সাহেব হযরত বারকাত আলী শাহ (রহ.)-এর নিকট থেকে আরবী ব্যাকরণের (মীজান মুন্শায়ের) প্রাথমিক জ্ঞান রপ্ত করেন এবং পাশাপাশি উচ্চতর ফার্সী সাহিত্য ও তাজবীদের প্রাথমিক জ্ঞান গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে মুফতী সাহেব (রহ.) হযরত শাহ বারকাত আলী শাহ (রহ.)-এর মুরীদ হন। তাই মুফতী সাহেব নিজের নামের শেষে ‘বারকাতী’ কথাটি যুক্ত করেন।মাত্র দশ বৎসর বয়সে তিনি তার ভাবী শ্বশুর উক্ত ওলীআল্লাহ হযরত সাইয়্যেদ বারকাত আলী শাহ নিকট কুরআন মাজীদের অনুবাদ, সূফী মতবাদ সম্পর্কিত পুস্তক-পুস্তিকা, ইলমে সরফ, তফসীর, হেসনে হাসিন ও ফার্সি সাহিত্যের উচ্চতর গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করেন। ১৯২৬ সালে পনের বছর বয়সে মুফতী সাহেব কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তিনি ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে আলিম পরীক্ষায় কৃতিত্বের সহিত উত্তীর্ণ হন। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে ফাযিল ও ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে কামিল (হাদীস) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক লাভ করেন এবং “মুমতাজুল মুহাদ্দিসীন” উপাধি প্রাপ্ত হন তিনি আলিম পরীক্ষায়ও হাদীস বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। ১৯৩৪ সালে তিনি তার শ্রদ্ধেয় ওস্তাদ মাওলানা মুফতী মুশতাক আহমেদ কানপুরী (রহ.) সাহেব এর নিকট থেকে ‘মুফতী’ সনদ লাভ করেন। তখন থেকে তিনি ‘মুফতী’ খেতাবে আখ্যায়িত হন।

কর্মজীবন:

সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আমীমুল ইহসান ১৯২৫ সালে তার পিতার মৃত্যুর ২ বছর পূর্বে পারিবারিক চিকিৎসালয় ও প্রেস পরিচালনা, জালুয়াটুলীস্থ মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন। ১৯৩৪ সালে তাকে কলকাতার “নাখোদা মসজিদ”-এর সহকারী ইমাম ও মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয় ও ১৯৩৫ সালে ‘নাখোদা মসজিদ’-এর মাদ্রাসা দারুল ইফতার প্রধান মুফতীর দায়িত্ব দেয়া হয়; যা ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি পালন করেন। ১৯৩৫ সালে কলকাতা মিউনিসিপ্যাল থেকে তাকে একটি বিশেষ সীলমোহর প্রদান করে যাতে লেখা ছিল ‘গ্রান্ড মুফতী অফ কলকাতা’ (Grand Mufti of Calcutta); তখন থেকে তিনি ‘মুফতী-এ-আযম’ উপাধি লাভ করেন। ১৯৩৭ সালে বৃটিশ সরকার হযরত মুফতী সাহেবকে মধ্য কলকাতার কাজী পদে নিয়োগ করেন। এই সময় তিনি একাধারে নাখোদা মসজিদের ইমামত, মসজিদ সংলগ্ন মাদ্রাসায় অধ্যাপনার দায়িত্ব এবং কাজী পদের দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করিতে থাকেন। ১৯৪৩ সালে মাদ্রাসায়ে আলিয়ায় অধ্যাপনার কাজে যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত তিনি এইসব কাজ যথারীতি পালন করেন। ১৯৪০ সালে তিনি আঞ্জুমানে কুররায়ে বাংলার (বাংলার ক্বারী সমিতি) সভাপতি নিযুক্ত হন। ১৯৪৩ সালে মুফতী সাহেব কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষকতার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৪৩ সাল থেকে ভারত বিভাগ (১৯৪৭) পর্যন্ত তিনি টাইটেল কামিল ক্লাসে হাদীস, তাফসীর, ফিকাহ এবং ফাযিল শ্রেণীতে উর্দু-ফার্সী শিক্ষা দিতেন। ১৯৪৭ সালে আলিয়া মাদ্রাসা ঢাকায় স্থানান্তরিত হলে তিনি এই দেশে হিজরত করে আসেন। তখন তিনি নতুনভাবে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যাপনার কাজে জড়িত হন। ১৯৪৯ সালে তৎকালীন সরকার তাকে ধর্মীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত করেন। ১৯৫৫ সালে আলিয়া মাদ্রাসার হেড মাওলানা, মাওলানা জাফর আহমদ উসমানী অবসর গ্রহণের পর মুফতী সাহেব অস্থায়ীভাবে সেই পদে নিয়োগ পান। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত মুফতী সাহেব স্থায়ীভাবে সেই পদে নিযুক্ত ছিলেন। আলিয়া মাদ্রাসায় কর্মরত অধ্যাপক হিসাবে মুফতী সাহেব ব্যাখ্যাসহ বুখারী শরীফ পড়াইতেন। তার নিজের উক্তি হইতে জানা যায়, তিনি কমপক্ষে পঁচিশবার বুখারী শরীফ প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত পড়িয়েছেন। হাজার হাজার হাদীস তার কণ্ঠস্থ ছিল। হাদীসের ওস্তাদ হিসাবে তার পাণ্ডিত্য-প্রতিভা অল্প সময়ের মধ্যেই আলেম সমাজে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে দ্বীনী কিতাব প্রণয়ন এবং ধর্মীয় কাজে সময় দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায় ১৯৬৯ সালের ১ই অক্টোবর উক্ত পদ হতে অবসর গ্রহণ করেন।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান বারকাতী আগস্ট মাসের ২২ তারিখে কলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন। ১৯৪৭-৪৮ এর কোন এক সময় জনৈক এক ব্যক্তি সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ নোমান বারকাতী (রহ.)-কে বর্তমান মসজিদে মুফতী-এ আযম-এর বর্ণনা দিয়ে বলল, সেখানে একটি মসজিদের মতো ইমারত আছে। আপনি যদি আপনার ভাইয়ের সাথে সেই মসজিদটির ব্যাপারে চিন্তা করেন তবে খুব ভাল হয়। প্রথমে হযরত নোমান বারকাতী (রহ.) নিজে উক্ত ব্যক্তির সাথে এসে এই জায়গা পরিদর্শন করেন। যখন তিনি দেখে বুঝতে পারেন এটি একটি মসজিদ ছিল তখন হযরত নোমান বারকাতী সাহেব বিষয়টি তার শ্রদ্ধেয় বড় ভাইকে জানান। এরপর একদিনে উভয় ভাই মিলে মসজিদ দেখতে আসেন। উভয় ভাই মিলে যখন মসজিদ দেখতে আসেন তখন আল্লাহর ঘরের এই ভগ্নদশা দেখে ব্যথিত হন এবং উদ্যোগ নেন নবরূপে এটিকে মসজিদ হিসেবে গড়ে তোলার। তারা এখানে এসে মসজিদকে পরিষ্কার করেন ও নামাযের উপযোগী করে তোলেন। তখন অনেক দিন পর এই মসজিদে আযান দেন হযরত সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ নোমান বারকাতী (রহ.)। আর ইমামতি করেন মুফতী আমীমুল ইহসান বারকাতী (রহ.)। তাদের সেই الله اكبر ধ্বনির তাকবীর এত বছর আর এই মসজিদে বুলন্দ করণের আজ অবধি সেই الله اكبر এর তাকবীর জারি আছে। বলাবাহুল্য এই দুই ভাইয়ের অসীম দৃঢ়তা ও প্রাণান্তর চেষ্টার ফলেই আস্তাকুঁড়ের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠে এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদে মুফতী-এ আযম। মুফতী সাহেব হুজুর এই মসজিদের নাম দিয়েছিলেন নকশবন্দী মসজিদ। হয়। তবে ১৯৯৪ সালে মসজিদকে যখন সম্পূর্ণ নতুন ভিত্তি দিয়ে গড়া হয় সেই সময় থেকে মহল্লাবাসীর উদ্যোগে এই মসজিদের নাম রাখা হয় মসজিদে মুফতী-এ আযম। উল্লেখ্য মুফতী সাহেবে হুজুর এই মসজিদের খেদমতের জন্য মসজিদ সংলগ্ন একটি বাড়ী ক্রয় করেন এবং আমৃত্যু সেখানেই বসবাস করেন। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে (বর্তমান পাকিস্তানে) কাবা শরীফের গেলাফ প্রস্তুত করা হয়। তখন সেই গেলাফটি ঢাকায় আনা হয় প্রদর্শনীর জন্য। ঢাকায় কাবা শরীফের গেলাফ প্রদর্শনীর সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন মুফতী সাহেবের সর্বকনিষ্ঠ ভ্রাতা সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ গোফরান বারকাতী (রহ.)। মুফতী সাহেবের একটি অনন্য অর্জন রয়েছে যে তিনি দুই বাংলার ঈদগাহতে ইমামতির দায়িত্ব পালন করেছেন। কলকাতা থাকার সময় ১৯৪৭ সালে তিনি কলিকাতার ঈদগাহে ইমামতির দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৫৫ সালে আলিয়া মাদ্রাসায় হেড মাওলানার পদে উন্নীত হবার পর তৎকালীন ঢাকার প্রধান ঈদগাহ পুরানা পল্টন ময়দানে ঈদের জামাতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং কয়েক বছর পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৪ সালে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররম প্রতিষ্ঠার পর তৎকালীন কমিটির চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া বাওয়ানীর অনুরোধে এবং মসজিদ কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে তিনি সেই মসজিদের খতীব এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ও মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তাতে বহাল থাকেন। তিনি প্রতি শুক্রবার সেখানে জুমার নামাজ পড়াতেন এবং আরবীতে স্বরচিত খুৎবা পড়তেন; যার বঙ্গানুবাদ পূর্বেই শ্রোতাদেরকে শোনানো হত। অনেক আরবী ভাষা-ভাষী উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ, মুসলিম দেশের কূটনীতিকবৃন্দ ও রাষ্ট্রনায়ক তার খুৎবার প্রশংসা করেছেন।

ত্বরিকতের মহান সাধক:

মুফতী-এ আযম সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান বারকাতী (রহ.) যেমন একজন হাক্কানী আলেমে দীন ছিলেন, তেমনি ইলমে তাসাউফ এর প্রাণপুরুষ ছিলেন। নিজ প্রাথমিক জীবনে তিনি তার চাচা হযরত মাওলানা সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আব্দুদ দাইয়্যান বারাকাতী এবং শ্বশুর সাইয়্যেদ আবু মুহাম্মাদ বারকত আলী শাহ এর কাছ থেকে বিভিন্ন তরীকতের ইজাজাত গ্রহণ করেন। ঢাকায় আগমনের পর তার সুহৃদ হযরত শাহ সাইয়েদ আবদুস সালাম আহমদ (রহ.) তাকে বায়আত প্রার্থীদের মুরিদ করিতে অণুরোধ করেন। এর ফলে তিনি নকশবন্দিয়া মুজাদ্দেদীয়া বারকাতীয়া তরীকা প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। হযরত মুফতী সাহেব নকশবন্দিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরীকার মহান সাধকগণের উসিলা দিবার সময় নামের আদ্যাক্ষর বিশিষ্ট ফার্সী কবিতাটি (শাজরা শরীফ) মনমাতানো আবেগাপ্লুত কন্ঠে পাঠ করতেন।

তাঁর রচনাবলী:

সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান বারকাতী ২০০ এর অধিক গ্রন্থ রচনা করেন। উল্লেখযোগ্যগুলো হলো:

ক. ইলমে তাফসীর ওয়া উসূলুত তাফসী

১. ইতহাফুল আশরাফ বি হাশিয়াতিল কাশশাফ,
২. আল ইহসানুস সারী বিত তাওযিহ ই তাফসিরই সহীহিল বুখারী
৩. আত তানবীর ফি উসূলিত তাফসির;
৪. আত- তাবশীর ফি শরহিত তানবীর ফি উসূলিত তাফসির।

খ. ইলমে হাদীস এবং উসূলে হাদীস

১. আল ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার
২. মীযানুল আখবার
৩. মানাহিজুস সুআদা;
৪. উমদাতুল মাযানী বি তাখরিজে আহাদীস মাকাতিবুল ইমামুর রাব্বানী;
৫. আল আরবাঈন ফিস্ সালাত;
৬. আল-আরবাঈন ফিল মাওয়াকিত
৭. আল আরবাঈন ফিস্ সালাতি আলান নবী (দরুদ),
৮. জামে জাওয়ামেউল কালাম ফি শারহে কানযুল উম্মাল
৯. মুকাদ্দামায়ে সুনানে আবু দাউদ
১০. মুকাদ্দামায়ে মারাসিলে আবু দাউদ,
১১. আললাইল ওয়ান নাহার
১২. মিয়ারুল আসার
১৩. হাশিয়ায়ুস সাদী
১৪. তোহফাতুল আখিয়ার
১৫. তালিকাতুল বারকতী
১৬. তালখীসুল মারাসিল
১৭. আসমাউল মুদিল্লীন ওয়াল মুখতালিতীন,
১৮. কিতাবুল ওয়ায়েযীন
১৯. মিন্নাতুল বারী

গ. ইলমে ফিকাহ ও উসূলে ফিকাহ

১. ফাতাওয়ায়ে বারকাতীয়া
২. তরীকায়ে হজ্জ,
৩. আল কুরবাহ ফিল কুরা,
৪. হাদিয়াতুল মুসাল্লীন
৫. আততানবীহ লিল ফকীহ
৬. লুববুল উসূল
৭. মালাবুদ্দা লিল ফকীহ
৮.আততারীফাতুল ফিকহিয়্যাহ
৯. উসূলুল কারখী
১০. উসূলুল মাসায়েলীল খিলাফিয়্যাহ
১১. কাওয়ায়েদুল ফিকহ
১২. আদাবুল মুফতী,
১৩. তুহফাতুল বারকাতী বিশরহে
আদাবুল মুফতী

ঘ.সীরাতগ্রন্থ

১. আওজায়ুস সিয়ার
২. আনফাউস সিয়ার
৩. সীরাতে হাবিবে ইলাহ
৪. রেসালা-হায়াতে আবদুস সালাম

ঙ. ইলমে তাসাউফ

১. রেসালায়ে তরীকাত
২. আততাশাররুফ লি আদাবিত তাসাওউফ

চ.তারিখ (ইতিহাসগ্রন্থ)

১. তারিখে ইসলাম
২.তারিখে আম্বিয়া
৩. তারিখে ইলমে হাদীস
৪. তারীখে ইলমে ফিকাহ
৫. আল হাভী ফি যিকরিত তাহাভী
৬. তারিফুল ফুনুন ওয়া হালাতে মুসান্নেফিন
৭. নাফয়ে আমীম

ছ. ইলমে নাহু ও সরফ (ব্যাকরণ)

১. মুকাদ্দমাতুন নাহু
২. নাহু ফারসী

জ. ওয়াজ ও মিলাদ

১. মজুমায়ে খুতবাত
২. মজুমায়ে ওয়াজ
৩. ওয়াজিফায়ে সাদিয়া বারকাতীয়া
৪. শাজারা শরীফা
৫. সিরাজাম মুনীরা ও মিলাদ নামা
ঝ. উর্দু সাহিত্য
১. আদবে উর্দু,
২. শরহে শিকওয়াহ ওয়া জওয়াবে শিকওয়াহ

বিবিধ বিষয়

১. মুযীলুল গাফলাহ আন সিমতিল কিবলাহ
২. মুয়াল্লেমুল মীকাত
নিযামুল আওকাত
৩. ধোপঘড়ি
৪. ওয়াসিয়াতনামা

হযরত মুফতী সাহেবের অনেক গ্রন্থ মাদ্রাসার পাঠ্য তালিকাভুক্ত। তার প্রধান কিতাবসমূহ যেমন ফিকহুস সুনানে ওয়াল আসার, সীরাতে হাবিবে ইলাহ, তারীখে ইলমে ফিকাহ, তারীখে ইসলাম, তারীখে ইলমে হাদীস, আদাবুল মুফতী, কাওয়ায়েদুল ফিকাহ, মীযানুল আখবার, মিয়ারুল আসার প্রভৃতি মিসরের জামেয়া আল আজহার, ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দসহ, পাকিস্তান সিরিয়া, মিসর ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের সকল কওমী, আলিয়া মাদ্রাসা গুলোতে পাঠ্য বই হিসাবে পড়ানো হয়।

এছাড়াও তার রচিত “কিতাবুল আওকাত” এর উপর ভিত্তি করেই ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ তার রচিত নামাযের সময়সূচি অনুযায়ী বর্তমানে সারা বাংলাদেশে নামাযের সময় ও ওয়াক্ত নির্ধারণ করা হয়। হযরত মুফতী সাহেব একজন বই প্রেমিক মানুষ ছিলেন। কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও যিকির এর মাঝেই নিয়মিত কিছু সময়ই দ্বীনি কিতাব অধ্যয়ন করতেন। তার ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারে ছিল সাড়ে তিন হাজারের অধিক বিভিন্ন ইসলামী কিতাব, এরমধ্যে কিছু প্রাচীন ও দুর্লভ কিতাব তিনি সংগ্রহ করেছিলেন তার পীর ও মুর্শীদ এবং শ্বশুর সাইয়্যেদ আবু মুহাম্মাদ বারকত আলী শাহ (রহ.) এর নিকট থেকে। হযরত মুফতী সাহেবের ছাত্ররা এইজন্য গর্ব করে বলত আলিয়া মাদ্রাসার লাইব্রেরির চেয়ে অধিক বই মুফতী সাহেবের কাছে আছে।

যেয়ারতে হারাম:

হযরত আল্লামা মুফতী সাহেব (রহঃ) জীবনে তিনবার বায়তুল্লাহর হজ্জে মবরূর পালন করেন। সর্বপ্রথম এবং ফরয হজ্জ আদায় করেন ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে, ১৯৬৮ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সস্ত্রীক এবং ১৯৭১ সালে তৃতীয় হজ্জ পালন করেন।

ইন্তেকাল:

সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান বারকতী (রহ.) ১৯৭৪ সালের ২৭ অক্টোবর (হিজরী: ১০ শাওয়াল ১৩৯৫) ইন্তেকাল করেন।

মরণোত্তর সম্মাননা:

মুফতি সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান বারকতীর ইসলামের সেবায় ও দাওয়াতি কার্যক্রমে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালে তাকে মরণোত্তর স্বর্ণপদক ও সনদ দান করেন।

[এই  মহান বুযুর্গের ফয়ুজাত কামনা করি। আমীন]